Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ইলামবাজারে শুরু ধর্মরাজ পুজো

ধর্মরাজ এবং সিদ্ধেশ্বর পুজো উপলক্ষে ইলামবাজারের দেবীপুর এবং লাগোয়া বারুইপুর গ্রামে শুরু হল দু’দিনের চড়ক মেলা। শুক্রবার মেলা শুরু হয়। লাগোয়া দুই গ্রামের পুজো উপলক্ষে স্থানীয় মদি পুকুরে পাড়ে বসছে চড়ক মেলা। প্রথম দিনেই দেবীপুর গ্রামের মদি পুকুর পাড়ে ঢল নামে আশেপাশের বহু গ্রামের মানুষের। ধর্মরাজ ও সিদ্ধেশ্বর পুজোর দুই সেবাইত শ্রীধরচন্দ্র পাল এবং বঙ্কিমচন্দ্র মুখোপাধ্যায় শোনালেন ধর্মঠাকুরের পুজো শুরুর সেই লোককথা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ইলামবাজার শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০১:৫২
Share: Save:

ধর্মরাজ এবং সিদ্ধেশ্বর পুজো উপলক্ষে ইলামবাজারের দেবীপুর এবং লাগোয়া বারুইপুর গ্রামে শুরু হল দু’দিনের চড়ক মেলা। শুক্রবার মেলা শুরু হয়। লাগোয়া দুই গ্রামের পুজো উপলক্ষে স্থানীয় মদি পুকুরে পাড়ে বসছে চড়ক মেলা। প্রথম দিনেই দেবীপুর গ্রামের মদি পুকুর পাড়ে ঢল নামে আশেপাশের বহু গ্রামের মানুষের।

ধর্মরাজ ও সিদ্ধেশ্বর পুজোর দুই সেবাইত শ্রীধরচন্দ্র পাল এবং বঙ্কিমচন্দ্র মুখোপাধ্যায় শোনালেন ধর্মঠাকুরের পুজো শুরুর সেই লোককথা। তিনশো বছর আগে রাজা লাউ সেন এই দুই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। সেই দিন থেকে পুজো হয়ে আসছে। লোককথা মতো, অজয় নদের এ পারে রাজত্ব ছিল লাউ সেনের। ও পারে ছিল রাজা ইছাই ঘোষের সাম্রাজ্য। ইছাই ঘোষের সাম্রাজ্য দখলের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে লাউ সেন চেষ্টা চালাতেন। কিন্তু নিজের সেনা খুব বেশি না থাকার কয়েক পিছিয়ে এসেছিলেন।

শ্রীধরচন্দ্রবাবুর কথায়, ‘‘ধর্মরাজের ভক্ত লাউ সেন এক সময় পুজোর্চনা শুরু করেন। বাপ, ঠাকুরদা-র কাছে শুনেছি ইলামবাজারের বারুইপুর এলাকায় সেই উপলক্ষে যজ্ঞ এবং পুজোর আয়োজন হয়। সিদ্ধিলাভের পরে তিনি যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। ধর্মরাজের মাহাত্ম্যে কম সেনা দিয়েই ইছাই ঘোষকে যুদ্ধে হারাতে পেরেছিলেন লাউ সেন।’’তারপর থেকেই ধর্মরাজের পুজো এবং বারুইপুরে সিদ্ধেশ্বর পুজা জনপ্রিয়তা পায়। রাজা গিয়েছেন। রাজপাটও গিয়েছে। কিন্তু ওই এলাকার শতাব্দী প্রাচীন পুজো আজও অমলিন। দু’দিনের এই পুজোর প্রথম দিন বারুইপুরের যতনী পুকুরে ধর্মরাজ এবং সিদ্ধেশ্বরের স্নান মেলা বসে। পরের দিন দেবীপুরের মদিপুকুর পাড়ে মিলন মেলার আয়োজন করেন উদ্যোক্তারা।

ধর্মমঙ্গল ধর্মরাজের মাহাত্ম্যসূচক কাব্য। শ্রেষ্ঠ কবি ঘনরাম চক্রবর্তী। ধর্ম অনার্য দেবতা এবং সূর্য কিংবা বুদ্ধের প্রতিরূপ হিসেবে কল্পিত। প্রাচীন বঙ্গের রাঢ় অঞ্চলে এঁর উদ্ভব ও পূজা সীমিত ছিল। গবেষকদের মতে, কোনও আর্য পুরাণেই ধর্মের কথা পাওয়া যায় না। সতেরো শতকের পরে যুগ পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে ধীরে ধীরে পৌরাণিক ধর্মাদর্শের সঙ্গে মিশে ধর্মঠাকুর পৌরাণিক দেবতার পর্যায় ভুক্ত হন। ধর্মমঙ্গলের প্রচলিত কাহিনি আদতে লাউ সেনের সংগ্রামী জীবনের কথা। রামপালের পুত্র যখন গৌড়ের রাজা তখন তাঁর শ্যালক মহামদ পাল ছিলেন মন্ত্রী। মহামদের ভগ্নী রঞ্জাবতীর সঙ্গে বৃদ্ধ সামন্তরাজ কর্ণসেনের বিবাহ হয়। এদের পুত্রই লাউসেন। লাউসেনের সঙ্গে মহামদ ও ইছাই ঘোষের বিভিন্ন সময়ে দ্বন্দ্ব। তাতে ধর্মের কৃপায় লাউ সেনের বিজয়। ধর্মের সঙ্গে বিবাদের ফলে মহামদের কুষ্ঠব্যাধি। লাউসেনের অনুরোধে ধর্ম কর্তৃক ব্যাধির নিরাময়। সব শেষে মঙ্গলকাব্যের ধারা মেনে ধর্ম পুজোর মধ্য দিয়ে কাহিনীর শেষ। কাব্যটি বীররস প্রধান।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রতিবারই মেলায় ভিড় হয়। মেলা শুরুর দিনে দেবীপুরের মদি পুকুরের মধ্যে চড়ক ডোবানো থাকে। পুকুরে নেমে বাসিন্দারা চড়কের খোঁজ করেন। চড়ক পাওয়ার পরে প্রথা মেনে দু’দিন ধরে চলে পূজার্চনা। আত্মীয়-স্বজনদের পাশাপাশি আশেপাশের একাধিক গ্রামের মানুষ জন শরিক হন ওই পুজোয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Illambazar Dharmaraj puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE