করোনা প্রতিষেধকের জোগানের অপ্রতুলতা এবং নানা বিভ্রান্তির জেরে রাজ্য জুড়ে টিকাকেন্দ্রগুলিতে লম্বা লাইন পড়ছে প্রতিষেধক প্রত্যাশীদের। সেই লাইন থেকে নতুন করে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কাও করছেন চিকিৎসকেরা। শুক্রবার সিউড়ি পুরসভার সামনে প্রতিষেধক নেওয়ার দীর্ঘ লাইন দেখেও অনেকে একই আশঙ্কা করছেন। মূলত ভ্রান্ত ধারণা থেকে এই ভিড় বলে দাবি পুরসভা কর্তৃপক্ষের।
রাজ্য সরকারের নির্দেশ মতো এখন সিউড়ি পুরসভায় হকার ও পরিবহণ কর্মীদের প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ দেওয়া হচ্ছে। গত সোমবার থেকে সেই কাজ শুরু হয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিষেধক নিতে এসে যেন কোনও সমস্যা না হয়, সেই কারণে একটি রুটিন তৈরি করা হয়েছে। ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সি হকারদের প্রত্যেক সপ্তাহের সোমবার, বুধবার এবং শুক্রবার প্রথম ডোজ দেওয়া হচ্ছে। বাকি দিনগুলিতে ৪৪ ঊর্ধ্ব হকারদের প্রতিষেধক দেওয়া হবে। আর সেখানেই তৈরি হয়েছে বিভ্রাট।
সাধারণ মানুষের অনেকেই মনে করেছেন যে, ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সি সবাইকেই প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে সিউড়ি পুরসভায়। সেই জন্য প্রতিষেধক পাওয়ার আশায় কেউ কেউ ভোর থেকে পুর-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে লাইন দিচ্ছেন, হকার না হওয়া সত্ত্বেও। শুক্রবার ঠিক সেটাই ঘটেছে। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই লাইনও দীর্ঘতর হয়েছে। এক সময় মানুষের লাইন পুরসভার সামনের রাস্তায় চলে আসে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুরসভার পক্ষ থেকে পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়। পুরসভার দাবি, কেবল সিউড়ি পুর-এলাকা নয়, আশপাশের পঞ্চায়েত এলাকা থেকেও প্রচুর মানুষ প্রতিষেধকে পাওয়ার আশায় এসেছেন।
এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ পুরসভায় গিয়ে দেখা গেল, অন্তত হাজার খানেক মানুষ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের প্রত্যেকের মুখে মাস্ক। কিন্তু দূরত্ব বিধি মানা হয়নি।
সাড়ে বারোটা পর্যন্ত ওই ভিড় ছিল। অবশেষে লাইনে থাকা ১৫০ জনকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়। সিউড়ির রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দা সন্দীপ অবস্তি বলেন, ‘‘বন্ধুবান্ধবদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, ১৮ থেকে ৪৪ বছরের সবাইকে প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে। তাই সকাল ছ’টা থেকে লাইনে অপেক্ষা করছি।’’ এক তরুণ রিকু মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘দাদার কাছে প্রতিষেধক দেওয়া হবে শুনে লাইন দিয়েছি।’’ ভাইয়ের স্ত্রীর প্রতিষেধকের জন্য সকাল সাতটা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন সিউড়ির ইন্দিরাপল্লির বাসিন্দা সুধীন মুখোপাধ্যায়।
কিন্তু লাইনে দাঁড়ানো অনেককে দূরত্ব বিধি না-মানার কারণ জিজ্ঞেসা করা হলে কেউ কিছু বলতে চাননি। পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন অঞ্জন কর বলেন, ‘‘আমরা সবাইকে হকার হিসেবে প্রতিষেধক দিয়েছি। তবে, এটাও সত্যি হকার নন, এমন অনেকেও প্রতিষেধক নিয়েছেন।’’ তাঁর বক্তব্য, অনেকে সকাল থেকে অপেক্ষা করে রয়েছেন। তাঁদের তো ফিরিয়ে দেওয়া যায় না।