হামলার পরে টোটো চালকেরা মিছিল করে থানায় অভিযোগ করতে যান।—নিজস্ব চিত্র
দু’পক্ষের মধ্যে সংঘাত প্রথম থেকেই ছিল। কিন্তু, এত দিন বিষয়টি রিকশা চালকদের আন্দোলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এ বার সেই সংঘাত হাতাহাতির পর্যায়ে নেমে এল। শনিবার বাঁকুড়া শহরে এক টোটো চালককে মারধরের অভিযোগ উঠল কিছু রিকশা চালকের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার প্রতিবাদে বিকেলে শহর জুড়ে মিছিল করেন টোটো চালকেরা। পরে বাঁকুড়া সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করে টোটো চালকদের সংগঠন।
টোটো চালক ভৈরব দাসের দাবি, এ দিন দুপুরে তামলিবাঁধ এলাকায় তাঁকে ঘেরাও করে মারধর করেন কয়েক জন রিকশা চালক। তাঁর জামা টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়। ঘাড়েও চোট পেয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, “এক মহিলা যাত্রী তামলিবাঁধ মোড়ে আমার টোটোতে উঠতে চান। কিন্তু ওই এলাকায় আমাদের স্ট্যান্ড না থাকায় আমি তাঁকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে বলি। তা দেখেই রিকশা চালকেরা আমার উপরে চড়াও হয়ে মারধর করে।’’ বাঁকুড়া ই-রিকশা ইউনিয়নের সভাপতি তথা বাঁকুড়া পুরসভার কাউন্সিলর হিরণ চট্টরাজ বলেন, “এই ঘটনা আমরা মেনে নেব না। টোটো চালককে মারধরের ঘটনায় জড়িত রিকশা চালকদের শাস্তি চাই। থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।’’
যদিও ঘটনাটিকে সাজানো বলে দাবি করেছেন বাঁকুড়া শহর রিকশা চালক ইউনিয়নের সভাপতি সুজিত রায়। তাঁর দাবি, “এই সব মিথ্যা গল্প বানানো হচ্ছে। তামলিবাঁধে কোনও টোটো চালককে মারধর করা হয়নি। আমি নিজে মারপিটের খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে খবর নিয়েছি।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, এ দিন বিকেলে বাঁকুড়া স্টেশনে এক রিকশা চালককে মারধর করেন টোটো চালকেরা। পুলিশ জানিয়েছে, সব অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঘটনা যাই-ই হোক, টোটো বনাম রিকশা সংঘাত ক্রমেই যে চেহারা নিচ্ছে, তা প্রশাসনের মাথাব্যথা বাড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এবং এই সংঘাত কেবল বাঁকুড়া শহরের নয়। একই ছবি রাজ্যের অন্যত্রও। জেলায় জেলায় কোথাও অটো-টোটো, কোথাও টোটো-রিকশা বিবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে। অনেক জায়গাতেই দু’পক্ষের মারামারিও হচ্ছে। শুক্রবারই বাঁকুড়ায় টোটো চলাচল বন্ধের দাবিতে শহরের কেরানিবাঁধ মোড়ে পথ অবরোধে নামেন রিকশা চালকেরা। সেই প্রেক্ষিতে এ দিন সকালে বাঁকুড়া সদর থানায় টোটো ও রিকশা চালকদের নিয়ে বৈঠকেও বসেন পুলিশ আধিকারিকেরা। বৈঠকে অবশ্য কোনও সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। এ দিকে টোটো চালকদের দাবি, এ দিন দুপুরে শহর জুড়ে একটি গাড়িতে মাইক বাজিয়ে প্রশাসনের তরফে শহরে টোটো চলাচল বন্ধ করতে বলা হয়। যদিও খোঁজ নিয়ে টোটো চালকেরা জানতে পারেন, প্রশাসনের তরফে ওই মাইক-প্রচার চালানো হয়নি। খোদ জেলার পরিবহণ আধিকারিক (আরটিও) সৌমেন দাসও বলেন, “প্রশাসনের পক্ষ থেকে টোটো বন্ধের নির্দেশ দিতে শহরে এমন কোনও মাইকে প্রচার করা হয়নি।’’ তা হলে ওই কাজটি কে করল? এ প্রশ্নের সদুত্তর নেই সৌমেনবাবুর কাছেও। তবে সেই মাইকিং শুনেই শহরের কিছু জায়গায় রিকশা চালকেরা অতি সক্রিয় হয় টোটো বন্ধের জন্য। যার ফলেই তামলিবাঁধে এ দিন মারপিটের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি হিরণবাবুর।
টোটো ও রিকশা চালকদের এই সমস্যা মেটাতে কী পদক্ষেপ করছে জেলা প্রশাসন, তা জানতে চাওয়া হলে আরটিও সৌমেনবাবু বলেন, “কিছু দিন আগেই বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসকের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে পুরসভাকে টোটো চলাচলের রুট নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে মৌখিক ভাবে। পুরসভা রুট জানালেই আমরা আলোচনা করে টোটো চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাব।’’
বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, আসন্ন বোর্ড মিটিংয়ে শহরে টোটোর রুট নির্ধারণের প্রসঙ্গটি তোলা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy