Advertisement
E-Paper

রাস্তায় বাধা, করা হল না ডায়ালিসিস 

সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে পথে নাজেহাল হল দুই জেলা। অবরোধে আটকে গেল বাস। থমকে গেল ট্রেন। কেউ অনেক ঘুরপথে কোনও রকমে হাজিরা দিলেন অফিসে। কেউ চিকিৎসা করাতে না পেরে ফিরে এলেন। 

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৩৫
আটকে: ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ও ৯ নম্বর রাজ্য সড়কের সংযোগস্থলে অবরোধ। বাঁকুড়া শহরের হেভিরমোড়ে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

আটকে: ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ও ৯ নম্বর রাজ্য সড়কের সংযোগস্থলে অবরোধ। বাঁকুড়া শহরের হেভিরমোড়ে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে পথে নাজেহাল হল দুই জেলা। অবরোধে আটকে গেল বাস। থমকে গেল ট্রেন। কেউ অনেক ঘুরপথে কোনও রকমে হাজিরা দিলেন অফিসে। কেউ চিকিৎসা করাতে না পেরে ফিরে এলেন।

অলচিকিতে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা এবং আরও কয়েকটি দাবিতে এ দিন রেল ও রাস্তা অবরোধের ডাক দিয়েছিল আদিবাসীদের সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল। ভোর থেকেই পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া, রঘুনাথপুর, কাশীপুর, সাঁতুড়ি, বরাবাজার, বোরো, মানবাজার, কোটশিলা, হুড়ার বিভিন্ন এলাকায় পথ অবরোধ করেন সংগঠনের সদস্যেরা। ধামসা-মাদল, তির-ধনুক নিয়ে বিকেল পর্যন্ত রাস্তায় বসে পড়েছিলেন তাঁরা। অবরোধ তুলতে পুলিশ বা প্রশাসনের সক্রিয়তা চোখে পড়েনি বলে দাবি বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের।

পুরুলিয়ায় এমনিতেই সরকারি বাসের সংখ্যা কম। অবরোধের আগাম ঘোষণা থাকায় এ দিন অনেক বেসরকারি বাসও রাস্তায় নামেনি। পুরুলিয়ার বাসমালিক সমিতির সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত জানান, জেলার ৪৮টি রুটে মেরেকেটে ৩০ শতাংশ বাস চলেছে। তবে ট্রেকার, অটো ও ছোট গাড়ি চলেছে। যাত্রীদের অভিযোগ, সুযোগ বুঝে চড়া ভাড়া হেঁকেছে সেগুলি।

সকাল থেকেই আদ্রা ডিভিশনের শালবনি স্টেশনে অবরোধ শুরু হয়েছিল। পরে অবরোধ হয়েছে বাঁকুড়ার ছাতনা স্টেশনে। এর জেরে আদ্রা-মেদিনীপুর শাখায় ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ডিভিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, দুই স্টেশনে অবরোধের জেরে বাতিল হয়েছে শালিমার-ভোজুডি আরণ্যক এক্সপ্রেস, শালিমার-আদ্রা রাজ্যরানি এক্সপ্রেস, ঝাড়গ্রাম-পুরুলিয়া প্যাসেঞ্জার, খড়গপুর-আসানসোল প্যাসেঞ্জার, খড়গপুর-হাটিয়া প্যাসেঞ্জার-সহ ন’টি ট্রেন। যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে পুরুলিয়া-হাওড়া এক্সপ্রেস, রাঁচী-হাওড়া এক্সপ্রেস-সহ ১৪টি ট্রেনের।

মেদিনীপুর যাওয়ার কথা ছিল কাশীপুরের ব্যবসায়ী অনিল মাহাতোর। স্টেশনে এসে দেখেন ট্রেন বন্ধ। বলেন, ‘‘বাসে করে আদ্রা থেকে মেদিনীপুর যাওয়ার উপায় নেই। বাধ্য হয়েই বাড়ি ফিরে এসেছি।’’

এ দিন দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালিসিস করানোর কথা ছিল আদ্রার স্বপনকুমার বক্সী ও রাজেশ পাণ্ডার। একটি গাড়ি ভাড়া করে তাঁরা রওনা হয়েছিলেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, রঘুনাথপুর পৌঁছতেই এক পুলিশকর্মী জানান, হরিডিতে পুরুলিয়া-বরাকর রাস্তায় অবরোধ চলছে। যাওয়া যাচ্ছে না। অগত্যা অন্য রাস্তা নেন দু’জনে। ভেবেছিলেন, রঘুনাথপুর থেকে বাঁকুড়া হয়ে দুর্গাপুরে চলে যাবেন। তাতেও বিপত্তি! বাঁকুড়ার রাস্তা ধরে কিছুটা যাওয়ার পরেই বেড়োর কাছাকাছি অবরোধে আটকে পড়েন তাঁরা। রাজেশ বলেন, ‘‘ডায়ালিসিস করানো খুবই জরুরি ছিল। অনেক বার সে কথা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু অবরোধকারীরা কিছুই শুনতে চাননি।’’ হাল ছেড়ে ফিরে আসতে হয়েছে তাঁদের।

রঘুনাথপুরের বাসিন্দা দুর্গাদাস ঘটক বাঁকুড়ায় মৎস্য বিভাগের আধিকারিক। আদ্রা থেকে ট্রেনে বাঁকুড়া যান। তিনি বলেন, ‘‘সোমবার বেশ কিছু জরুরি কাজ ছিল অফিসে। শেষ পর্যন্ত গাড়ি ভাড়া করে যেতে হয়েছে।’’ বাসের আশায় না থেকে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন হুড়ার বাসিন্দা রঘুনাথপুর ১ ব্লকের কৃষি দফতরের কর্মী ফণিভূষণ মাহাতো ও পুঞ্চার ডেলাং গ্রামের বাসিন্দা নিতুড়িয়ার কৃষি দফতরের কর্মী রামকুমার মাহাতো। হুড়ায় অবরোধে আটকে পড়েন দু’জনেই। ফণিভূষণ বলেন, ‘‘অন্য রাস্তা দিয়ে, প্রায় কুড়ি-পঁচিশ কিলোমিটার ঘুরে অফিসে পৌঁছেছি।’’ তিন মাসের শিশুকে নিয়ে দু’কিলোমিটার হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছেছেন মানবাজারের ভ্রমরপুর গ্রামের অনিলা মাঝিও।

সারেঙ্গা, সিমলাপাল, রাইপুর-সহ বাঁকুড়ার মোট ৩৬টি জায়গায় এ দিন অবরোধ হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংগঠনের নেতারা। বাঁকুড়া শহর ও সংলগ্ন এলাকার মোট চারটি জায়গায় অবরোধ হয়। সেগুলি হল, হেভির মোড়, ধলডাঙা, কাটজুড়িডাঙা ও পোয়াবাগান। বিষ্ণুপুর মহকুমার পাত্রসায়রে বাঁকুড়া-বর্ধমান রাস্তার কাঁকরডাঙা মোড়, কোতুলপুর ও জয়পুরে ২ নম্বর রাজ্য সড়ক, শিবেরবাঁধে সোনামুখী-বিষ্ণুপুর রাস্তা, বাঁকাদহে বৈতল মোড়ে জাতীয় সড়কে চলে অবরোধ। বাঁকাদহে অবরোধকারীদের মধ্যে মাধব সোরেন, বিনয় মান্ডিরা বলেন, ‘‘অনেক দিন আগে থেকে হ্যাণ্ডবিল দিয়ে অবরোধের কথা প্রচার হয়েছিল। এ দিন জরুরি পরিষেবার গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’’

ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক রতনলাল হাঁসদা এ দিন বলেন, ‘‘অবরোধে জরুরি পরিষেবায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। আমাদের কেউ যাতে মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার না করেন, সেই ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া ছিল।’’ তাহলে রঘুনাথপুরের বেড়োয় অসুস্থ দু’জনকে আটকাল কারা? রতনলাল বলেন, ‘‘বেড়োয় আমাদের সংগঠনের কেউ অবরোধ করেননি।’’

Dialysis Road Blockade Indigenous
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy