Advertisement
০৩ মে ২০২৪

সমবায়ে নগদ বাড়ন্ত, মাস মাইনে তুলতে নাকাল কর্মী

খাতায় কলমে অ্যাকাউন্টে অর্থের কোনও ঘাটতি নেই। অথচ তুলতে গেলেই শুনতে হচ্ছে ‘টাকা নেই’! পাঁচশো ও হাজারের নোট বাতিলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের জেরে বর্তমানে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সর্বত্রই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২৭
Share: Save:

খাতায় কলমে অ্যাকাউন্টে অর্থের কোনও ঘাটতি নেই। অথচ তুলতে গেলেই শুনতে হচ্ছে ‘টাকা নেই’! পাঁচশো ও হাজারের নোট বাতিলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের জেরে বর্তমানে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সর্বত্রই। ব্যাঙ্কের স্যালারি অ্যাকাউন্ট থেকে মাস মাইনে তুলতে গিয়ে নাকাল হচ্ছেন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কর্মীরাও। বিশেষ করে মাথায় হাত পড়েছে সমবায় ব্যাঙ্কের গ্রাহক সরকারি কর্মীদের। নোট বাড়ন্ত হওয়ায় বেতন তুলতে গিয়ে কোথাও ছ’হাজার, কোথাও বা চার’হাজার টাকা নিয়েই শুকনো মুখে বাড়ি ফিরে আসতে হচ্ছে তাঁদের।

বাঁকুড়া জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের (বিডিসিসিবি) জেলায় মোট ১৯টি শাখা রয়েছে। এই শাখাগুলি থেকে প্রায় চার হাজার সরকারি কর্মী বেতনের টাকা পান। মাসের শুরুতেই ট্রেজারি থেকে বিডিসিসিবি-র অ্যাকাউন্টে কর্মীদের বেতনের টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, নোটের আকালের এই বাজারে কর্মীদের হাতে বিশেষ নগদ টাকা দিতে পারছে না ওই ব্যাঙ্ক। অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক সাগর ঘোষের কথায়, “খাতায় টাকার অঙ্ক জমা পড়ে গেলে কী হবে, ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারে নোটই তো নেই! অথচ গ্রাহকদের তো নগদ দিতে হয়।’’ তিনি জানান, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে টাকা পাঠায়। রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে নগদ নেয়। বর্তমানে এত কম টাকা আসছে যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি তাদের নিজেদের গ্রাহকদেরই চাহিদা মতো টাকা জোগাতে পারছে না। তার পরেও রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি থেকে যেটুকু টাকা মিলছে, বিডিসিসিবি-র বাঁকুড়া শাখা থেকে সেই টাকা জেলার সব শাখায় ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে সমবায় ব্যাঙ্কে সাধারণ গ্রাহকেরাও বিশেষ একটা নগদ টাকা জমা করতে পারছেন না। ফলে, চাহিদার তুলনায় টাকার জোগান একেবারে তলানিতে এসে ঠেঁকেছে। এই ঘটনায় জেলায় বিডিসিসিবি-র ছ’টি এটিএমই বন্ধ হয়ে রয়েছে। সাগরবাবু মন্তব্য, “হাতে যেমন টাকা আসবে, গ্রাহকদের তেমনই তো আমরা টাকা দেব।’’

এই পরিস্থিতির ছাপ কতটা পড়েছে গ্রাহকদের মধ্যে? বাঁকুড়ার বনকাটি হাইস্কুলের শিক্ষক চিন্ময় মন্ডলের কথায়, “বিডিসিসি ব্যাংকের জেলা শাখা থেকে আমি বেতন তুলি। প্রথম দিন মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকা তুলতে পেরে ছিলাম”। ইন্দাস হাইস্কুলের শিক্ষক তুষারকান্তি লাই বলেন, “প্রথম দিন বেতন তুলতে গিয়ে পেয়েছিলান সাড়ে ছ’হাজার টাকা। পরদিন গিয়ে পেয়েছিলাম দু’হাজার। বেতনের অর্ধেক টাকা পাওনাদারদের দিতেই খরচ হয়ে যায়। ওই টাকায় আমি সাংসারিক ধার পর্যন্ত মেটাতে পারিনি”। ছাতনা বাসুদেব বিদ্যালয়ের শিক্ষক অরবিন্দ দাসের ক্ষোভ, “মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেতন তুলতে পেরেছি। স্কুল ছেড়ে প্রতিদিন ব্যাঙ্কে গিয়ে লাইন দেওয়া তো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বিরক্তিকর একটা পরিস্থিতি।’’

এই অবস্থায় বহু সরকারি কর্মীই তাঁদের সহকর্মীদের কাছে বাধ্য হয়ে নগদ টাকা ধার নিয়ে সংসারের চাহিদা মেটাচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক তৃণমূল শিক্ষক সমিতির বাঁকুড়া ২ ব্লকের সভাপতি পাপন চৌধুরী বলেন, “ধার করে চালানো ছাড়া উপায় নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cooperative banks
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE