Advertisement
E-Paper

খরচ কেন বেশি, টাকা ফেরত চাই

বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষে সোনামুখীর সিপিএম বিধায়ক অজিত রায় এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে সাতটি সাব-মার্সিবল পাম্প বসানোর সিদ্ধান্ত নেন। তিনি স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে কাজের দায়িত্ব দেন। বরাদ্দ করা হয় প্রায় সাত লক্ষ টাকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:০৩

সিপিএম বিধায়কের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তৈরি করা প্রকল্পে লক্ষাধিক টাকা বাড়তি ব্যয় দেখানোর অভিযোগ উঠল বাঁকুড়ায়।

বাড়তি টাকা ওই সংস্থার কাছ থেকে আদায় করতে ব্লক প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিলেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক। এই ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছেন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। কারণ ওই সংস্থার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন জেলা সিপিএমের কয়েকজন নেত-কর্মী। যা নিয়ে কটাক্ষ শুরু করেছেন শাসক শিবিরের নেতারা।

বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষে সোনামুখীর সিপিএম বিধায়ক অজিত রায় এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে সাতটি সাব-মার্সিবল পাম্প বসানোর সিদ্ধান্ত নেন। তিনি স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে কাজের দায়িত্ব দেন। বরাদ্দ করা হয় প্রায় সাত লক্ষ টাকা।

কিন্তু, কাজ শেষ করার পরে ওই স্বেচ্ছ্বাসেবী সংস্থা প্রতিটি সাব-মার্সিবল পাম্প বসানোর জন্য ৯৯ হাজার ৯৯৯ টাকা খরচ হয়েছে বলে হিসেব (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) পেশ করে। যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সিপিএম থেকে বহিস্কৃত নেতা তথা বাঁকুড়া জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ই।

ডিসেম্বরে বাঁকুড়া জেলাশাসকের দফতরে তিনি এ নিয়ে অভিযোগপত্র জমা দেন। সুব্রতবাবু প্রশ্ন তোলেন, ‘‘সোনামুখীর সব জায়গায় মাটির নীচের জলস্তর সমান নয়। সে ক্ষেত্রে সাব-মার্সিবল বসানোর খরচও সমান হওয়ার কথা নয়। তা ছাড়া অনেক কম খরচেই পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি সাব-মার্সিবল বসায়। তাহলে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ক্ষেত্রে এত বেশি খরচ হল কী করে?’’

নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বিডিও (সোনামুখী) রিজওয়ান আহমেদকে তদন্তের নির্দেশ দেন। ব্লক অফিসের ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে গড়া কমিটি সাব-মার্সিবল বসানোর কাজ খতিয়ে দেখে খরচের একটি হিসেব তৈরি করেন।

প্রশাসন সূত্রে খবর, পুরো প্রকল্পে প্রায় ১ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা খরচের হিসেব ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বাড়তি দেখিয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

জেলাশাসক বলেন, “বিডিওকে আমি নির্দেশ দিয়েছি, বাড়তি টাকা ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।’’

বিডিও জানান, জেলাশাসকের নির্দেশ মতো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সুব্রতবাবু এ দিন বলেন, “জনগনের টাকা যাতে সঠিক ভাবে ব্যয় করা হয়, সেই উদ্দেশ্যেই জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। প্রশাসন তদন্ত করে পদক্ষেপ করায় সেই উদ্দেশ্য সফল।”

প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন, নিয়ম মোতাবেক বিধায়কেরা প্রতি অর্থবর্ষে সর্বোচ্চ আট লক্ষ টাকার কাজ স্বেচ্ছ্বাসেবী সংস্থাকে দিয়ে করাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বিধায়কের মনোনীত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকেই ওই কাজের ভার দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্য সেই নিয়মের কোনও ত্রুটি হয়নি।

ওই স্বেচ্ছ্বাসেবী সংস্থার সম্পাদক তথা সিপিএমের সোনামুখী দক্ষিণ এরিয়া কমিটির সদস্য মদন কারক দাবি করেন, “সাব-মার্সিবল বসানোর প্রকল্পের খরচের হিসেবে প্রশাসন গরমিল পেয়েছে বলে শুনিনি। প্রশাসনও এমন কিছু আমাদের জানানো হয়নি।”

সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য মনোজ চক্রবর্তী বলেন, “প্রশাসন যদি খরচের হিসেবে কোনও গরমিল খুঁজে পায়, তাহলে সংস্থার তরফেও একটি খরচের হিসেব করা হবে। সেখানে অমিল বেরিয়ে এলে, প্রশাসন যা নির্দেশ দেবে তা সংস্থা মেনে নেবে।”

গোটা ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। শাসকদলের সোনামুখীর পর্যবেক্ষক তথা তালড্যাংরার বিধায়ক সমীর চক্রবর্তীর দাবি, “সিপিএমের দুর্নীতি ফের এক বার প্রকাশ্যে এল। বরদাস্ত করা হবে না।”

সোনামুখীর পুরপ্রধান তথা তৃণমূলের অন্যতম জেলা কার্যকরী সভাপতি সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় অভিযোগ তুলেছেন, “বাম আমল থেকেই ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি নানা কাজ করছে। দুর্নীতি করার দীর্ঘদিনের অভ্যাস এখনও ছাড়তে পারছে না ওরা।”

সোনামুখীর বিধায়ক বলেন, ‘‘অভিযোগ ওঠার পরেই জেলাশাসককে বলেছিলাম যথাযথ তদন্ত করে সত্য তুলে আনতে। সংস্থাটি কোনও ত্রুটি করে থাকলে প্রশাসন পদক্ষেপ করুক। তবে প্রশাসনের তদন্তে কী পাওয়া গিয়েছে আমাকে তা জানায়নি।’’

এই ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি কী ধাক্কা খেল?

সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতির জবাব, “আমাদের বিধায়ক নিয়মের বাইরে গিয়ে কোনও কাজ করেননি। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিষয়ে বিশেষ জানি না। কেউ কোনও দুর্নীতি করে থাকলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।”

CPIM সিপিএম
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy