প্রতিষেধকের জোড়া ডোজ়ের শংসাপত্র বা কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট— এই দু’টির কোনও একটি সঙ্গে না থাকলে জেলার কোনও হোটেল লজে ঠাঁই হবে না। বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় এই মর্মে বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তি জারি করলেও জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র তারাপীঠে রবিবার দেখা গেল কোনও নিয়মের বালাই নেই। ছুটির দিনে কয়েক হাজার দর্শনার্থী ভিড় করলেও দর্শনার্থী থেকে তারাপীঠের সেবায়েতদের মধ্যে যেমন মাস্কের ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা বোধের অভাব দেখা গেল, তেমনই দূরত্ব বিধি মেনে চলার ক্ষেত্রেও সতর্কতার কোনও বালাই ছিল না। জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মেনে দর্শনার্থীদের জন্য করোনা পরীক্ষা করার ক্ষেত্রেও অনেক শিথিলতা দেখা গিয়েছে। লজ বা হোটেল ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রেও কোনও নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে বাস্তব অভিজ্ঞতা অনেকেরই।
রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ সাঁইথিয়া-রামপুরহাট রাস্তা ধরে অটোয় তারাপীঠ যাওয়ার সময় দেখা গেল, অটোচালকের মুখে মাস্ক নেই। অটোয় চেপে থাকা অন্য এক সহযাত্রীর মুখেও মাস্ক নেই। দু’জনেই জানালেন, মাস্ক আছে, কিন্তু পকেটে ভরা আছে। বড়শাল পেরিয়ে ব্লক বেলিয়া মোড়ে প্রশাসনের কিয়স্কে কোনও পুলিশ কর্মী, সিভিক ভলান্টিয়ার বা স্বাস্থ্য কর্মীদের দেখা মিলল না। কিয়স্ক পেরিয়ে চোখের সামনে কয়েকটি দর্শনার্থী বোঝাই করা অটো, টোটো তারাপীঠের দিকে চলে গেলেও জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মোতাবেক তাদের করোনা পরীক্ষার বা টিকাকরণের তথ্য সংগ্রহ করা হল না।
তারাপীঠ ঢোকার আগে ফুলিডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন কিয়স্কে সিভিক ভলান্টিয়ারদের দেখা গেলেও স্বাস্থ্য কর্মীদের দেখা যায়নি। ১১টা নাগাদ তারাপীঠ মন্দিরে গিয়ে দেখা গেল দর্শনার্থীদের ভিড়ে ঠাসা মন্দির চত্বর। মূল মন্দিরের ভিতর বাইরে দর্শনার্থীদের গা ঘেঁষাঘেঁষি করে লাইন। কারও মাস্ক একেবারেই নেই, কারও আবার থুতনির নীচে মাস্ক আটকানো। মাস্ক কেন পরেন নি? পুজোর দেওয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শনার্থীদের একাংশের জবাব, ‘‘দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। গরম আবহাওয়া। এত মানুষের ভিড়। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বলে সব সময় মাস্ক ব্যবহার করা যাচ্ছে না।’’
মন্দিরের সেবায়েত সমিতির সম্পাদক ধ্রুব চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “মাস্ক পরে মন্দিরে প্রবেশ করার জন্য একাধিকবার মন্দির কমিটি মাইকিং করছে। তা সত্ত্বেও অনেকে মাস্ক ব্যবহার না করলে কী করব?’’ দূরত্ব বিধি না মানার প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, ‘‘হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে সবাই মা তারার দর্শন পেতে চান। এত ভিড়, দূরত্ব বিধি রক্ষা করাই সমস্যা।’’
দর্শনার্থীদের লজ দেওয়া হচ্ছে কীভাবে তার খোঁজ নিতেই জানা গেল তারাপীঠের বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মুণ্ডমালিনী তলা, কবিচন্দ্রপুর এলাকার অধিকাংশ লজে জেলাশাসকের সাম্প্রতিক নির্দেশ মানার কোনও বালাই নেই। লজ মালিকদের অনেকেই জেলাশাসকের কী নির্দেশ আছে সেটাই জানেন না। কবিচন্দ্রপুর এলাকার এক লজ কর্মী বললেন, ‘‘মানুষ সুস্থ আছে বলেই তো তারাপীঠে আসছে। লজ ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে কেবলমাত্র তাদের সচিত্র পরিচয়পত্র আমরা দেখছি। টিকাকরণের তথ্য দেখছি না।’’
টিকাকরণের তথ্য চেয়ে লজ ভাড়া দিতে গিয়ে লজ মালিকদের একাংশ আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন লজ মালিকেরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লজ মালিক জানালেন, ‘‘জেলাশাসকের নির্দেশ মেনে লজ ভাড়া না দিয়ে আমি আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আশপাশের লজগুলি নিয়মের তোয়াক্কা না করে ব্যবসা করছে।’’ লজ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত লজ মালিকদের নিয়ে জেলাশাসকের সাম্প্রতিক নির্দেশ নিয়ে কোনও বৈঠক হয়নি বলেই খবর। কোনও মাইকিংও করা হয়নি। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারিও করা হয় নি।
জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, ‘‘করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ে সতর্কতায় দর্শনার্থী থেকে লজ মালিক, মন্দির কমিটি সকলকেই কোভিড বিধি মেনে চলতে হবে। তারাপীঠে নজরদারি বাড়াতে হবে।’’