Advertisement
E-Paper

মল্লভূমে ‘রং-বাজি’ দুই নেতার

এ বার দোল উৎসবেও কেউ কাউকে ছাড়তে নারাজ। পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের বাজি যদি ‘বসন্ত বাহার’, তো বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্যের তুরুপের তাস ‘ধ্রুপদী বসন্ত’। এ নিয়েই সরগরম মল্লরাজাদের এই রাজধানী।

শুভ্র মিত্র

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:২০
টক্কর: আজ, বুধবার বিকেলে পুরপ্রধানের ‘বসন্ত বাহার’। নিজস্ব চিত্র

টক্কর: আজ, বুধবার বিকেলে পুরপ্রধানের ‘বসন্ত বাহার’। নিজস্ব চিত্র

শীতে গিয়ে বসন্ত এসেছে। কিন্তু, বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান ও বিধায়কের দ্বন্দ্ব থামছে না। শীতের বিষ্ণুপুর উৎসবেও দুই নেতার দলবলের দ্বৈরথ দেখেছে এই শহর। এ বার দোল উৎসবেও কেউ কাউকে ছাড়তে নারাজ। পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের বাজি যদি ‘বসন্ত বাহার’, তো বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্যের তুরুপের তাস ‘ধ্রুপদী বসন্ত’। এ নিয়েই সরগরম মল্লরাজাদের এই রাজধানী।

বস্তুত বছর দুয়েক আগে বিধানসভা ভোটের সময় থেকেই শ্যামবাবু ও তুষারবাবুর দ্বন্দ্ব অন্য রং ছড়িয়েছে বিষ্ণুপুরের রাজনীতিতে। কংগ্রেসের শিবির ছেড়ে তুষারবাবু তৃণমূলে আসার পরে সেই ফাটল বেড়েছে বই কমেনি। সাম্প্রতিক সংযোজন, বিষ্ণুপুর উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চ দখলের রেষারেষি। যার পরিণতিতে পুলিশের লাঠি পড়ে দুই গোষ্ঠীর লোকজনের পিঠে। কিন্তু তারপরেও বিভেদ ঘোচেনি।

ক’দিন ধরেই শহরের পথ-ঘা়ট দোলের আগেই কার্যত রঙিন হয়ে গিয়েছে ‘বসন্ত বাহার’-এর রং-চঙে হোর্ডিংয়ে। সোমবার রাত জেগে ওই শিবিরের লোকজন রবীন্দ্র স্ট্যাচু থেকে পুরভবন পর্যন্ত রাস্তায় আলপনাও আঁকেন। ‘ধ্রুপদী বসন্ত’-এর হোর্ডিং-ও শহরে পড়েছে। তবে তা সংখ্যায় নেহাত কম। তবে উৎসবের দিন বিপক্ষকে গোল খাওয়াতে দুই শিবিরই রীতিমতো ভোট পরিচালনায় মতোই ছক কষছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিধায়কের ‘ধ্রুপদ বসন্ত’। নিজস্ব চিত্র

ধ্রুপদী বসন্তের শিবিরে গিয়ে দেখা গেল, তুষারবাবু রীতিমতো পেন দিয়ে রুট ম্যাপ তৈরি করে স্বেচ্ছাসেবকদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন কার কী দায়িত্ব। তখন বসন্ত বাহারের কর্মীদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ব্যস্ত বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবী পরা শ্যামবাবু।

বৈঠক সেরেই শ্যামবাবু দাবি করলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় সম্পূর্ণ আমার ব্যবস্থাপনায় হচ্ছে ‘বসন্ত বাহার’। প্রাচীন ঐতিহ্যকে মাথায় রেখে আগে বিষ্ণুপুরে যে ভাবে হোলি খেলা হতো, সে ভাবেই বিষ্ণুপুরবাসী মাতবেন বসন্ত বাহারে।’’

তিনি জানান, দোলের আগের দিন বুধবার বিকেলে বিষ্ণুপুর টাউন ব্যাঙ্কের সামনে থেকে বসন্ত কার্নিভাল শুরু হবে। শহর জুড়ে মাইকে বাজবে— ‘ওরে গৃহবাসী...’। শহরের বিভিন্ন প্রাথমিক ও হাইস্কুলের স্কুলের পড়ুয়া থেকে বিভিন্ন নৃত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা ওই গানের তালে নৃত্য পরিবেশন করে শহর পরিক্রমা করবে। বাজার, বোলতলা, গোপালগঞ্জ, সাহাপাড়া হয়ে বৈলাপাড়ায় রবীন্দ্র মূর্তিতে ফুল দিয়ে পুরভবন চত্বরে পৌঁছবে। সেখানে মুক্তমঞ্চে হবে মূল অনুষ্ঠান।

শ্যামবাবু জানান, রামশরণ সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ধ্রুপদ আঙ্গিকে বসন্তের গান গাইবেন। এরই মধ্যে উড়বে নানা রঙের আবির। পঞ্চায়েত প্রতিমন্ত্রী শ্যামল সাঁতরার উপস্থিত থাকারও কথা আছে। শ্যামবাবুর মন্তব্য, ‘‘কারও সঙ্গে আমাদের রেষারেষি নেই। আমরা আমাদের মত উৎসব করব। কাউকে অনুকরণ করে নয়।’’

বসন্ত যাপন সমিতি নামে একটি সংস্থা উদ্যোগী হলেও ধ্রুপদী বসন্তের মূল কাণ্ডারি বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য।

তিনি পাল্টা বলছেন— ‘‘দু’বছরে পড়ছে আমাদের বসন্ত উৎসব। তাই কে কাকে অনুকরণ করছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আসলে খেলোয়ারি মানসিকতা রাখতে হবে। আমি তো চাই পুরপ্রধানও আমাদের সঙ্গে দোলের দিন মদনমোহন মন্দির থেকে হাঁটুন। সাংসদ সৌমিত্র খান প্রভাতফেরির সূচনা করবেন। সব ধর্ম, সব ধরনের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি।’’

আর শ্যামবাবু বলছেন, ‘‘শুনেছি শহরে আরেকটা কোথাও অনুষ্ঠান হচ্ছে। একটা পোস্টারও যেন কোথায় দেখলাম। তবে এখন পর্যন্ত কোনও আমন্ত্রণপত্র দেয়নি। তাছাড়া দোলের দিন নানা পারিবারিক অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকব। তাই তো শহরবাসীকে নিয়ে আগের দিন বিকেলে বসন্ত বাহারে মাতব।’’

বাসিন্দাদের অনেকেই অবশ্য এই দ্বৈরথ থামানোর পক্ষে সওয়াল করছেন। তাঁরা বলছেন, ‘‘রঙের উৎসব তো মানুষে মানুষে মিলিয়ে দেয়। তা হলে সেই উৎসবেই একই দলের দুই নেতার আলাদা অনুষ্ঠান কেন?’’

Holi TMC Party Leaders
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy