E-Paper

আতঙ্ক, তবে কাশ্মীর ফের যাবেন শুভময়

বোলপুরের ব্যবসায়ী শুভময় মিত্র ৪০ জনের সঙ্গে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছেন। ২২ তারিখ দুপুরে পহেলগামে পৌঁছেছিলেন।

দয়াল সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:৫১
পাহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদীদের হাতে নিহত পর্যটকদের শ্রদ্ধা জানিয়ে মৌন মিছিলের

পাহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদীদের হাতে নিহত পর্যটকদের শ্রদ্ধা জানিয়ে মৌন মিছিলের শেষে প্রশাসন ভবন সংলগ্ন শহীদ বেদীতে মোমবাতি নিবেদন। সিউড়ির রাস্তায় বুধবার সন্ধ্যায়।

কাশ্মীরের অনন্তনাগের পহেলগামে মঙ্গলবার দুপরে পর্যটকদের উপরে জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত হয়েছে বৈসরন উপত্যকা। ওই হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নির্মম ওই হত্যাকাণ্ডে কাশ্মীর ভ্রমণে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বিশেষ করে যাঁরা এই মুহূর্তে ভূস্বর্গে বেড়াতে গিয়েছেন, আতঙ্ক তাঁদের অনেক বেশি।

বীরভূম থেকেও বেশ কয়েকটি পরিবার কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছেন। ঘটনার সময় তাঁদের কেউ ঘটনাস্থলের ৪-৫ কিলোমিটারের মধ্যেই ছিলেন। কেউ মাত্র এক দিন আগে পহেলগামের হোটেল ছেড়ে গুলমার্গে এসেছেন। অনেকেই চাইছেন দ্রুত ফেরত আসতে। সেনা ও স্থানীয়দের উপর আস্থা রেখে কেউ আবার চাইছেন সফর শেষ করে আসতে। কেউ আবার প্রাকৃতিক কারণে কাশ্মীর ভ্রমণ সূচি বদলানোকে ঈশ্বরের আর্শীবাদ মনে করেছেন।

বোলপুরের ব্যবসায়ী শুভময় মিত্র ৪০ জনের সঙ্গে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছেন। ২২ তারিখ দুপুরে পহেলগামে পৌঁছেছিলেন। যখন হামলার ঘটনাট ঘটে, শুভময় তাঁর কয়েক জন বন্ধুবান্ধব-সহ হোটেল থেকে বৈসরন উপত্যকার দিকে হাঁটছিলেন। বুধবার শুভময় ফোনে বললেন, ‘‘ওই উপত্যকাকে মিনি সুইৎজ়ারল্যান্ড বলে। তাই যাচ্ছিলাম। সবে দেড়-দুই কিমি গিয়েছি। এমন সময়ই ঘটে ঘটনাটা। হঠাৎই সাইরেন বাজতে শুরু করে। দোকানপাট বন্ধ হতে থাকে। স্থানীয় মানুষ আমাদের বলতে থাকেন, উপরে ‘গুলি চলছে, হোটেলে চলে যাও’। ভয়ে উল্টো মুখে হোটেলের দিকে ছুটতে শুরু করি।’’ শুভময় জানাচ্ছেন, পর পর সেনার গাড়ি আসতে থাকে। চলে আসে একের পর এক অ্যাম্বুল্যান্স। উপরে উড়ছে হেলিকপ্টার। সিআইএসএফের জওয়ানেরা ৫-৭ মিনিটের মধ্যেই পুরো জায়গা ঘিরে ফেলেন।

একই রকম আতঙ্কিত সিউড়ি থেকে কাশ্মীর বেড়াতে যাওয়া সিউড়ির ১১ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি চন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন স্বামী মৃন্ময় এবং ছেলে ধ্রুবজ্যোতি এবং সিউড়ি থেকে যাওয়া আরও একটি পরিবার। তাঁরা ২১ তারিখ পহেলগামে হোটেলে ছিলেন। যে দিন হামলা হল, সেই মঙ্গলবারই গুলমার্গের দুধপাথরিতে বেড়াচ্ছিলেন। কলকাতা থেকে ওই ঘটনার খবর দেন তাঁর ভাই। এ দিন সকালে ফোনে চন্দ্রাণী বলেন, ‘‘ভীষণ আতঙ্কিত। খবর পাওয়ার পরেই হোটেলে ফিরি। ছেলেদের বেরোতে দিইনি। শুক্রবার ফেরার টিকিট। ভালয় ভালয় ফিরি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এ বার যা ঘটল, কাশ্মীরে ঘুরতে যাওয়ার কথা অন্য কাউকে বলার সাহস দেখাতে পারব না!’’

জম্মু-কাশ্মীরের রামবান জেলার ধর্মকুণ্ড গ্রামে হড়পা বানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এলাকা, সেতু। সেই জন্য কাশ্মীর যাওয়ায় বাধার মুখে পড়েছিল দুবরাজপুর থেকে সস্ত্রীক পাঁচ বন্ধুর একটি দল। সফরসূচি বদলে হিমাচলে চলে গিয়েছেন সকলে। সেটা আর্শীবাদ স্বরূপ মনে করছেন দলের অন্যতম সদস্য কৌশিক ওঝা, রামকৃষ্ণ মণ্ডল। তাঁরা বলছেন, ‘‘২২ তারিখেই পহেলগামে হোটেল বুক করা ছিল। প্রকৃতিক বিপর্যয় বাঁচিয়ে দিয়েছে।’’ ওঁদের স্ত্রী কেয়া ওঝা, তপতী মণ্ডলের কথায়, ‘‘যে ভাবে রক্তাক্ত হয়েছে উপত্যকা, অদূর ভবিষ্যতে কাশ্মীর যাওয়ার ইচ্ছে আর রইল না।’’

শুভময় অবশ্য বলছেন, ‘‘আমরা ফের কাশ্মীর আসব। স্থানীয় মানুষ ও সেনাবাহিনী খুবই সাহায্য করছে আমাদের।’’ শুভময় এ কথা বললেও যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে সামনের ছুটির মরসুমে কাশ্মীর যাওয়ার পরিকল্পনা থেকে অনেকেই সরতে শুরু করেছেন বলে জানাচ্ছে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সংস্থা। সিউড়ির দীপশঙ্কর বিষ্ণু, রামপুরহাটের তড়িৎশেখর দত্ত বলেন, ‘‘কাশ্মীরের বদলে অন্য হিল স্টেশনের খোঁজ করছেন মানুষজন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Suri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy