তিনি এখনও জেলবন্দি। এই অবস্থায় সেই অনুব্রত মণ্ডলের জেলায় সফরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বোলপুরে সেই আয়োজনের পোস্টার, ফ্লেক্স থেকে উধাও বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ছবি। তা নিয়েই জোর চর্চা চলছে জেলায়।
বীরভূমের যে কোনও উৎসব-অনুষ্ঠানের প্রচারে অনুব্রতর ছবি থাকা কার্যত নিয়ম ছিল বলেই জানাচ্ছেন জেলার বাসিন্দারা। এ বার তার ব্যতিক্রম হওয়ায় জোর জল্পনা তৈরি হয়েছে জেলায়। এর আগে মমতা বীরভূম সফরে যত বার এসেছেন, প্রত্যেক বারই পাশে পেয়েছিলেন দলের জেলা সভাপতি তথা তাঁর স্নেহের ‘কেষ্ট’কে। কখনও জনসভা, কখনও প্রশাসনিক বৈঠক থেকে বারেবারেই অনুব্রতর পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে দলনেত্রীকে। এমনকি বহু বার জেলা সফরে এসেও অনুব্রতর পাশে দাঁড়িয়ে বিরোধীদের আক্রমণ শানাতে দেখা গিয়েছে দলনেত্রীকে। এর আগে মমতা বীরভূম সফরে এসেছিলেন গত বছর মার্চ মাসে বগটুইয়ের ঘটনার পরে পরেই। তখনও দলের জেলা সভাপতি তথা তাঁর স্নেহের কেষ্টকে পাশে পেয়েছিলেন দলনেত্রী। কিন্তু গরু পাচার মামলায় সেই অনুব্রত এখন জেলবন্দি। এই অবস্থায় তার থাকা ও না থাকার তফাত যথেষ্টই নজরে পড়ছে।
আজ, সোমবারই দু’দিনের সফরে বীরভূমে পৌঁছনোর কথা মুখ্যমন্ত্রীর। সন্ধ্যায় দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে তাঁর। ৩১ জানুয়ারি বোলপুর থেকে মালদহ সফরে যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে সভা করে সেই দিনই আবার জেলায় ফিরে আসার কথা রয়েছে তাঁর। ১ ফেব্রুয়ারি সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে বোলপুর ডাকবাংলো মাঠে যোগ দিয়ে সেখানে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে বক্তৃতা করার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। সেই সভা ঘিরে এখন সাজ সাজ রব বোলপুর শহরে।
মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরকে স্বাগত জানিয়ে বীরভূম জেলা তৃণমূলের তরফে বড় বড় ফেক্স দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় তোরণ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর মতো নেতাদের ছবি দেওয়া হলেও কোথাও তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ছবি দেওয়া হয়নি। আর এই সমস্ত তোরণ, ফ্লেক্স ঘিরেই শুরু হয়েছে নয়া জল্পনা। কারণ মুখ্যমন্ত্রী অনুব্রত ছাড়া পেলে ‘বীরের সম্মান’ দেওয়ার কথা বলেছেন। জেলায় এসে অনুব্রতকে বাঘের সঙ্গে তুলনা করেছেন রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। যে কোনও অনুষ্ঠান, এমনকি বিকল্প পৌষমেলার মতো অরাজনৈতিক আয়োজনেও অনুব্রতর ছবি দিয়ে তোরণ চোখে পড়েছে। তা নিয়ে বিতর্কও বেধেছে। সেখানে অনুব্রতহীন জেলায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম সফরে তাঁর ছবি না থাকা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। জল্পনা চলছে জোরদার।
দলের একাংশের অবশ্য দাবি, তাঁর ‘প্রভাবশালী’ তকমা সরাতেই এমন কৌশল নেওয়া হয়েছে। তবে বিরোধীরা বলছেন, দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে অনুব্রত মণ্ডলকে ছেঁটে ফেলার এটি নয়া কৌশল। যদি এ বিষয়ে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “জেলা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে অনুব্রতর ছবি লাগানো হবে না, তাই তাঁর ছবি লাগানো হয়নি। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারব না।”
বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘ওঁকে বীরের আখ্যা থেকে শুরু করে নানা রকম আখ্যা দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত কোনও কিছুতেই কিছু না হওয়ায়, আজ দল থেকে ছেঁটে ফেলতেই ফ্লেক্স থেকে তাঁর ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এ কাজ অনেক আগেই করা উচিত ছিল তৃণমূলের।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা এই বিষয়ে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তবে এটুকু বলতে পারি তৃণমূলে যার প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে তাকে দল থেকে এ ভাবেই ছেঁটে ফেলা হয়।’’