E-Paper

‘আগে জল, তার পরে ভোট’

২০১২ সালে ‘বিআরজিএফ’ প্রকল্পে জেলার ২২টি ব্লকের মধ্যে ১৪টিতে পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। কাগজে-কলমে কাজ শেষ হলেও বহু জায়গায় এখনও জল পৌঁছয়নি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৩ ০৭:১১
Drinking water problem in various panchayat areas of Purulia and Bakura

জলের দাবিতে পথে। বাঘমুণ্ডির বীরগ্রামের কাড়িহেঁসা গ্রামে। ফাইল চিত্র —ফাইল চিত্র।

পঞ্চায়েত ভোটে ‘জলেই ডুববে’ তৃণমূল, বলছেন বিরোধীরা।

চলতি বছরে তীব্র গরমে পুরুলিয়া জেলা জুড়ে চলেছে জলের সঙ্কট। জলের দাবিতে পথে নেমেছে মানুষ। বিরোধীদের দাবি, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও অধিকাংশ পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় থেকেও জল-সমস্যা মেটাতে ব্যর্থ শাসকদল। এর জবাব ব্যালটে তারা পাবে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার তবে বক্তব্য, “জেলার সব ব্লকে বাড়ি বাড়ি নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। ১,১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ করছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। আগামী বছরের মধ্যেই জলের সমস্যা মিটবে। আমরা প্রচারে সেই বার্তাই তুলে ধরছি।”

তবে ঘটনা হল, পানীয় জল নিয়ে ক্ষোভের আঁচ টের পাওয়া যাচ্ছে অনেক ব্লকেই। যার অন্যতম নিতুড়িয়া। কয়লাখনি এলাকায় মাটি খুঁড়লেও জল মেলে না। পানীয় জলের প্রকল্প থাকলেও চাহিদামতো জলের জোগান নেই বলে দাবি। চলতি গরমে অন্তত বার পাঁচেক এই ব্লকেই জলের দাবিতে অবরোধ হয়েছে। ব্লকের প্রায় ৩০টি গ্রামে ট্যাঙ্কার পাঠিয়ে জল সরবরাহ করতে হচ্ছে প্রশাসনকে। একই ছবি মানবাজারেও। জলের দাবিতে একাধিক বার পথে নেমেছেন এলাকার মহিলারা। তাঁদের ক্ষোভ, নলবাহিত জল প্রকল্প থাকলেও জল পাওয়া যায় না। অযোধ্যা পাহাড়ের ছাতনি গ্রামের দিবাকর টুডুর কথায়, “গরমের সময়ে সামান্য পানীয়জল পেতে কালঘাম ছোটে। নেতারা ভোট চাইতে ঘরে আসছে।তাঁদের আমরা বলেছি, আগে জলের সমস্যা মেটান।”

জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা যায়, ‘জলস্বপ্ন মিশন’-এ জেলার ২৭১০টি মৌজার ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার ৩২৬টি বাড়িতে নলবাহিত পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছনোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০২০-র অগস্টে কাজ শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে জুড়েছে ‘জাইকা’ প্রকল্প। ওই প্রকল্প থেকে আড়শা, মানবাজার ২, বরাবাজার, পুরুলিয়া ২ ও পুঞ্চা ব্লকে নলবাহিত জলের সংযোগ দেওয়া হবে। মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এক লক্ষের কিছু বেশি বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

তবে এ নিয়েও অভিযোগ আছে বিস্তর। ‘জলস্বপ্ন মিশন’-এ বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়া হলেও বহু ক্ষেত্রে জল পড়ে না। ‘জাইকা’র কাজ চলছে অত্যন্ত ধীরে। বিরোধীদের কটাক্ষ, পঞ্চায়েত ভোটের আগে তড়িঘড়ি বহু পঞ্চায়েত এলাকায় রাস্তা খুঁড়ে পাইপ বসিয়ে জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আসলে মুখের সামনে গাজর ঝুলিয়ে ‘টোপ’ দিচ্ছে তৃণমূল। অভিযোগ তবে মানেনি শাসকদল।

কী ছবি বাঁকুড়ার? ২০১২ সালে ‘বিআরজিএফ’ প্রকল্পে জেলার ২২টি ব্লকের মধ্যে ১৪টিতে পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। কাগজে-কলমে কাজ শেষ হলেও বহু জায়গায় এখনও জল পৌঁছয়নি। বাঁকুড়া ২ ব্লকের বিকনার কেশিয়াকোলের একাংশে বাড়ি বাড়ি পাইপলাইন দেওয়া হলেও জল যায় না বলে দাবি। একই অভিযোগ বাঁকুড়া ১, ছাতনা, শালতোড়া-সহ বিভিন্ন ব্লকের বহু গ্রামেরও। রানিবাঁধের পুড্ডি পঞ্চায়েতের কুসুমকুন্দিতে এখনও পাইপলাইন বসেনি। গভীর নলকূপ থাকলেও জল খাওয়ার যোগ্য নয় বলে দাবি। জল-সমস্যা রয়েছে খাতড়ার দহলা পঞ্চায়েতের বরাগাড়ি, দাতারামপুর, সেনডাঙাতেও।

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, জল প্রকল্পের দ্বিতীয় দফায় মেজিয়া, গঙ্গাজলঘাটি, ইঁদপুর ও তালড্যাংরা ব্লকে কাজ শুরু হয়েছে। তৃতীয় দফায় ‘জলজীবন মিশন’ প্রকল্পে জয়পুর, কোতুলপুর, সোনামুখী ও পাত্রসায়র ব্লকে কাজ হচ্ছে। জেলায় প্রায় ৭ লক্ষ ৫০ হাজার পরিবারে জল দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।প্রায় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার পরিবারে ট্যাপকল বসেছে।

ভোট প্রচারেও বারে বারে এসেছে জল-সমস্যার কথা। জেলায় এসে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কটাক্ষ ছিল, “স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও জঙ্গলমহলে গ্রামের নলকূপের লাইনে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে মা, বোনেদের। এটাই তৃণমূলের উন্নয়ন।” জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি মৃত্যুঞ্জয় মুর্মুর তবে আশ্বাস, “বেশির ভাগ ব্লকেই জল-সমস্যা মিটেছে। বাকি এলাকাতেও দ্রুত জল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। বিরোধীদের অভ্যাস সমালোচনা করা।”

তথ্য সহায়তা: রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুশীল মাহালি, তারাশঙ্কর গুপ্ত, প্রশান্ত পাল, শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল ওদেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Drinking Water Crisis purulia bankura

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy