ডেঙ্গি আক্রান্ত এক যুবকের সন্ধান মিলল শুখা জেলা বলে পরিচিত পুরুলিয়াতেও। মঙ্গলবার রাতে পুরুলিয়া ১ ব্লকের লাগদা গ্রামের ওই যুবককে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত যুবকের নাম সৌরভ মুখোপাধ্যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অসুস্থ ওই যুবক পুরুলিয়া জেলাশাসকের দফতরের কর্মী। গত শুক্রবার তিনি জ্বরে অসুস্থ হন। পরের দিন তিনি শরীর দুর্বল লাগছে বলে বাড়ির লোকজনকে জানান। সৌরভের বাবা মানিকমণি মুখোপাধ্যায় জানান, শরীর দুর্বল লাগছে বলার পরেই ছেলেকে তাঁরা স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক চিকিৎসককে দেখান। তিনি প্রথমে কয়েকটি ওষুধ দেন। পরে কিছু লক্ষণ সন্দেহজনক হওয়ায় রক্ত পরীক্ষা করাতে বলেন ওই চিকিৎসক। তখন পুরুলিয়ায় একটি বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে রক্ত পরীক্ষা করানো হয়।
তাঁর কথায়, ‘‘রিপোর্টে ডেঙ্গির জীবাণুর সন্ধান পাওয়া যায়। নিশ্চিত হতে অন্য একটি ল্যাবরেটরি থেকেও পরীক্ষা কারানো হয়। পাশাপাশি কলকাতার একটি ল্যাবরেটরিতেও রক্তের নমুনা পাঠানো হয়। মঙ্গলবার দু’টি রিপোর্ট হাতে পাই। দেখা যায় যে এই দু’টি রিপোর্টেও ছেলের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণুর সন্ধান মিলেছে। তখন হাসপাতালে ভর্তি করি।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, যেহেতু আক্রান্তের রিপোর্ট বেসরকারি ল্যাবরেটরির তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও আক্রান্তের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন। হাসপাতাল সুপার শিবাশিস দাস বলেন, ‘‘ওঁর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। প্রয়োজনীয় সমস্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে।’’
এ দিকে হাসপাতালে আক্রান্ত যুবককে মশারির মধ্যে রাখা হয়েছে। পুরুলিয়া শহরের উপকন্ঠে লাগদা গ্রামে ডেঙ্গির জীবাণু মেলায় বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছে স্বাস্থ্য দফতর। কারণ ২০০৭ সালে এই লাগদা গ্রামেই ডেঙ্গির জীবাণুর সন্ধান মিলেছিল।
মঙ্গলবার রাতে আক্রান্ত যুবক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরেই বুধবার উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২) গুরুদাস পাত্রের নেতৃত্বে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল লাগদা গ্রামে যায়। তাঁরা আক্রান্তের বাড়ির চারপাশ ও গ্রামের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখেন। আক্রান্তের বাড়ির মধ্যেই বেশ কয়েকটি জায়গায় জমা জলে এডিস মশার লার্ভারও সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে ওই দলের সদস্যেরা জানিয়েছেন। দেখা যায় উঠোনে একটি সিমেন্টের ড্রামে জমা জলের মধ্যে কিলবিল করছে লার্ভা। গুরুদাসবাবু এবং এপিডেমোলজিস্ট সতীনাথ ভুঁইয়া বলেন, ‘‘ডেঙ্গি আক্রান্ত ওই যুবকের বাড়ির ভিতর জমা জলে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছে। যা বিপজ্জনক। আমরা ওই জল ফেলে দিয়েছি। সবাইকে জল যাতে না জমে সে ব্যাপারে সতর্ক করেছি।’’
স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা বাড়ির লোকজনকে সেই লার্ভা দেখিয়ে সতর্ক করেন। তাঁদের বলা হয়, কোনও ভাবেই তাঁরা যেন বাড়ির মধ্যে কোথাও জল জমতে না দেন। এলাকার স্বাস্থ্যকর্মীদেরও বলা হয় তাঁরা যেন গ্রামে বা এলাকায় প্রচার করেন কেউ বাড়িতে বা বাড়ির আশেপাশে বেশি দিন জল জমা করে না রাখেন। সেই সঙ্গে মশারি ব্যবহার করার কথাও সবাইকে জানাতে বলা হয়। পরে মানিকবাবু বলেন, ‘‘দু’-একদিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় সেই জলই জমেছে বাড়ির ওই ড্রামে।’’
পুরুলিয়ার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিল দত্ত বলেন, ‘‘লাগদা গ্রামের একজনের রক্তে ডেঙ্গির নমুনা পাওয়া গিয়েছে। আক্রান্তের চিকিৎসা চলছে। তবে এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। কিছু সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য আমরা বারবার বলছি। সেই সাবধানতা মেনে চলতে হবে। আর জ্বর হলেই নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, চলতি বছরে বা গত কয়েক বছরের মধ্যে এই জেলায় কোনও ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মেলেনি। তবে আমরা সবাই সতর্ক রয়েছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।’’