Advertisement
০৪ মে ২০২৪

কেন ক্ষতচিহ্ন দেখতে বোর্ড

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার বিকেলে পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকা থেকে এক মহিলা এসে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে তাঁর শিশুকন্যাকে জ্বর, সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে ভর্তি করেন। চিকিৎসকেরা শিশুটিকে পরীক্ষা করতে গিয়ে আঁতকে ওঠেন। শিশুটির দু’চোখের চারপাশে কালশিটের দাগ।

পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ওই শিশুকন্যা। নিজস্ব চিত্র।

পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ওই শিশুকন্যা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৭ ২১:০০
Share: Save:

জ্বর, সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল এক শিশু কন্যা। কিন্তু তার শরীরে কয়েকটি ক্ষতচিহ্ন দেখে হাসপাতালের চিকিৎসকদের সন্দেহ দানা বাঁধে। কী ভাবে ওই ক্ষত হয়েছে, তা জানতে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মেডিক্যাল বোর্ড গড়লেন পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের সুপার শিবাশিস দাস বলেন, ‘‘সাড়ে তিন বছরের ওই শিশুটির গায়ে এত ক্ষত কী ভাবে হল, তা রহস্যজনক। কারণ তার মা কিছু বলতে পারছেন না। ক্ষতচিহ্নগুলি কী ভাবে হল, তা খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গড়া হয়েছে। শল্য চিকিৎসক, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বোর্ড গড়া হয়েছে। তারাই বিষয়টা খতিয়ে দেখবে। পুলিশকেও জানানো হয়েছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে তারা জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার বিকেলে পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকা থেকে এক মহিলা এসে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে তাঁর শিশুকন্যাকে জ্বর, সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে ভর্তি করেন। চিকিৎসকেরা শিশুটিকে পরীক্ষা করতে গিয়ে আঁতকে ওঠেন। শিশুটির দু’চোখের চারপাশে কালশিটের দাগ। শরীরের নানা জায়গাতেও আঁচড়ের দাগ রয়েছে। শিশু বিভাগের চিকিৎসক দীনবন্ধু সাহানা বলেন, ‘‘শিশুটির জ্বর, সর্দি-কাশির সমস্যা অনেকটাই কমেছে। কিন্তু আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে সে। লোকজন দেখলেই সিঁটিয়ে যাচ্ছে। শিশুটির মায়ের কাছে এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেও সদুত্তর মেলেনি। তাতে সন্দেহ আরও বাড়ে। বিষয়টি তাই কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’

ঘটনাটি চাইল্ডলাইনের নজরেও এসেছে। চাইল্ডলাইনের জেলা কো-অর্ডিনেটর দীপঙ্কর সরকার বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, আঘাতের বেশ কিছু চিহ্ন নখের আঁচড়ের। কিন্তু এইটুকু একটা মেয়ের গোটা শরীরে কী ভাবে অতগুলি ক্ষতচিহ্ন এল, তার কোনও সদুত্তর দিতে পারছে না শিশুটির মা! পুরো বিষয়টি রহস্যজনক ঠেকছে।’’

বৃহস্পতিবার ওই গ্রামে যান চাইল্ডলাইনের প্রতিনিধিরা। চাইন্ডলাইন ও জুভেনাইল বোর্ডের সদস্য ঝর্না মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বামী বিচ্ছিন্না ওই মহিলা একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। সেখানেই তিনি নিজের শিশুকে নিয়ে থাকেন।’’ তাঁর অভিযোগ, ওই শিশুর গোপনাঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। ওই শিশুর উপর কোনও নির্যাতন হয়েছে কি না তা জানা প্রয়োজন। কেউ দোষী হলে তার উপযুক্ত শাস্তিও দেওয়া দরকার। তিনি বলেন, ‘‘এ দিন আমরা ওই গ্রামে গিয়েছিলাম। যাঁর বাড়িতে ওই মহিলা কাজ করেন, তাঁকে পাওয়া যায়নি।’’

এ দিন শিশু বিভাগে ওই শিশুর বিছানার পাশে বসেছিলেন তার দিদিমা। তিনি দাবি করেন, ‘‘কী ভাবে কী হয়ে গেল, কিছুই জানি না।’’শিশুটির মা বলেন, ‘‘মেয়ের খুব জ্বর উঠে গিয়েছিল। তাই হাসপাতালে এসেছি।’’ কিন্তু এত ক্ষত কী ভাবে হল, তা নিয়ে কিছু বলতে চাননি। পরে জানান, মেয়ের গোপনাঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ হয়। কিন্তু তার উপরে কোনও নির্যাতন হয়েছিল কি না, তা জানতে চাইলে, ফের চুপ করে থাকেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

child wound ক্ষত
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE