Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
রাধানগরে কংগ্রেসের মঞ্চে হামলা

তৃণমূল ও বিজেপির সংঘর্ষে তপ্ত মেজিয়া

গোলমালের সূত্রপাত হয়েছিল শুক্রবার দুপুরেই। যা বড় আকার নিল শনিবার সকালে। বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ বাধল মেজিয়ার ভাড়া গ্রামে। দু’পক্ষেরই বেশ কিছু কর্মী জখম হয়েছেন। বিশাল কমব্যাট ফোর্স নামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।

গোলমালের পরে মেজিয়ার ভাড়া গ্রাম।—নিজস্ব চিত্র।

গোলমালের পরে মেজিয়ার ভাড়া গ্রাম।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেজিয়া ও বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৫ ০২:০৫
Share: Save:

গোলমালের সূত্রপাত হয়েছিল শুক্রবার দুপুরেই। যা বড় আকার নিল শনিবার সকালে। বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ বাধল মেজিয়ার ভাড়া গ্রামে। দু’পক্ষেরই বেশ কিছু কর্মী জখম হয়েছেন। বিশাল কমব্যাট ফোর্স নামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এ দিন বিকেলে বিষ্ণুপুরের রাধানগর গ্রামে কংগ্রেসের একটি সভা মঞ্চ ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে।

শুক্রবার দুপুরে খাদ্য সুরক্ষা আইনের ফর্ম তুলতে মেজিয়া ব্লক অফিসে গিয়েছিলেন মেজিয়া ব্লকের তৃণমূল সভাপতি চিত্তরঞ্জন রায়। অভিযোগ, ফর্ম তুলে ফেরার পথে কিছু তৃণমূল কর্মী তাঁকে আটকে ব্লক অফিসের চত্বরেই মারধর করে। ঘটনার সময় ব্লক অফিসে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের মেজিয়া ব্লকের সভাপতি তথা অর্ধগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মলয় মুখোপাধ্যায়। মলয়বাবুর প্ররোচনাতেই এই মারধর হয়েছে বলে রাতে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন চিত্তরঞ্জনবাবু। যদিও মলয়বাবু অভিযোগ অস্বীকার করেন।

তবে এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে রাত থেকেই ভাড়া গ্রামে উত্তেজনা ছিল। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে গ্রামেই এক তৃণমূল কর্মী বিপত্তারণ আচার্যকে বিজেপি কর্মীরা বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ। তাঁর মোটরবাইকও ভাঙচুর করা হয়। বিপত্তারণবাবুকে মারধর করার পরে তৃণমূল কর্মীরা বিজেপি কর্মীদের পাল্টা মারধর শুরু করে বলে অভিযোগ। দু’পক্ষের মধ্যে ইঁট ছোড়াছুড়ি হয়। ঘটনায় দু’পক্ষের ছ’জন জখম হন। এরপরেই জেলা পুলিশের ডিএসপি আনন্দ সরকার, সিআই ভবেন মল্লিক, মেজিয়া থানার ওসি দেবাশিস পাণ্ডার নেতৃত্ব বিশাল কমব্যাট ফোর্স নামানো হয় গ্রামে। সাতজনকে আটক করা হয়। পুলিশের ভয়ে গ্রাম কার্যত পুরুষ শূন্য হয়ে যায়।

তৃণমূলের তরফে এই ঘটনায় জখম হওয়া বিপত্তারণ আচার্য, বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, সূর্যশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভোলানাথ ধীবরকে প্রথমে মেজিয়া ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছে, তাদের তিনজন জখম হয়েছেন। বিজেপির ব্লক সভাপতি চিত্তরঞ্জন রায়ের দাবি, “এ দিন সকাল থেকেই গ্রামে আমাদের কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাসানি দিচ্ছিল তৃণমূল কর্মীরা। তার প্রতিবাদ করাতেই আমাদের কর্মীদের মারধর করেছে ওরা। বহু কর্মী জখম হয়েছে আমাদের। ভয়ে তাঁরা গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।” তবে তৃণমূলের মেজিয়া ব্লক সভাপতির অভিযোগ, “শুক্রবার রাত থেকেই আমাদের দলীয় কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে মারধর শুরু করে বিজেপি কর্মীরা। এ দিন সকালে গ্রামের রাস্তায় আমাদের কর্মীকে মারধর করে বাইক ভাঙচুর করে ওরা। উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে বিজেপি এই অশান্তি বাঁধিয়েছে।” যদিও এ দিন বিকেল পর্যন্ত দু’পক্ষের তরফে স্থানীয় থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলেন, “মেজিয়ায় গোলমাল হলেও পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।”

এ দিকে, সবংয়ের ছাত্র পরিষদ সদস্যের খুনের প্রতিবাদে শনিবার বিষ্ণুপুর থানার রাধানগর গ্রামে একটি সভামঞ্চ বেঁধে সভার আয়োজন করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু তৃণমূলকর্মীরা সভা শুরুর আগেই সেই মঞ্চ ভেঙে দেয় বলে অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেসের জেলা নেতারা। তৃণমূলের এই তাণ্ডবের প্রতিবাদে রাস্তায় মাইক বেঁধে বিকেলে প্রতিবাদসভা করেন তাঁরা। কংগ্রেসের বাঁকুড়া জেলা কমিটির কার্যকরী সভাপতি অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “সবংয়ের নিহত সদস্যের মৃত্যুর প্রতিবাদ আমাদের সভা করতেও দিল না তৃণমূল। মঞ্চ ভেঙে যা করল তা অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ। এ ভাবে রাজ্যের সর্বত্র গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরতে চাইছে তৃণমূল। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মানুষই এর যোগ্য জবাব দেবে।” তৃণমূলের বিষ্ণুপুর ব্লক কমিটির সভাপতি মথুর কাপড়ি অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, “কংগ্রেস এখানে সাইনবোর্ড। টিমটিম করে দু’-একজন আছেন হয়তো। তাঁদের সভা আমরা কেন ভণ্ডুল করতে যাব? মিথ্যা অভিযোগ তুলে প্রচারে আসতে চাইছেন তাঁরা।” পুলিশ জানিয়েছে, এমন কোনও অভিযোগ তারা পায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mejia Clash Trinamool BJP radhanagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE