সিভিক ভলান্টিয়ার সুজিত রক্ষিত। নিজস্ব চিত্র
বালির বেআইনি কারবার প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মেদিনীপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে বলেছেন, ‘‘পুলিশ যদি শক্ত হয় আর ভূমি দফতরের অফিসাররা যদি নজর রাখে তাহলে এটা হয় না।’’ তার চব্বিশ ঘণ্টা গড়ানোর আগেই, বুধবার সকালে পুরুলিয়ায় কংসাবতীর ঘাটের কাছে বেধড়ক মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন এক সিভিক ভলান্টিয়ার। পুরুলিয়া মফস্সল থানার পুলিশের দাবি, কোটলইয়ে পানীয় জলের ঘাট লাগোয়া কংসাবতী থেকে বালি তোলায় বাধা দিয়েছিলেন সুজিত রক্ষিত নামে ওই যুবক। সেই আক্রোশেই বালির কারবারিরা তাঁর উপরে চড়াও হয়। ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত গজধর পরামানিককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান জেলার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া।
রুক্ষ পুরুলিয়ার একটা বড় এলাকার পানীয় জলের একমাত্র উৎস কংসাবতী। নদীর বালির মধ্যে জমে থাকা (সাব-সার্ফেস) জল শোধন করে সরবরাহ করে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পানীয় জলের ঘাটের এক কিলোমিটারের মধ্যে বালি তোলা পুরোপুরি বেআইনি। সেই সমস্ত ঘাট ইজারাও দেওয়া হয় না।
প্রশাসনেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, ইচ্ছেমতো তুলে নিতে নিতে কংসাবতীর অনেক ঘাটেই ভাল বালি বিশেষ মেলে না। পানীয় জলের ঘাটের কাছে পুলিশের নজরদারি অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে। ফলে সেখানে এখনও ভাল বালি রয়েছে। জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মতো সেপ্টেম্বর জুড়ে খাতায়-কলমে বন্ধ ছিল সমস্ত নদীঘাট থেকে বালি তোলা। সেই ব্যাপারে ছাড় মিলেছে। এসে গিয়েছে নির্মাণকাজের ভরা মরসুম। অভিযোগ, এ বার ভাল বালির খোঁজে কারবারিরা মরিয়া হয়ে থাবা বসাচ্ছে পানীয় জলের ঘাটেও।
সম্প্রতি বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে গিয়ে অবৈধ বালি তোলার ব্যাপারে কড়া বার্তা দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সূত্রের দাবি, তার পরেই পানীয় জলের ঘাটগুলিতে নজরদারি কড়া হয়। এলাকা ধরে ধরে পালা করে সিভিক ভলান্টিয়াররা ভোর থেকে টানা পাহারা দিচ্ছিলেন।
কোটলই ঘাটের এক দিকে পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকা। অন্য দিক আড়শা। নদীতে এখন জল নেই। বুধবার সকাল তখন ৭টা। ওই ঘাটে নজরদারির দায়িত্বে ছিলেন দুই সিভিক ভলান্টিয়ার— কোটলই গ্রামেরই সুজিত রক্ষিত এবং পাশের গ্রাম চাকদার সুশান্ত মাহাতো। তাঁদের দাবি, হঠাৎ চোখে পড়ে একটি ট্রাক্টর বালি বোঝাই করে নদী থেকে আড়শার দিকে উঠছে। তাঁরা ছুটে যান। বাধা দেন। শুরু হয় বচসা। আশপাশে আরও কয়েকটি ট্রাক্টর বালি তুলছিল। সেখান থেকেও লোকজন জড়ো হয়ে যায়। সবাই মিলে লাঠি, বাঁশ ইত্যাদি নিয়ে চড়াও হয় দু’জনের উপরে।
সুশান্তর দাবি, তিনি কোনও রকমে পালিয়ে চিৎকার করে ছুটতে শুরু করেন। বুধবার ফোনে সুজিত বলেন, ‘‘আমাকে ধরে বেধড়ক মারতে থাকে ওরা। তার পরে ফেলে রেখে চলে যায়। কোনও মতে পকেট থেকে ফোন করে থানায় খবর দিই।’’ পুলিশ গিয়ে সুজিতকে উদ্ধার করে প্রথমে নিয়ে গিয়েছিল পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জামসেদপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুজিতের হাত ও পায়ে একাধিক চোট রয়েছে। গুরুতর চোট ডান পায়ের গোড়ালিতে।
ঘটনার পরেই তিন জনের নাম করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে পুলিশ। পরে প্রধান অভিযুক্ত, আড়শার সটরা গ্রামের গজধর পরামানিককে এলাকা থেকেই গ্রেফতার করা হয়। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া বলেন, ‘‘ঘটনায় জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। তাদের খোঁজ চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy