Advertisement
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
উদ্যোগী যুবকেরা

আড্ডার কথা থেকে ফিরল শ্মশানের হাল

শ্মশান সংস্কারের জন্য রাজ্য সরকার ‘বৈতরণী প্রকল্প’ চালু করেছে। কিন্তু সেই প্রকল্প শুরু হওয়ার আগেই ‘মানবাজার শ্মশানভূমি সংস্কার কমিটি’ কাজ অনেকটাই এগিয়ে ফেলেছিল বলে জানান বিডিও (মানবাজার ১) সত্যজিৎ বিশ্বাস।

মানবাজারের শ্মশানে স্থায়ী চুল্লি। নিজস্ব চিত্র

মানবাজারের শ্মশানে স্থায়ী চুল্লি। নিজস্ব চিত্র

সমীর দত্ত
শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৭ ০২:০৪
Share: Save:

কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বছর দুয়েকের চেষ্টায় এলাকার শ্মশানের হাল ফেরালেন স্থানীয় যুবকেরাই। মানবাজার-পুরুলিয়া রাস্তায় শহর থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে ওই শ্মশানে শনিবার একটি অনুষ্ঠান করে নতুন পরিকাঠামোর উদ্বোধন হয়েছে।

উদ্যোগের সূত্রপাত বছর দুয়েক আগের এমনই এক বর্ষার দিনে। তখন শ্মশান বলতে ফাঁকা একটা জমি। এলাকার যুবক অনাথবন্ধু মুখোপাধ্যায়, প্রণব মুখোপাধ্যায়, শেখ মুর্শেদ, মথুর ধীবর, সমরেশ দত্তরা শ্মশানকালী মন্দিরে আড্ডা দিচ্ছিলেন। তাঁদের কেউ ছোটখাট ব্যবসা করেন। কেউ চাকরির খোঁজ করছেন। অনাথবন্ধু বলেন, ‘‘শ্মশানে একটা চিতা জ্বলছিল। হঠাৎ তোড়ে বৃষ্টি এল। শ্মশানযাত্রীরা সবাই চিতা ফেলে এসে মন্দিরের চাতালে আশ্রয় নিলেন। বৃষ্টির ছাটে সবাই ভিজে একশা।’’ বৃষ্টি যখন থামল, চিতা নিভে গিয়েছে। আধপোড়া শব নামিয়ে ফের নতুন করে চিতা সাজানো শুরু হল।

সেই দিনই ওই যুবকেরা ঠিক করে ফেলেছিলেন, কিছু একটা করতে হবে। গড়া হল ‘মানবাজার শ্মশানভূমি সংস্কার কমিটি’। বন্ধুরা সবাই সাধ্য মতো টাকা দিলেন। রাজ্যের বিচ্ছিন্ন কিছু এলাকা থেকে যখন সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার খবর উঠে আসছে, অনাথবন্ধু বা প্রণবদের সঙ্গে সমান উদ্যমে শ্মশান সংস্কারের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন শেখ মুর্শেদ। তিনি বলেন, ‘‘মৃত্যু সব সময়ে প্রমাণ করে দেয় সাম্প্রদায়িক বিভেদ কত তুচ্ছ। সবাই মিলে যখন একটা ভাল কাজের পরিকল্পনা হল, মানবিকতার ধর্মের খাতিরেই আমারও সেটায় সামিল হওয়া কর্তব্য মনে হয়েছিল।’’

শ্মশান সংস্কারের জন্য রাজ্য সরকার ‘বৈতরণী প্রকল্প’ চালু করেছে। কিন্তু সেই প্রকল্প শুরু হওয়ার আগেই ‘মানবাজার শ্মশানভূমি সংস্কার কমিটি’ কাজ অনেকটাই এগিয়ে ফেলেছিল বলে জানান বিডিও (মানবাজার ১) সত্যজিৎ বিশ্বাস। তিনি জানান, সেই জন্যই প্রকল্প থেকে ওই কাজে সাহায্য করা যায়নি।

ততদিনে সাহায্য চেয়ে ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে তহবিল তৈরি করে ফেলেছেন কমিটির সদস্যরা। সেই টাকায় গড়া হয়েছে ছাউনি দেওয়া লোহার স্থায়ী চুল্লি। গ্রীষ্মে খাল শুকিয়ে গেলে চিতা নেভানোর জন্য জল বয়ে আনতে হতো দূর থেকে। শ্মশানেই বসানো হয়েছে নলকূপ। আর শ্মশানবন্ধুদের বিশ্রামের জন্য তৈরি করা হয়েছে প্রতীক্ষালয়। আপাতত ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে শ্মশানে সীমানা পাঁচিল তৈরির কাজ চলছে। শ্মশান চত্বর সাফসুতরো রাখার জন্য এক জন ঠিকা কর্মী নিয়োগের কথাও ভাবা হচ্ছে বলে কমিটির সদস্যরা জানান। জানানো হয়েছে, সমস্ত কাজ শেষ হলে খরচের হিসাব তুলে ধরা হবে।

শনিবারের অনুষ্ঠানটি ছিল সাদামাটা। এলাকার মানুষজন স্বতস্ফুর্ত ভাবে তাতে সামিল হন বলে জানান সমরেশরা। মানভূম কলেজের শিক্ষক তথা লোক গবেষক তপন পাত্র, এলাকার কবি গৌতম দত্ত, ব্যবসায়ী সমিতির কর্তা আনন্দময় সেন— সবাই বলছেন, ‘‘এই উদ্যোগের জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।’’ তাঁরা জানান, এর আগেও যাত্রাপালার টিকিট বিক্রি করে শ্মশান সংস্কারের তহবিল গড়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজ হয়নি।

এ বারে সেটাই করে দেখিয়েছেন মুর্শেদ, মথুররা।

অন্য বিষয়গুলি:

Manbazar cremation ground মানবাজার
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy