প্রাথমিক স্কুলে কুড়মালি ভাষায় পঠনপাঠনের দাবিতে সরব ছিল বিভিন্ন সংগঠন। এ বার প্রাথমিক স্কুলগুলিতে কুড়মালিতে পড়ানোর পরিকাঠামো কেমন, কতজন পড়ুয়া উৎসাহী, সেই খোঁজ নিতে নির্দেশ দিল প্রাথমিক শিক্ষা দফতর। সম্প্রতি রাজ্যের ডেপুটি ডিরেক্টর স্কুল এডুকেশন (গ্রামীণ প্রাথমিক) এই নির্দেশ দেন। সূত্রের খবর, রাজ্যের যে সব জেলায় কুড়মি সম্প্রদায়ের বসবাস, সেখানে এই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।
সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। অগস্টের গোড়ায় আবার আদিবাসী দিবস। এখন কুড়মালি শিক্ষায় আগ্রহ দেখিয়ে রাজ্য সরকার আদিবাসী-কুড়মি ভারসাম্য বজায় রাখতে চাইছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের মত।
নির্দেশিকা আসতেই তৎপরতা শুরু হয়েছে। পুরুলিয়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক জেলার সব অবর প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকদের নির্দেশিকা পাঠিয়ে জানতে চেয়েছেন, কোন চক্রে কত জন পড়ুয়া কুড়মালিতে পঠনপাঠন করতে চায়, কুড়মালি ভাষা জানা এবং সেই ভাষায় পঠনপাঠন করাতে আগ্রহী শিক্ষকই কত জন আছেন? জেলা সেই তথ্য পাঠাবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) কানাইলাল বাঁকুড়া বলেন, ‘‘জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে কুড়মালি ভাষায় পঠনপাঠন চালুর দাবিতে বিভিন্ন সময়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। তা যথাস্থানে পাঠানো হয়। বর্তমানে আমাদের কাছে জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে কুড়মালি ভাষায় পঠনপাঠনের জন্য উপযোগী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। আমরা তা যথাস্থানে পাঠিয়ে দেব।’’
ঝালদা ৩ চক্রের স্কুলগুলিকে নিয়ে শনিবার এ বিষয়ে বৈঠক হয়। ওই চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সিদ্ধার্থ মাহাতো বলেন, ‘‘ওই স্কুলগুলিতে কত পড়ুয়া কুড়মালিতে পড়তে চায়, সে বিষয়ে অভিভাবকদের হলফনামা দিতে হবে। অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ রয়েছে কি না তা-ও জানাতে হবে।’’ মানবাজার ১ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সুদীপ বেরা জানান, তথ্য পেলেই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দফতরে পাঠাবেন।
সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিছু কলেজে কুড়মালি ভাষায় পঠনপাঠন আগেই চালু হয়েছে। তবে স্কুল স্তরে এখনও চালু হয়নি। বিভিন্ন সময়ে কুড়মালি ভাষায় পঠনপাঠন চালুর দাবিতে সরব হয়েছে কুড়মি সমাজের সংগঠনগুলি।
শনিবার এ নিয়ে বৈঠকে বসে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। সংগঠনের মুখ্য উপদেষ্টা অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘দীর্ঘ সংগ্রামের পরে মুখ্যমন্ত্রী কুড়মালি ভাষাকে রাজ্য ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তারপরেই কুড়মালি ভাষায় পঠনপাঠনের এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। আমাদের অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েকে কুড়মালিতে পঠনপাঠনের জন্য শিক্ষকদের হলফনামা দেবেন। আগামী দিনে যাতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরেও কুড়মালি ভাষা চালু করা হয়, সে জন্য আমাদের আন্দোলন চলবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)