Advertisement
E-Paper

গা ঘেঁষাঘেষি করে ব্যাঙ্কের লাইনে

মাসের গোড়া। বেতন, পেনশনের টাকা ঢুকেছে অ্যাকাউন্টে। করোনা পরিস্থিতিতে দুঃস্থদের ৫০০ টাকা করে সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ দিন থেকে শুরু হয়েছে জনধন অ্যাকাউন্টে সেই টাকা জমা পড়াও। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার বিভিন্ন ব্যাঙ্কে শুক্রবারের পরিস্থিতির খোঁজ নিল আনন্দবাজার।কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গ্রাহকদের কাছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানোর আবেদন জানিয়ে ফল হয়নি।

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২০ ০৪:০৫
শুক্রবার রঘুনাথপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে। ছবি: সঙ্গীত নাগ

শুক্রবার রঘুনাথপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে। ছবি: সঙ্গীত নাগ

পুরুলিয়া

লাইনে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বহু মানুষ। তাঁদের অনেকের মুখেই ‘মাস্ক’ নেই। কয়েকজন মুখে বেঁধে রেখেছেন গামছা। শুক্রবার পুরুলিয়ার বহু ব্যাঙ্কের সামনে চোখে পড়ল এই দৃশ্য। বেতন ও পেনশন তুলতে এ দিন ব্যাঙ্কের সামনে ভিড় করেছিলেন বহু গ্রাহক। লাইনে ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রেখে দাঁড়ানোর ছবিটা দেখা গেল না বেশির ভাগ জায়গাতেই।

কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গ্রাহকদের কাছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানোর আবেদন জানিয়ে ফল হয়নি। তবে ব্যাঙ্কের মধ্যে এক সঙ্গে অনেকের প্রবেশ বন্ধ ছিল। এক সঙ্গে দু’-তিন জনের বেশি গ্রাহককে ধুকতে দেওয়া হয়নি।

আদ্রার বেনিয়াশোলের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে গ্রাহকদের লম্বা লাইন পড়ে যায় সকাল ৯টা বাজতেই।

একই চিত্র দেখা যায় পুরুলিয়া শহর, ঝালদা ও রঘুনাথপুর মহকুমা সদরের ব্যাঙ্কগুলিতে।একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন কেন্দার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী ক্ষুদিরাম মাহাতো। তাঁর দাবি, ‘‘৩২ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে এসেছি পেনশন তুলতে। টাকা না তুললে সংসার চলবে কী ভাবে!”

স্ত্রীর পেনশন তুলতে রধুনাথপুরের একটি ব্যাঙ্কে এসেছিলেন নিতুড়িয়ার বাসিন্দা অশোক পাণ্ডে। তিনি বলেন, ‘‘নিতুড়িয়ার সড়বড়িতে একটি ব্যাঙ্কের শাখা থেকে স্ত্রীর পেনশন তুলতাম। কিন্তু তাঁরা জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সেখান থেকে পেনশন তোলা যাবে না। যে শাখায় গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, সেই শাখা থেকেই পেনশন তুলতে হবে। তাই ২৬ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে রঘুনাথপুর আসতে হয়েছে।”

যে সকল গ্রাহকেরা এ দিন টাকা তোলার লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগই পেনশনভোগী। তাঁরা এটিএম কার্ড ব্যবহারে স্বচ্ছন্দ নন। তাই ‘লকডাউন’ উপেক্ষা করেই ব্যাঙ্কে আসতে হয়েছিল। তাঁদের সকলেরই বক্তব্য, ‘‘বাড়ি থেকে না বেরোনোর পরামর্শ দিচ্ছেন সকলে। ‘লকডাউন’ কতদিন চলবে বুঝতে পারছিনা। সংসার চালানোর জন্য টাকা তোলা ছাড়া অন্য উপায় নেই। তাই আসতে হয়েছে।”

ঝালদার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় দিয়ে দেখা যায়, ঘেঁষাঘেঁষি করে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন গ্রাহকেরা। দূরে ছায়াতে বসে রয়েছেন দুই সিভিক-কর্মী।

তাঁরা জানান, সকাল থেকেই গ্রাহকদের দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে বলা হয়েছিল। বুঝিয়ে কাজ না হওয়ায় হাল ছেড়ে দিয়েছেন।

বাঁকুড়া

‘লকডাউন’ চলায় ঘরবন্দি থাকতে হচ্ছে। পেনশন দেওয়া শুরু হতেই শুক্রবার ব্যাঙ্কের সামনে ভিড় করেছিলেন প্রবীণ নাগরিকেরা। বহু জায়গায় মানা হয়নি করোনা-সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ।

বাঁকুড়ার প্রায় সবক’টি ব্যাঙ্কেই এ দিন সকাল থেকেই গ্রাহকদের ভিড় ছিল। কোথাও কোথাও ব্যাঙ্কের সামনে গ্রাহকদের লম্বা লাইন চোখে পড়ে। বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, পাত্রসায়র, ইন্দাস, বড়জোড়া, খাতড়া সব জায়গাতেই চিত্রটা ছিল একই রকম। ইন্দাসের রাষ্ট্রায়ত্ত এবং সমবায় ব্যাঙ্কগুলিতে ভিড় সামলাতে হিমসিম খেতে হয় পুলিশ ও ব্যাঙ্কের কর্মীদের।ব্যাঙ্কগুলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এ দিন যাঁরা টাকা তুলতে এসেছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগই পেনশনভোগী।

পাত্রসায়রের কাঁকরডাঙা মোড়ের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখা যায়, গ্রাহকদের লাইন চলে এসেছে রাস্তার মোড়ে। সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। গ্রাহকেরা যাতে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়ান, সেদিকে নজর রাখছেন পুলিশকর্মীরা। সবক’টি ব্যাঙ্কেই স্যানিটাইজ়ার রাখা ছিল। ইন্দাস থানার ওসি বিদ্যুৎ পাল জানান, এই পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্কে ভিড় হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই পুলিশকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছিল।

ইন্দাসের বাসিন্দা পেনশনভোগী অমলেন্দু পাঁজা বলেন, ‘‘শুনেছিলাম প্রবীণ নাগরিকদের পেনশন বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু কী ভাবে সেই সাহায্য পাব, জানতে পারিনি। বাধ্য হয়ে ব্যাঙ্কে লাইন দিয়েছি।’’ বিষ্ণুপুরে এনসিসি অফিসের সামনে দেখা যায়, সেখানে ব্যাঙ্কে আসা গ্রাহকদের রোদ থেকে বাঁচাতে টাঙানো হয়েছে সামিয়ানা। খাতড়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে এ দিন সকাল থেকেই গ্রাহকদের লম্বা লাইন দেখা যায়। অনেক ব্যাঙ্কের সামনেই এক মিটার দূরত্বে দাগ কেটে দেওয়া হয়েছিল। একটি ব্যাঙ্কের আধিকারিক জানান, সকাল ৯টা থেকেই সেখানে লাইন পড়েছে। গেটের সামনে ‘স্যানিটাইজ়ার’ রাখা হয়েছে। হাত ধুয়ে ব্যাঙ্কে ঢুকছেন গ্রাহকেরা। পাম্প মোড়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে।

Coronavirus in West Bengal Bank Social Distancing
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy