আন্তর্জাতিক নারী দিবস ছিল শনিবার। চলতি বছর নারী দিবসের থিম ছিল কন্যা থেকে নারী, সকলের অধিকার, সমতা এবং ক্ষমতায়ন। বীরভূম জেলায় এই মুহূর্তে মেয়েদের যে অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে, সেই তালিকায় উপরেই রয়েছে বাল্যবিবাহ। এবং বাল্যবিবাহের সঙ্গে জুড়ে থাকা কিশোরী মাতৃত্ব।
বাল্যবিবাহ এবং নাবালিকা প্রসূতির হারে বীরভূমের দুই স্বাস্থ্যজেলা (বীরভূম ও রামপুরহাট) রাজ্যের শীর্ষে। সরকারি প্রকল্প, বাল্যবিবাহের কুফল নিয়ে প্রশাসনের তরফে প্রচার ও লাগাতার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও জেলায় যে বাল্যবিবাহে রাশ টানা যাচ্ছে না, তা সরকারি পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট। ততটাই উদ্বেগজনক কিশোরী মাতৃত্বের পরিসংখ্যানও।
গত বছর এপ্রিল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, যে সংখ্যক বাল্যবিবাহ আটকানো গিয়েছে এবং কিশোরী গর্ভাবস্থা নথিভুক্ত হয়েছে বিভিন্ন ব্লকে, তার তুলনামূলক ফারাক প্রশাসনকে স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। যেমন খয়রাশোল ব্লকে এই সময়কালে দু’টি নাবালিকার বিয়ে আটকানো গিয়েছে। কিন্তু, ওই একই সময়ে কিশোরী গর্ভাবস্থা নথিবদ্ধ হয়েছে ৪৮২টি। মুরারই ২ ব্লকেও দুই নাবালিকার বিয়ে আটকেছে। অথচ কিশোরী গর্ভাবস্থার সংখ্যা ১১১৫।
জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, বীরভূম ও রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলায় এই সময়ে নাবালিকা বিয়ে আটকানো গিয়েছে মাত্র ২২৭টি। সেখানে কিশোরী গর্ভাবস্থা নথিবদ্ধ হয়েছে, ১০ হাজার ৭০৩। দুই স্বাস্থ্য জেলা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সময়কালে অন্তঃসত্ত্বা হিসাবে নথিবদ্ধ হয়েছেন মোট ৪৬ হাজার ৩৭৩ জন। কিশোরী গর্ভাবস্থা, মোট সংখ্যার ২৩.০৮শতাংশ। কম বয়সে বিয়ে বন্ধ না হওয়ায় অনিবার্য ভাবে অকাল মাতৃত্বের হার বাড়ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা।
চিকিৎসকদের মতে, অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় মা হলে যেমন শৈশব নষ্ট হয়, মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়ে, তেমনই মাতৃত্বে ঝুঁকিও বহুগুণ বেড়ে যায়। জেলা শিশু সুরক্ষা দফতর, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, প্রশাসন ও পুলিশের অভিজ্ঞতা বলছে, এখনও অভিভাবকদের অজ্ঞতা, পারিবারিক দারিদ্র কম বয়সে বিয়ের জন্য দায়ী। শিশু সুরক্ষা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘স্কুল পড়ুয়া নাবালিকাদের অনেকে নিজেরাই পালিয়ে বিয়ে করে নিচ্ছে। হাতে হাতে স্মার্ট ফোন। স্বল্প পরিচয়ে প্রেম করে অনেকে ঘর ছাড়ছে। এমন সময় ফিরছে, যখন সেই নাবালিকা গর্ভধারণ করে নিয়েছে।’’
শিশুকন্যাদের উপরে অত্যাচার এবং অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও চিন্তাজনক।এপ্রিল থেকে জানুয়ারির মধ্যে যৌন নির্যাতনের ৫৩টি ঘটনায় পকসো মামলা হয়েছে। ২১২ কন্যাশিশু অপহরণের ঘটনা ঘটেছিল। উদ্ধার হয়েছে ১৭১ জন। নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল ৯৮ কন্যাশিশু। উদ্ধার ৮২। দুই শিশুকন্যার পাচারের রিপোর্টও হয়েছে প্রশাসনের কাছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)