E-Paper

কলেজে সংঘর্ষ বর্তমান ও প্রাক্তনদের, জখম ৩

বর্তমান ছাত্রদের একাংশের অভিযোগ, প্রাক্তন ছাত্ররা কলেজ থেকে পাশ করে গেলেও সেখানের ‘আধিপত্য’ নিজেদের হাতে রাখতে চাইছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৩৩
উত্তেজনা থামাতে কলেজে পুলিশ। মঙ্গলবার।

উত্তেজনা থামাতে কলেজে পুলিশ। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।

ছাত্র সংসদের নিয়ন্ত্রণ কোন পক্ষের হাতে থাকবে, তা নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রদের একাংশের মধ্যে সংঘর্ষে রক্ত ঝরল নলহাটি হীরালাল ভকত কলেজে। মঙ্গলবার কলেজের মধ্যেই দু’পক্ষের মারামারি হয়। কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক এবং সিক্ষাকর্মীরা মারপিট বন্ধ করার চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি। উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় নলহাটি থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। সংঘর্ষে তিন জন কলেজ ছাত্র আহত হন। দু’জনের মুখে এবং এক জনের মাথায় আঘাত লেগেছে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাতেও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন বেশ কয়েক জন প্রাক্তনী। তাঁরা মৃত পড়ুয়া যে হস্টেলে ছিলেন, সেখানেই থাকতেন বলে পুলিশ জেনেছে। প্রাক্তনীদের ‘প্রভাব’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এই ঘটনায়। নলহাটির কলেজেও প্রাক্তনীদের একাংশের ভূমিকায় তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন কলেজের পড়ুয়াদের একাংশ বলে অভিযোগ। এ দিন সংঘর্ষে যাঁরা জড়িয়েছেন, তাঁরা সকলেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্য ও সমর্থক বলেই কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে। কলেদ পড়ুয়াগের দাবি, ছাত্র সংসদের রাশ কোন পক্ষের হাতে থাকবে, প্রাক্তন না বর্তমান ছাত্রদের, তা নিয়েই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত।

বর্তমান ছাত্রদের একাংশের অভিযোগ, প্রাক্তন ছাত্ররা কলেজ থেকে পাশ করে গেলেও সেখানের ‘আধিপত্য’ নিজেদের হাতে রাখতে চাইছেন। কলেজের ছাত্র সংসদের ভোট গত কয়েক বছর ধরে এই সমস্যা আরও বেড়েছে। তাঁদের দাবি, প্রাক্তন ছাত্রেরা নিজেদের ক্ষমতা বর্তমান পড়ুয়াদের হাতে দিতে চাইছেন না কোনও ভাবেই। অথচ সংসদের রাশ বর্তমান পড়ুয়াদের হাতে থাকাই স্বাভাবিক বলে জানাচ্ছেন ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগের তির প্রাক্তন ছাত্র ও নলহাটি শহর যুব তৃণমূলের সভাপতি রামিজ রাজের দিকে। ওই নেতার অনুগামীরাই (এঁদের মধ্যেও অনেকে কলেজের প্রাক্তন ছাত্র) ছাত্র সংসদের দখল নিজেদের হাতে রাখতে চাইছেন বলে কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যদের বড় অংশের অভিযোগ।

এ দিন সেই দ্বন্দ্ব থেকেই হাতাহাতি বাধে দু’পক্ষে। মারপিটে আহত ছাত্র জনি আলি রক্তাক্ত অবস্থায় কলেজ থেকে বেরিয়ে অভিযোগ করেন, ‘‘রামিজ রাজের অনুগামী ও বহিরাগত কয়েক জন কলেজে ঢুকে বর্তমান ছাত্রদের উপরে হামলা চালায়। এর ফলে বেশ কয়েক ছাত্র আহত হয়েছে।’’ জনি সহ আহত তিন ছাত্রকে নলহাটি হাসপাতালে নিয়ে য়াওয়া হয়। জনির আও অভিযোগ, ‘‘কলেজের গেট বন্ধ করে এ দিন হামলা চালানো হয়। পুলিশ বা অন্যেরা যাতে না আসতে পারে তাই এই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। রামিজের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানানো হবে।’’ কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল ইসলামও বলেন, ‘‘প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রদের মধ্যে গণ্ডগোল শুরু হয়। দুই পক্ষকে ছড়ানোর চেষ্টা করলেও তারা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার সঙ্গে কলেজের কোনও যোগ নেই। দুই গোষ্ঠীর সমস্যা নিয়ে এই ঘটনা।’’

কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা নলহাটি শহর তৃণমূলের সভাপতি রাকেশ সিংহর সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। রামিজ রাজা রাকেশের শিবিরের লোক বলেই এলাকায় পরিচিত। যদিও রামিজ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘আমি এ দিন কলেজে ছিলাম না। এই ঘটনার সঙ্গে আমার নাম যাঁরা জড়াচ্ছেন, তাঁরা আমাকে বদনাম করার চেষ্টা করছেন। কলেজের এই ঘটনায় কোনও ভাবেই আমি ও আমার পরিচিতেরা যুক্ত নই।’’

তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কলেজের মধ্যে এই ঘটনা কখনোই কাঙ্ক্ষিত নয়। প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে দলের কেউ এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে দল উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। আহত ছাত্রদের খোঁজখবর নিয়েছে দল। চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

nalhati Injury

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy