E-Paper

বাবা-মা-দাদা বাংলাদেশে, গ্রামেই একরত্তি

পাইকরের বাসিন্দা দানিশ বেশ কয়েক বছর ধরে দিল্লির সেক্টর ২৬-এর রোহিণী এলাকায় থাকছিলেন স্ত্রী সোনালি এবং সাবির ও সাবরিন নামে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে।

দয়াল সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫ ০৮:০৮
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

তাঁরা বাংলাভাষী। স্রেফ এই ‘অপরাধে’ বাংলাদেশি সন্দেহে দিল্লিতে কর্মরত বীরভূমের পাইকরের পরিযায়ী শ্রমিক দানিশ শেখ, তাঁর স্ত্রী ও বছর সাতেকের পুত্রসন্তানকে ‘পুশ ব্যাক’ করে বাংলাদেশে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে। তাঁদের শিশুকন্যা গ্রামের বাড়িতে থাকায় তাকে দেশান্তরী হতে হয়নি। এই ঘটনা সামনে আসতেই এলাকার মানুষের মনে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। কাজ করছে হতাশা ও আতঙ্ক।

বিভিন্ন জেলার শ্রমিককে বাংলাদেশি সন্দেহে জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একাধিক বিজেপি শাসিত রাজ্যের পুলিশের বিরুদ্ধে। দানিশ শেখ তেমনই পরিযায়ী শ্রমিকদের এক জন। রুজির টানে মুরারই ২ ব্লকের পাইকর এলাকার বহু বাসিন্দা দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কর্মরত। এখন পুলিশি হেনস্থার ভয়ে অনেকেই বাড়ি ফিরেছেন। অনেকে এখনও রয়েছেন দিল্লিতে। দানিশের ঘটনার পরে আতঙ্কে ওই সব পরিবারও।

পাইকরের বাসিন্দা দানিশ বেশ কয়েক বছর ধরে দিল্লির সেক্টর ২৬-এর রোহিণী এলাকায় থাকছিলেন স্ত্রী সোনালি এবং সাবির ও সাবরিন নামে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে। লোহালক্কড়, কাগজ কুড়িয়ে বিক্রি করে সংসার চালাতেন দানিশ। অভিযোগ, গত ১৮ জুন বাংলাদেশি সন্দেহে দানিশ ও তাঁর পরিবারকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। নথি দেখালেও কাজ হয়নি। বাংলাদেশি সন্দেহে জোর করে ওই দম্পতি ও তাঁদের শিশুপুত্র সাবিরকে বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ করে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করেছেন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম।

সোনালির পরিবার সূত্রে খবর, তাঁর কন্যাশিশু দাদু-দিদার কাছে পাইকরে ছিল বলে ‘পুশ ব্যাক’-এর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু, এই মুহূর্তে সোনালি চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ভিন্ দেশে চরম কষ্টে আছেন তাঁরা। চিন্তা গর্ভস্থ সন্তানকে নিয়ে।দানিশের মা দিলরুবা বিবি বলেন, ‘‘ছেলে বিয়ের পরে সে-ভাবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত না। কিন্তু, ছেলে তো। ওদের এই বিপদে কান্না ছাড়া আর কিছু নেই আমাদের। টাকাপয়সাও নেই। ওদের পথ চেয়ে আছি।’’ সোনালির মামাতো ভাই সোয়েফ আলি বলেন, ‘‘সামিরুল ইসলামের কথা মেনে মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করতে যাচ্ছি। বোনের পরিবারের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে।’’

এলাকায় ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। পাইকরের নাগরিক মঞ্চের সদস্য পিন্টু শেখ জানালেন, এলাকায় কাজ নেই। ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। পেটের দায়েই বহু মানুষ দিল্লি-সহ ভিন রাজ্যে রয়েছে। পিন্টুর প্রশ্ন, ‘‘কেবল বাংলা বলার জন্য কাউকে কেন বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে?’’ এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানাতে পাইকরের একটি ক্লাবে নাগরিক মঞ্চের পক্ষে সভা হয়েছে সোমবার বিকেলে। সাংসদ শতাব্দী রায়কেও জানানো হয়েছে সব। শতাব্দী বলছেন, ‘‘অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। সামিরুল ইসলামই বিষয়টি দেখছেন। আমি জেলাশাসক এবং নবান্নের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। নথিও পাঠানো হয়েছে। আশা করি ওদের ফিরিয়ে আনা যাবে।’’

যাঁরা দিল্লি থেকে চলে এসেছেন, তাঁদের অন্যতম পাইকরের বাসিন্দা তুফান শেখ বলেন, ‘‘রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতাম ওখানে। থাকতাম দানিশদের বাসস্থানের কাছেই। কিন্তু, বাংলায় কথা বললেই কিছুদিন ধরে পুলিশ যে-ভাবে অত্যাচার করছিল, ওখানে থাকার সাহস পাইনি। এখন এক প্রকার কর্মহীন হয়ে রয়েছি।’’

প্রায় একই অভিজ্ঞতা পাইকরের মিলি বিবির। তিন সন্তান স্বামীর সঙ্গে দিল্লিতে ছিলেন। বললেন, ‘‘লোহালক্কড়, কাগজ কুড়িয়েই চলত সংসার। মাস খানেক আগে বাংলা বলার জন্য স্বামীকে দিল্লি পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছিল। নথিপত্র দেখিয়ে বহু কষ্টে ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে পেরেছিলাম। ভয়ে আর ওখানে থাকিনি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

purulia Delhi Police

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy