Advertisement
E-Paper

‘সত্যিই এক বিরাট যুদ্ধে জয় পেয়েছি’

এক বছরেই বদলে গেল ছবিটা। দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ কেটে মুখে হাসি ফুটল বাঁকুড়ার বিজয় চক্রবর্তী, পার্থসারথি মহাপাত্রদের মুখে।গত বছর কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশিকা থানার নোটিস বোর্ডে টাঙিয়েই চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল বিজয়, পার্থসারথিদের।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৩১
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

এক বছরেই বদলে গেল ছবিটা। দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ কেটে মুখে হাসি ফুটল বাঁকুড়ার বিজয় চক্রবর্তী, পার্থসারথি মহাপাত্রদের মুখে।

গত বছর কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশিকা থানার নোটিস বোর্ডে টাঙিয়েই চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল বিজয়, পার্থসারথিদের। তার পরেই ওই রায়ের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছিলেন বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের সারেঙ্গা ও বারিকুল থানার কয়েকশো সিভিক পুলিশকর্মী। মাঝে পার হয়ে গিয়েছে এগারো মাস। অবশেষে বুধবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে এবং বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চের রায় স্বস্তি ফিরিয়ে আনল কাজ হারানো ওই যুবক-যুবতীদের পরিবারে। ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের সব সিভিক পুলিশকর্মীর চাকরি বহাল রাখার পক্ষে রায় দিয়েছে।

এগারো মাসের লড়াইটা যে মোটেও সহজ ছিল না, সে কথাই বৃহস্পতিবার বারবার বলে যাচ্ছিলেন সারেঙ্গার সিভিক পুলিশকর্মী বিজয় চক্রবর্তী। তিনি জানান, গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে একের পর এক চাকরির পরীক্ষায় বসলেও চাকরি মেলেনি। চাকরি খোঁজার পাশাপাশি দোকানে দোকানে কেক, বিস্কুট বিক্রি করার পেশা ধরেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে সিভিক পুলিশের চাকরি পেয়ে পায়ের তলায় মাটি পেয়েছিলেন ওই যুবক। সব ঠিকঠাকই চলছিল। মাথায় বাজ পড়ল গত বছর। ২০১৬ সালের ২১ মে থানায় নোটিস টাঙিয়ে জানিয়ে দেওয়া হল, তাঁদের আর চাকরি নেই!

কেন?

২০১৩ সালে সিভিক পুলিশ নিয়োগের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বারিকুল ও সারেঙ্গা থানার কিছু যুবক হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই গত বছর মে মাসে হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ বারিকুল ও সারেঙ্গা থানার সিভিক পুলিশকর্মীদের বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানান কাজ হারানো বারিকুল ও সারেঙ্গা থানার কয়েক জন সিভিক পুলিশকর্মী। রাজ্য সরকারও প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলা দায়ের করে। বিজয়ের কথায়, “ফের বেকার হয়ে গিয়ে কত মানুষের কত রকম কটাক্ষ শুনতে হয়েছে আমাকে। ঘরে বাইরে যুদ্ধ করতে হয়েছে। তবে, আশা ছাড়িনি। রাজ্য সরকারও আমাদের পক্ষে আছে জানতাম। তাই সকলে মিলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হই।’’

হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ওই দুই থানার সিভিক পুলিশকর্মীদের চাকরি বহাল রেখেছে। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সারেঙ্গায় ১৬০ ও বারিকুলে ১২০ জন যুবক-যুবতী সিভিক পুলিশের চাকরি পেয়েছিলেন। বুধবার হাইকোর্টের রায় জেনে তাঁদের মধ্যে খুশির রোল পড়ে যায়। বারিকুল থানার সিভিক পুলিশকর্মী পার্থসারথি মহাপাত্র বলছিলেন, “দিনের পর দিন ছুটে যেতে হয়েছে হাইকোর্টে। সবাই মিলে চাঁদা দিয়ে মামলা লড়ার টাকা জোগাড় করেছি। সত্যিই এক বিরাট যুদ্ধে জয় পেয়েছি।’’ সিভিক পুলিশের চাকরি পেয়েই বিয়ে করেছিলেন বারিকুলের জহর কর্মকার। মাঝে চাকরি চলে যাওয়ার পরে সংসারে প্রবল অনটন দেখা দেয়। একটি দোকানে কাজ করে সামান্য টাকা মাইনে পাচ্ছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, “চাকরি ফিরে পেলাম। এর চেয়ে খুশির খবর আর কী হতে পারে!’’

বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা জানিয়েছেন, হাইকোর্টের নির্দেশ মতো ফের সারেঙ্গা ও বারিকুল থানার সিভিক পুলিশকর্মীদের কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাঁদের থানায় ডেকে পাঠানো হচ্ছে।

কেবল বারিকুল বা সারেঙ্গা থানার সিভিক পুলিশকর্মীরাই নন, হাইকোর্টের রায়ে চাকরি সুনিশ্চিত হয়েছে রাজ্যের সব সিভিক পুলিশেরই। ওন্দা থানার সিভিক পুলিশকর্মী অম্বিকা মুখোপাধ্যায়, অরূপ ঘোষ, অশেষ মুখোপাধ্যায়রা তাই বললেন, “একটা অনিশ্চয়তা নিয়েই কাজ করতাম আমরা। হাইকোর্টের রায়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি।’’

High Court Civic Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy