দু’দিন আগেই তৃণমূলের গড়ে গিয়ে পাঁচ বছর ধরে বন্ধ থাকা পোড়ো পার্টি অফিসে দাঁড়িয়ে দলীয় পতাকা তুলে সকলকে চমকে দিয়েছিল সিপিএম। শুধু তাই নয়, নানুরের অন্যত্রও সাংগঠনিক নড়চড়া শুরু করতে দেখা যাচ্ছে সিপিএমকে। বিধানসভা ভোটের এমনই এক আবহে এ বার সিপিএম করার ‘অপরাধে’ দীর্ঘদিন গ্রামছাড়া হয়ে থাকার পরে সম্প্রতি এলাকায় ফের এক দলীয় কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠল শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
রবিবার সকালে নানুরের বালিগুনি গ্রামের ওই ঘটনায় জখম সিপিএম কর্মী বাদল শেখের চিকিৎসা চলছে নানুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মারের চোটে তাঁর মাথা ফেটে গিয়েছে। নানুরের সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, তৃণমূলের চাপে ওই এলাকার দলীয় কর্মী-সমর্থকদের অনেকে দল ছাড়লেও বাদল শেখ এখনও দলের সঙ্গেই যুক্ত। গ্রামছাড়া ওই কর্মী এলাকায় ফিরেও শাসকদলের হুমকির মুখে নতি স্বীকার না করে দলের হয়ে কাজ করছিলেন বলেই তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে সিপিএমের অভিযোগ। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। উল্টে, আক্রান্ত সিপিএম কর্মীর বিরুদ্ধেই পাল্টা মারধরের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল।
ঘটনা হল, এই চাপান-উতোর অবশ্য ওই গ্রামে নতুন নয়। একসময় ওই গ্রাম তথা সংশ্লিষ্ট উচকরণ পঞ্চায়েত ছিল সিপিএমের দখলে। সে সময়ে প্রায়ই তাদের কর্মীদের মারধরের অভিযোগে সরব হয়েছে তৃণমূল। তাদের বহু কর্মী-সমর্থককে দিনের পর দিন গ্রামছাড়া থাকতে হয়েছে বলেও অভিযোগ। এখনকার মতোই সিপিএম নেতৃত্বও তখন বর্তমান শাসকদলের কায়দায় সমস্ত দায় ঝেড়ে তৃণমূলের ঘাড়েই যাবতীয় দোষ চাপিয়েছে। বর্তমানে ওই পঞ্চায়েত তথা গ্রামটি রয়েছে তৃণমূলের দখলে। চাপে পড়ে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা অনেকেই তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন। ওই চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি বাদল শেখ। এ দিন তাঁকেই মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কর্মী হিসাবে পরিচিত স্থানীয় মুস্তফা শেখ এবং ইছাই শেখের বিরুদ্ধে।
এ দিন জখম বাদল শেখ অভিযোগ করেন, তৃণমূলের লোকেরা তাঁকে বারবার সিপিএম ছেড়ে তাদের দলে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। তাঁর দাবি, ‘‘রাজি না হওয়ায় এর আগেও আক্রান্ত হয়েছি। থানায় অভিযোগও করেছিলাম। কিন্তু কোনও কাজ না হওয়ায় চার বছর আমাকে গ্রামছাড়া থাকতে হয়েছে। কয়েক মাস আগে বাধ্য হয়ে ওদের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ প্রত্যাহার করে তবেই গ্রামে ফিরতে পেরেছি।’’ তাঁর অভিযোগ, এ দিন মাঠ থেকে ঘাস কেটে বাড়ি ফেরার পথে ওই দুই তৃণমূল কর্মী মারধর করে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেন। সিপিএম করা যাবে না বলে শাসানিও দেয়। ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে মুস্তফা শেখরা পাল্টা দাবি করেছেন, বাদলই আচমকা তাঁদের উপরে লাঠি হাতে চড়াও হয়। এখন তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।
নানুরের স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আনন্দ ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘ওই এলাকায় আমাদের সংগঠন বাড়ছে। তাই তৃণমূল দিশেহারা হয়ে সন্ত্রাস করছে।’’ ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল নেতৃত্বও। নানুরের তৃণমূল প্রার্থী গদাধর হাজরার দাবি, ‘‘ওই গ্রামে সিপিএমের কোনও সংগঠনই নেই। ভোটের মুখে হাওয়া পালে টানতে মিথ্যা নাটক করছে।’’ দু’পক্ষের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy