Advertisement
E-Paper

বুনো শুয়োরের হামলা এ বার সারেঙ্গায়, মৃত্যু যুবকের

বাসিন্দাদের দাবি, হঠাৎ একটি বুনো শুয়োর নদীর দিক থেকে উঠে এসে অতর্কিতে তাঁর উপরে হামলা চালায়। তিনি চিৎকার শুরু করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৯ ০৬:২৮
হাসপাতালে বেলাটিকরি গ্রামের যুবক মিলন মান্ডি। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে বেলাটিকরি গ্রামের যুবক মিলন মান্ডি। নিজস্ব চিত্র

জমি দেখছিলেন। হঠাৎই কোথা থেকে একটি শুয়োর তেড়ে গিয়ে গুঁতো মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। শুয়োরকে ঠেকানোর চেষ্টা চালান যুবকটি। কিন্তু, বেশিক্ষণ যুঝতে পারেননি। ততক্ষণে শুয়োরটি দাঁত বসিয়ে ক্ষতবিক্ষত দেয় মিলন মান্ডি (২১) নামের ওই যুবককে। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে অন্য এক যুবক কালাচাঁদ মুর্মুও চোট পান। গ্রামবাসীরা তেড়ে গেলে শুয়োরটি পালায়। কিন্তু, বাঁচানো যায়নি মিলনকে। তাঁর সঙ্গে থাকা একটি কুকুরকেও মেরে ফেলে শুয়োরটি। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ এমনই কাণ্ড ঘটেছে সারেঙ্গা থানার গুনিয়াদা গ্রামে।

পুলিশ জানায়, মৃত মিলনের বাড়ি গুনিয়াদা গ্রামেই। সারেঙ্গা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত বলে জানান। আহত কালাচাঁদের চিকিৎসা সারেঙ্গা স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই চলছে। ডিএফও (বাঁকুড়া দক্ষিণ) দেবাশিস মহিমা প্রধান বলেন, ‘‘বুনো শুয়োরের হামলায় সারেঙ্গায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি। তদন্ত করে বনবিভাগের নিয়ম অনুযায়ী মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’ এসডিপিও (খাতড়া) বিবেক বর্মা বলেন, ‘‘সারেঙ্গার ওই ঘটনায় একটি জেনারেল ডায়েরি করা হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সকালে গুনিয়াদা গ্রামে কংসাবতী নদী লাগোয়া ধান জমিতে চাষবাসের কাজ দেখতে গিয়েছিলেন মিলন। বাসিন্দাদের দাবি, হঠাৎ একটি বুনো শুয়োর নদীর দিক থেকে উঠে এসে অতর্কিতে তাঁর উপরে হামলা চালায়। তিনি চিৎকার শুরু করেন। সেখান থেকে কিছুটা দূরেই ছিলেন কালাচাঁদ। তাঁর বাড়িও ওই গ্রামেই। তিনি ছুটে যান। এ দিন দুপুরে সারেঙ্গা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বসে কালাচাঁদ বলেন, ‘‘মিলনের চিৎকার শুনে আমি সেই দিকে ছুয়ে যাই। গিয়ে দেখি, মিলন মাটিতে শুয়ে কাতরাচ্ছে। তাকে ছেড়ে একটা কুকুরের উপরে তখন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল শুয়োরটি। কুকুরটিকে সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলে শুয়োরটি। তারপরেই ফের শুয়োরটা মিলনকে হামলা করে। আমি শুয়োরটাকে ঠেলে সরানোর চেষ্টা করি। আমার উপরেও দাঁত বসিয়ে দেয়।’’ ততক্ষণে আরও লোকজন লাঠি নিয়ে সেখানে ছুটে এসেছিলেন। ভিড় দেখে দুই যুবককে ছেড়ে শুয়োরটি নদীর দিকে দৌড় লাগায়।

সারেঙ্গার বিএমওএইচ বিশ্বরূপ সনগিরি বলেন, ‘‘ওই যুবকের নিম্নাঙ্গে জোরাল আঘাত করেছিল শুয়োরটি। পা-ও ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিল। প্রচণ্ড আঘাতেই ওই যুবকের মৃত্যু বলে মনে করা হচ্ছে।’’ দেহটি পরে ময়না-তদন্তের জন্য বাঁকুড়ার মর্গে পাঠানো হয়।

এই ঘটনায় এলাকায় শোক নেমে এসেছে। মিলনের বাবা সুনীল মান্ডি বলেন, ‘‘ছেলে জমিতে সে ভাবে যায় না। এ দিনই সে ধান জমি দেখতে মাঠে গিয়েছিল। যদি না যেত, তাহলে এ ভাবে তাকে হারাতে হত না।’’

মঙ্গলবার বিকালে খাতড়ার নারগাশোল গ্রামে মাঠ থেকে ফেরার পথে বাড়ির কাছে শুয়োর হামলায় জখম হন এক ব্যক্তি। তিনিও গুরুতর আহত হন। তারপরেই খাতড়া মহকুমারই আর একটি ব্লকে শুয়োর হামলায় যুবকের মৃত্যুতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। যদিও বন দফতর দাবি করেছে, বন কর্মীরা নজর রাখছেন। তবে, গ্রামবাসীকেও বাড়তি সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

সারেঙ্গার পিড়রগাড়ি রেঞ্জ আধিকারিক সঞ্জীব সাহা বলেন, ‘‘ওই এলাকায় গভীর জঙ্গল নেই। কিছু মানুষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে জঙ্গলে আগুন লাগিয়ে দেয়। তাতে ঝোপঝাড় কমে যাওয়ায় শুয়োরগুলি বিচ্ছিন্ন ভাবে বেরিয়ে চলে আসতে পারে।’’

মহকুমা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সাবধানের মার নেই। বাসিন্দারা এই সময়টা জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় একটু দল বেঁধে চলাফেরা করলেই ভাল। কেউ আক্রান্ত হলে অন্যেরা কিছু একটা তখন করে

উঠতে পারবেন।’’

Wild life Wild pig Forest Department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy