বড়জোড়ায় কোলিয়ারির সামনে অবস্থান বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
সংস্থার হাত বদল হয়ে গিয়েছে। পুরনো সংস্থা যন্ত্রপাতি তুলে নেওয়ার কাজও শুরু করে দিয়েছে। অথচ কোলিয়ারির জন্য জমিহারা লোকজনের বহু দাবি-দাওয়াই এখনও মেটেনি বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে কোলিয়ারির গেট আটকে অবস্থান বিক্ষোভ করলেন জমিহারারা। শনিবার বড়জোড়ার ঘুটগোড়িয়া অঞ্চলের ওই খোলামুখ কোলিয়ারিতে ঘণ্টাখানেক অবস্থান চলল। পরে প্রশাসনের তরফে আলোচনায় বসার আশ্বাসে আন্দোলন ওঠে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, এতদিন ওই কোলিয়ারিটি ডিভিসি-এমটা চালাচ্ছিল। সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে বছর খানেক আগে নতুন করে কোলিয়ারিগুলি নিলাম করা হয়। তখন ওই কোলিয়ারি থেকে কয়লা তোলার দায়িত্ব পায় পিডিসিএল। তবে পিডিসিএল এখনও ওই কোলিয়ারিতে কাজ শুরু করেনি। এ দিকে ডিভিসি-এমটা কোলিয়ারিতে কাজ-সহ তাদের সমস্ত অফিস গুটিয়ে ফেলেছে বড়জোড়ায়।
প্রশাসনের একটি সূত্রে খবর, কয়লা তোলার জন্য ভারী মালবাহী গাড়ি পূর্বতন সংস্থা ঋণ নিয়ে কিনেছিল। এ দিকে, প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ওই কোলিয়ারি বন্ধ হয়ে পড়ে থাকায় সেই সব গাড়ি এখন কাজে লাগছে না। ঋণও বাকি পড়ে গিয়েছে। তাই কোলিয়ারির ভিতরে পড়ে থাকা ওইরকম কয়েকটি গাড়ি এ দিন ঋণদানকারী একটি সংস্থা ফেরত নিয়ে যেতে আসে। তারা দাবি করে, হাইকোর্টের অনুমতি নিয়েই তারা গাড়িগুলি নিতে এসেছে। খবর পেয়ে জমিহারা মানুষজন এবং খেত মজুরেরা কোলিয়ারির দরজা আটকে অবস্থান শুরু করেন।
পূর্বতন সংস্থা জমিহারাদের দাবি এখনও সব মেটায়নি বলে অভিযোগ। তারই মধ্যে একের পর এক সম্পত্তি ওই সংস্থা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় চটে উঠেছেন জমিহারারা। এ দিন তাই গাড়িগুলি সরানো হচ্ছে শুনে তাঁরা কোলিয়ারির দরজায় জড়ো হয়ে অবস্থান শুরু করেন। তাঁরা চুক্তিমাফিক ক্ষতিপূরণের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
ঘণ্টাতিনেক বিক্ষোভ চলার পরে বড়জোড়ার বিডিও স্মৃতিরঞ্জন মহান্তি এবং বড়জোড়া থানার আইসি দিলীপ কর্মকার গিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আশ্বাস দেন। তার পরে অবস্থান ওঠে।
বিক্ষোভকারীরা জানাচ্ছেন, বড়জোড়ার ঘুটগোড়িয়া, বাগুলি, মোলবনা, লহড়াবনি, হিদুরডাঙা, মনোহর প্রভৃতি গ্রামের বড় অংশই চলে যায় কোলিয়ারির দখলে। কয়েক হাজার মানুষ জমি হারান। সেই সঙ্গে কাজ হারান হাজার খানেক খেতমজুরও। তাঁদের অভিযোগ, জমির বর্ধিত মূল্য পাননি তাঁরা। এ ছাড়া, দু’একর জমি পিছু পরিবারের একজন করে ব্যক্তিকে এই কোলিয়ারিতে চাকরি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কাউকেই চাকরি দেওয়া হয়নি। প্রতিটি বাস্তুহারা পরিবারের একজন করে সদস্যকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে সব বাস্তু হারা পরিবারের সদস্য চাকরি পায়নি। খেত মজুরদের ৫০০ দিনের মজুরি এক লপ্তে দেওয়ার চুক্তি করেছিল সংস্থা। তাও মানা হয়নি বলে তাঁদের দাবি। কোলিয়ারিতে যাঁরা কাজ করতেন, তাঁদেরও বঞ্চনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। কর্মীদের টাকা বকেয়া রয়েছে এবং এই কোলিয়ারির পরিবহনের সঙ্গে জড়িত লোকজনেরও বহু টাকা বকেয়া রয়েছে বলেও অভিযোগ।
কোলিয়ারির জমিহারা সংগঠন বড়জোড়া নর্থব্লক মূল কমিটি ল্যান্ড লুজার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য টিঙ্কু মণ্ডল, মহাদেব দাঁ-র অভিযোগ, “আমাদের দাবিদাওয়া না মিটিয়েই হাত গোটাচ্ছে পূর্বতন সংস্থা। প্রশাসনের মধ্যস্থতায় ডিভিসি-এমটা-র সঙ্গে জমিহারা ও খেত মজুরদের যে সব চুক্তি হয়েছিল, তা পূরণ করতে হবে।”
এ দিন চেষ্টা করেও ডিভিসি-এমটা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বড়জোড়ার বিডিও স্মৃতিরঞ্জনবাবু বলেন, “আমরা জমিহারা সংগঠন ও কোলিয়ারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসব।” কাল সোমবারই বড়জোড়া ব্লক অফিসে ওই আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘বৈঠকে ডিভিসি-এমটা ও পিডিসিএল দুই সংস্থাকেই ডাকা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy