Advertisement
E-Paper

ডাক্তার ধরে রাখতে অ্যাম্বুল্যান্স আটক জনতার

এক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকের ঘাটতি মেটাতে অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসককে তুলে আনতে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৬ ০২:২৭
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বিডিও।—নিজস্ব চিত্র

বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বিডিও।—নিজস্ব চিত্র

এক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকের ঘাটতি মেটাতে অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসককে তুলে আনতে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসককে ছাড়া হবে না দাবি করে অ্যাম্বুল্যান্স চালক-সহ দু’জনকে রাতভর আটক করে রাখলেন বাসিন্দারা। শেষে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরের দিন ঘেরাও ওঠে। কেন্দা থানার কুদা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মঙ্গলবার সারারাত মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে আসা অ্যাম্বুল্যান্স ও চালকদের আটক করে রাখা হয়।

মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতালে এমনিতেই চিকিৎসকের ঘাটতি চলছে। মঙ্গলবার সেখানে রাতে ডিউটি করার জন্য বিএমওএইচের নির্দেশে ২৪ কিলোমিটার দূরের কুদা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক জয়দেব বিশ্বাসকে নিয়ে আসতে একটি অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হয়। অভিযোগ কুদা গ্রামের বাসিন্দারা তা জানতে পেরে ওই চিকিৎসককে মানবাজারে যেতে দেননি। অ্যাম্বুল্যান্সের চালক-সহ দু’জনকে আটকে রেখে দেন তাঁরা।

চিকিৎসককে যেতে দিতে চাননি কুড়মাশোল গ্রামের বাসিন্দা রঞ্জিত মাহাতো, কুদা গ্রামের সুদীপ মাহাতো, অশ্বিনী মাহাতোরা। তাঁদের কথায়, ‘‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমরা কুদা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশে একটি চায়ের দোকানে বসেছিল। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একটি অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে দেখে কৌতূহল হয়। খোঁজ নিতে গেলে চালক জানান, তাঁরা ডাক্তারবাবুকে মানবাজারে নিয়ে যেতে এসেছেন। এ কথা শুনেই আমরা অ্যাম্বুল্যান্স আটকে দিই।’’ কেন? তাঁদের যুক্ত, কুদা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন মাত্র চিকিৎসক রয়েছেন। তাঁকে নিয়ে গেলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র অচল হয়ে পড়বে। সেই সময় চালক বাসিন্দাদের বোঝান, বিএমওএইচ জানিয়েছেন, ওই চিকিৎসক শুধু মানবাজারে নাইট ডিউটি করে পরের দিন কুদায় ফিরে আসবেন।

কিন্তু বাসিন্দারা তা বিশ্বাস করতে চাননি। তাঁদের দাবি, এর আগেও নাইট ডিউটি দেওয়ার নাম করে কুদা থেকে চিকিৎসক তুলে নেওয়া হয়েছিল। তাঁরা দাবি করেন, পরিবর্ত চিকিৎসক না পাওয়া পর্যন্ত ওই চিকিৎসককে ছাড়া হবে না। তাঁরা এলাকায় মানবাজারের বিএমওএইচ-কে নিয়ে আসার দাবি করেন। শুরু হয়ে যায় অ্যাম্বুল্যান্স আটকে রেখে আন্দোলন। মানবাজারের বিএমওএইচ কালীপদ সোরেন অবশ্য ঘটনাস্থলে যাননি। মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতালের কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, বিএমওএইচ হাসপাতালে ছিলেন না।

যদিও কালীপদবাবুর দাবি, তিনি বাইরে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতালে প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক কম। তাই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেগুলির চিকিৎসকদের মাঝেমধ্যে ডিউটি করতে ডেকে আনা হয়। সে ভাবেই মঙ্গলবার রাতে নাইট ডিউটি করতে কুদার এক চিকিৎসককে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্সের চালক ও গাড়িটি আটকে রাখায় সমস্যা বাড়ে।’’ তিনি জানান, পাছে তাঁকেও আটকে রাখা হয়, সে কারণেই তিনি ঘটনাস্থলে রাতে যাননি।

বুধবার ঘটনাস্থলে যান মানবাজার ১ বিডিও সত্যজিৎ বিশ্বাস। তিনি বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। স্থানীয় কামতা জাঙ্গিদিরি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সত্যনারায়ণ মাহাতো বলেন, ‘‘এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর প্রায় ২৫-৩০ হাজার বাসিন্দা নির্ভরশীল। যদি বা একজন চিকিৎসক মিলেছে তাঁকেও নানা অজুহাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। ওই চিকিৎসককে কোথাও যেতে দেওয়া হবে না।’’ বিডিওর কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি জরাজীর্ণ। আগাছায় ভরা। অভিযোগ প্রয়োজনীয় ওষুধও মেলে না। ইতিপূর্বে পরিকাঠামোর মানোন্নয়নের দাবিতে বাসিন্দারা স্বাস্থ্য কর্তাদের আটক করে রেখেছিলেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এতেও পরিকাঠামোর মান বাড়েনি।’’ বিডিও আশ্বাস দিয়েছেন, ওই চত্বরে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে থাকা গাছগুলি সরিয়ে ফেলা হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ নিয়মিত করার জন্য তিনি জেলা স্বাস্থ্য কর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্র সংস্কার করারও চেষ্টা করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। তাঁর আশ্বাসে শেষ পর্যন্ত অ্যাম্বুল্যান্স এবং চালক ঘেরাওমুক্ত হন।

Docters Ambulance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy