Advertisement
১১ মে ২০২৪
Duare Ration

Duare Ration: ‘দুয়ারে রেশন’, হাজির ডিএম-ও

ঘটনাটি জানতে পেরে তৎকালীন জেলাশাসক রাহুল মজুমদারই কার্ডগুলি উদ্ধার করে গ্রাহকদের ফিরিয়ে দেন।

দুয়ারেই: বাড়ির কাছে রেশনের মাল। বান্দোয়ানের শালিডি গ্রামে বুধবার। নিজস্ব চিত্র

দুয়ারেই: বাড়ির কাছে রেশনের মাল। বান্দোয়ানের শালিডি গ্রামে বুধবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:৫৭
Share: Save:

রাজ্যের অন্য জেলাগুলির সঙ্গে বুধবার পুরুলিয়াতেও শুরু হল ‘দুয়ারে রেশন’-এর পাইলট প্রকল্প। বৃষ্টিতে রেশন বণ্টনে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হলেও সামগ্রিক ভাবে কর্মসূচি নির্বিঘ্নেই মিটেছে বলে জেলা প্রশাসনের দাবি। এ দিকে, কর্মসূচির খরচ কবে, কী ভাবে মিলবে তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন বলে দাবি রেশন ডিলারদের একাংশের।

বছরখানেক আগে পুরুলিয়ার ঝালদা ১ ব্লকের ইচাগ পঞ্চায়েতের সারজুমাতু গ্রামের কিছু বাসিন্দা অভাবের তাড়নায় তাঁদের রেশন কার্ড মহাজনের বন্ধক রেখেছিলেন বলে দাবি। গ্রাহকদের বদলে ওই মহাজনই রেশন তুলতেন বলে অভিযোগ। ঘটনাটি জানতে পেরে তৎকালীন জেলাশাসক রাহুল মজুমদারই কার্ডগুলি উদ্ধার করে গ্রাহকদের ফিরিয়ে দেন। এ দিন দুয়ারে রেশন পেয়ে ওই গ্রামের বাসিন্দা অঘনু মাহাতো, প্রভুদাস কর্মকারেরা বলেন, ‘‘দুয়ারে রেশন পেয়ে সুবিধাই হবে।”

পুরুলিয়া জেলা খাদ্য দফতর জানাচ্ছে, জেলার ২০টি ব্লকের ৪০টি পঞ্চায়েত ও তিনটি পুর-এলাকার দু’টি করে ওয়ার্ডে এ দিন প্রকল্পটি শুরু হয়েছে। প্রতিটি ব্লকের সদর পঞ্চায়েত ও একটি প্রত্যন্ত পঞ্চায়েতকে ‘পাইলট প্রকল্প’-এর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল। ১৬৬ জন রেশন ডিলার গ্রাহকদের দুয়ারে গিয়ে রেশন দিয়েছেন।

অযোধ্যা পাহাড়ে অযোধ্যা পঞ্চায়েতের কালিঝর্না গ্রামে এ দিন সকাল থেকে হাজির ছিলেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। বৃষ্টি মাথায় গাড়িতে রেশনসামগ্রী নিয়ে স্থানীয় রেশন ডিলার ও কর্মীদের নিয়ে গ্রামে পৌঁছন তিনি। সেখানে ‘দুয়ারে রেশন’-এ গ্রাহকেরা বাড়িতেই কী ভাবে রেশন পাবেন, তা নিয়ে সাঁওতালি ভাষায় মাইকে বক্তব্য রাখেন জেলাশাসক। ছিলেন বিডিও (বাঘমুণ্ডি) দেবরাজ ঘোষ-সহ আধিকারিকেরা। জেলাশাসক বলেন, ‘‘জেলায় বেশ কিছু দুর্গম এলাকা রয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে রেশন আনতে হয়। জেলার অনেক মানুষই রেশন পণ্যের উপরে নির্ভরশীল। সে হিসাবে এ কর্মসূচি মানুষের ক্ষেত্রে সহায়ক। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই রেশন ডিলারেরা মানুষের কাছে পৌঁছেছেন।’’

কালিঝর্না গ্রামের বাসিন্দা জওহরলাল মুর্মু বলেন, ‘‘সাত কিলোমিটার দূরে কুচড়িরাখা গ্রামে রেশন আনতে যেতে হয়। সে ঝঞ্ঝাট মিটল।’’ আর এক বাসিন্দাও জানান, মাথাপিছু ১০ কেজি চাল, তিন কেজি গম ও দু’কেজি ৮৫০ গ্রাম আটা মেলে। বাড়ির পাঁচ জন সদস্যের মোট মাল বয়ে আনতে সমস্যা হত। এ বার থেকে দুয়ারেই রেশন মিলবে।

বৃষ্টি মাথায় বান্দোয়ানের সুপুডি পঞ্চায়েতের কয়েকটি গ্রামেও রেশন পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। রেশন ডিলার সদানন্দ দে বলেন, ‘‘সকাল থেকেই বৃষ্টির জন্য কাজ ব্যাহত হয়েছে। তার মধ্যেও শালিডি, কেন্দডাঙা গ্রামে গ্রাহকদের দুয়ারে রেশন পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।” ‘দুয়ারে রেশন’ পৌঁছেছে পুরুলিয়া শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের লালমোহন ত্রিবেদী লেন, রঘুনাথপুরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের গার্লস স্কুল রোড এলাকাতেও। পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা অমরেন্দ্রকুমার সাহা বলেন, ‘‘বয়স্ক মানুষ। দোকানে রেশন তুলতে গেলে অনেক সময়ই দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। দুয়ারে রেশন পেলে আমাদের মতো মানুষের জন্য তা খুবই ভাল।’’

‘ওয়েস্ট বেঙ্গল এমআর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর পুরুলিয়া জেলা শাখার সম্পাদক প্রভাশিসলাল সিংহ দেও বলেন, ‘‘বৃষ্টি মাথায় ডিলারেরা পাইলট প্রকল্পের কাজ করেছেন। এক হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া, ন্যূনতম চার জন কর্মীর মাইনে চোদ্দোশো টাকা এবং গাড়িতে মাল তোলার খরচ—সব মিলিয়ে যা খরচ হয়েছে, দফতর তা দেবে কি না, এখনও স্পষ্ট নয়।’’ খরচ না পেলে কোনও ডিলারই কাজ করবেন না বলে দাবি তাঁর।

‘বেঙ্গল ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন মাহাতোও বলেন, ‘‘খরচের বিষয়টি তো রয়েছেই। পাশাপাশি, বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেশন দিতে সময়ও অনেকটা লাগছে। প্রথম সপ্তাহের অভিজ্ঞতা দফতরে জানানো হবে।’’ জেলা খাদ্য নিয়ামক শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘বৃষ্টি ছাড়া, প্রথম দিনে কোনও সমস্যা হয়নি। যাঁরা দুয়ারে রেশন নিতে পারবেন না, তাঁরা সপ্তাহের শেষে, শনি ও রবিবার দোকান থেকে রেশন তুলতে পারবেন। শনিবার পূর্ণ দিবস ও রবিবার অর্ধ দিবস দোকান খোলা থাকবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Duare Ration District magistrate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE