Advertisement
E-Paper

চক্রান্ত হচ্ছে, পুলিশে দাবি সুজয়ের

তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে দলেরই কিছু কর্মী অনশনে বসেছিলেন। এ বার নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলির তদন্ত চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন জানালেন পুরুলিয়ার সেই জেলা তৃণমূল নেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৬ ০০:০৩
অভিযোগপত্রের এই প্রতিলিপি প্রচার করা হচ্ছে।—নিজস্ব চিত্র

অভিযোগপত্রের এই প্রতিলিপি প্রচার করা হচ্ছে।—নিজস্ব চিত্র

তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে দলেরই কিছু কর্মী অনশনে বসেছিলেন। এ বার নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলির তদন্ত চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন জানালেন পুরুলিয়ার সেই জেলা তৃণমূল নেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে দাবি করে দলেরই জেলার শীর্ষ দুই নেতার দিকে অভিযোগের আঙুলও তুলেছেন সুজয়বাবু। এই ঘটনায় আরও একবার জেলা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এল।

পুঞ্চার বাসিন্দা সুজয়বাবু জেলা পরিষদে তৃণমূলের দলনেতা হওয়ার পাশাপাশি পূর্ত বিভাগের কর্মাধক্ষ্য এবং জেলা পরিবহণ কমিটির সদস্য। পুঞ্চার তৃণমূল কর্মীদের একাংশ দলের পুরনো এই নেতাকেঅপসারণের দাবিতে পুঞ্চায় তৃণমূল কার্যালয়ের বারান্দায় অনশনে বসেছিলেন। রীতিমতো পোস্টার সাঁটিয়ে সুজয়বাবুর বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং গুন্ডাগিরির অভিযোগ তুলেছিলেন এক সময় ওই নেতারই অনুগামী হিসাবে পরিচিত অনশনরত কর্মীরা।

অনশনের চার দিনের মাথায় জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো পুঞ্চায় গিয়ে ওই কর্মীদের হাতে সরবতের গ্লাস তুলে দিয়ে অনশন ভাঙান। তাঁদের আবেদন রাজ্য নেতৃত্বকে জানানোর আশ্বাসও দেন সভাধিপতি।

এরই পাল্টা হিসাবে গত শুক্রবার (১৫ জুলাই) পুঞ্চা থানার ওসি-র মাধ্যমে জেলার পুলিশ সুপারকে লিখিত একটি আবেদন জানান সুজয়বাবু। তাতে তিনি অভিযোগ করেছেন, জেলা তৃণমূলের সর্বোচ্চ দুই নেতার নির্দেশে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে তাঁর সম্মানহানি করা হয়েছে। নাম না নিলেও সুজয়বাবুর ইঙ্গিত সভাধিপতি এবং জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর দিকেই বলে মনে করছেন দলের জেলা নেতৃত্বের বড় অংশ।

সুজয়বাবু আবেদনে অভিযোগ করেছেন, ওই দুই সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশে পুঞ্চা ব্লকের সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি-র কিছু কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে এলাকার কিছু তৃণমূল কর্মী, যাঁরা গত নির্বাচনে দলের বিরুদ্ধাচারণ করেছেন, তাঁরা একযোগে তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা করেছেন। অভিযোগপত্রে তিনি বেশ কয়েক জন তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিজেপি কর্মীর নামও লিখেছেন।

শেষে তাঁর আবেদন, যাঁরা তাঁর সম্মানহানি ও ব্ল্যাকমেল করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং তাঁর নিজের বিরুদ্ধেও তদন্ত হোক। অভিযোগপত্রের প্রতিলিপি পুলিশ সুপারের পাশাপাশি দলের জেলা সভাপতি এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীকে পাঠানো হয়েছে বলে সুজয়বাবু জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দলে পুরনো কর্মী-নেতারা স্থান পাচ্ছেন না। একে একে সবাইকে বার করে দেওয়া হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে এই চক্রান্ত সহজে মেনে নেব না।’’

শান্তিরামবাবু এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সুজয়বাবুর বিরুদ্ধে যাঁরা অভিযোগ এনে অনশনে বসেছিলেন, তাঁরা সকলেই পুঞ্চা এলাকার তৃণমূল কর্মী। তাঁদের মধ্যে অনেকেই এক সময় তাঁর ঘনিষ্ঠ এবং অনুগত ছিলেন। ফলে তাঁদের অভিযোগের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে।’’ তাঁর দাবি, সুজয়বাবু দলে গণতন্ত্র মানেন না। সকলের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। যাঁরাই তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন, তাঁদের তিনি দল থেকে বার করে দেওয়া হল বলে লিফলেট দেন। জেলা সভাপতির মন্তব্য, ‘‘এ ভাবে কাউকে দল থেকে বার করে দেওয়া যায় না। দল কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়! সবার মতকে গুরুত্ব দিতে হবে। তবে, তিনি পুলিশে অভিযোগ জানাতেই পারেন।’’

জেলা সভাপতির সুরেই সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো বলেন, ‘‘সুজয়বাবু আমাদের নামে চক্রান্তের অভিযোগ এনেছেন। অথচ, পুঞ্চায় চার দিন ধরে কর্মীরা অনশন করছিলেন। উনি কিন্তু মেটাতে পারেননি। কর্মীদের শারীরিক অবস্থার অবনতির কথা ভেবে আমাকে ওখানে গিয়ে অনশন ভাঙাতে হয়েছিল।’’ তাঁর সংযোজন, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সব খবর রাখেন, সে কথা সুজয়বাবু যেন মনে রাখেন। যদি উনি কিছু না করে থাকেন, তা হলে ভয় পাওয়ারও কারণ নেই।

অনশনে বসা তৃণমূল কর্মী মনোরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের আবার দাবি, সুজয়বাবুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির যাবতীয় প্রমাণ তাঁরা খোদ দলনেত্রীকেই দিয়ে এসেছেন।

Manbazar Corruption Allegation TMC Sujoy Bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy