তাপস রায় ফাইল চিত্র
লোবা অঞ্চলের এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ ও তাঁর কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকার মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করেছিল একদল দুষ্কৃতী। পুলিশি তৎপরতায় দুষ্কৃতীদের সেই ছক ভেস্তে যায়। গত বছরের শেষ দিনে দুবরাজপুর থানা এলাকায় এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। পুলিশকে বেশি অবাক করেছিল ওই ব্যবসায়ীর কাছে চাওয়া মুক্তিপণের অঙ্কটা! কিন্তু, তাপস রায় নামে সেই ব্যবসায়ীই শনিবার কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (এটিএফ) গোয়েন্দাদের হাতে ২৫ কোটি টাকার মাদক-সহ ধরা পড়ার পর অনেকেই বলছেন, মুক্তিপণ অনেক হিসেব করেই চাওয়া হয়েছিল।
লোবা পঞ্চায়েতের চড়কডাঙার বাসিন্দা তাপসকে এটিএফ ধরে কলকাতার প্রগতি ময়দান থানা এলাকার ইএম বাইপাস সংলগ্ন ক্যাপ্টেন ভেড়ির কাছ থেকে। ধৃতের কাছ থেকে ১০টি ছোট প্যাকেটে ৫ কিলো ১৫৭ গ্রাম হেরোইন জাতীয় মাদক মিলেছে বলে দাবি এটিএফের। যে মোটরবাইকে করে মাদক পাচারের চেষ্টা হয়েছিল, এসটিএফ সেটিকেও বাজেয়াপ্ত করেছে। ঘটনার কথা লোবা এলাকায় পৌঁছতেই চর্চা শুরু হয়েছে। গত এক দশক ধরে পোস্ত চাষের ‘ভরকেন্দ্র’ লোবায় রাতারাতি বহু মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা বদলের পিছনে মাদক যোগ নিয়েও জল্পনা চলছে। তাপসের আর্থিক সমৃদ্ধি নিয়েও এলাকায় কানাঘুষো ছিল। আড়ালে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, এক দশক আগেও যে তাপস সাইকেল ঠেলে ধান কিনতে যেতেন, সেই তিনিই কোটি টাকার মালিক। লোবায় বিশাল চিমনি ভাটা ছাড়াও দুর্গাপুর ও বোলপুর তাঁর একাধিক ব্যবসা। তাপসের ফুলেফেঁপে ওঠার পিছনে পোস্ত চাষের সূত্রে মাদক কারবার, এমনই দাবি করছেন অনেকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে পোস্ত চাষের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নিজের আস্তানা বদলে ফেলেছিলেন তাপস। সপরিবার দুর্গাপুরের গোপালনগরে উঠে গিয়েছিলেন। কিন্তু, লোবার সঙ্গে ‘বিশেষ’ যোগাযোগ ছিল। গত ডিসেম্বরে লোবায় ভাটার কাজ দেখতে এলে তাঁকে অপহরণ ও মু্ক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করেছিল পাঁচ দু্ষ্কৃতী।
প্রশাসনের অধিকারিকেরা মনে করাচ্ছেন, আফিম, হেরোইন, ব্রাউনসুগারের মতো নিষিদ্ধ এবং মারাত্মক মাদক তৈরির মূল উৎস হল পোস্ত। সেই কারণে সরকরি নজরদারিতে দেশের দু-একটি রাজ্যেই পোস্ত চাষ হয়। বাকি কোথাও পোস্ত চাষ দণ্ডনীয় অপরাধ। তা সত্ত্বেও ২০০৫ সাল থেকেই বীরভূমের কিছু অংশে পোস্ত চাষের শুরু। জেলার যে-সব জায়গায় ব্যাপক আকারে পোস্ত চাষ ২০১৬-’১৭ পর্যন্ত হয়েছে, সেই তালিকায় রয়েছে লোবা এলাকা।
নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি) সূত্রে জানা যায়, শুধু পোস্ত চাষ নয়, কী ভাবে পোস্ত ফল ব্লেড দিয়ে চিড়ে আঠা সংগ্রহ করতে হয় সবই হাতে কলমে শিখিয়েছে বাইরের মাদক কারবারিরা। বীরভূমে কাজ করে যাওয়া এনসিবি-র এক আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রশাসনিক নজরদারিতে শেষ পর্যন্ত পোস্ত চাষে লাগাম পরানো গেলেও তার আগেই এলাকার চাষিদের অনেকে পোস্তর আঠার সঙ্গে রাসায়মিক মিশিয়ে কী ভাবে ব্রাউনসুগার বা হেরোইন জাতীয় মাদক তৈরি করতে হয়, তার কৌশল রপ্ত করে ফেলেছিলেন। যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল বাইরের মাদক কারবারিদের সঙ্গেও। কাঁচা টাকাও আসছিল। এসটিএফের হাতে তাপসের গ্রেফতার তারই উদাহরণ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy