আজ লক্ষ্মীপুজো। রামপুরহাটে সব্যসাচী ইসলামের তোলা ছবি।
টানা দশ দিন ধরে চলে থিম-পুজো। বসে মেলা। ঘরে ফেরেন মেয়েরা। কেনা হয় নতুন জামা-কাপড়। নাহ্, দুর্গা নয়— সবটাই লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে। ময়ূরেশ্বরের ষাটপলশার জাঁক বেশি লক্ষ্মী পুজোতেই। শুধু স্থানীয় বাসিন্দারাই নন, বহু দূর থেকে পুজো দেখতে আসেন দর্শনার্থীরা।
প্রচলিত আছে, এক সময় পুজোটি ছিল পারিবারিক। শতাধিক বছর আগে এই পুজোর প্রচলন করেন স্থানীয় বাসিন্দা প্রয়াত রাজলক্ষ্মী পাল। তার ৩০ বছর পরে পুজোর দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেন স্থানীয় ষাটপলশা হাট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি। সেই থেকে আজও তারাই পুজোর দায়িত্বে।
স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, এলাকায় দু’টি দুর্গাপুজো হয়। একটি পারিবারিক, অন্যটি বারোয়ারি। তবে, সর্বজনীন উৎসব বলতে স্থানীয়েরা লক্ষ্মীপুজোকেই বোঝেন। বিবাহিত মেয়েরা লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে বাপের বাড়ি ফেরেন। কর্মস্থল থেকে ফেরেন পুরুষেরাও। জামা-কাপড়ও কেনা হয় লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে। এ বারও প্রথার
অন্যথা হয়নি।
পুরুলিয়া থেকে বাপের বাড়ি ষাটপলশায় এসেছেন তনুশ্রী ঘোষ, লাভপুর থেকে কাকলী ঘোষ, দুর্গাপুর থেকে কৃষ্ণা পালরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘আমরা দুর্গাপুজোটা শ্বশুরবাড়িতে কাটিয়ে লক্ষ্মীপুজোয় বাপের বাড়ি আসি। কারণ এখানে লক্ষ্মীপুজোর ধুমধাম দুর্গাপুজোকেও ছাপিয়ে যায়।’’
হায়দরাবাদের কর্মস্থল থেকে এসেছেন বাসব ঘোষ, কল্যাণী থেকে শ্যামল ঘোষ, গড়িয়া থেকে পুলক পালেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, দুর্গাপুজো নয়, ছুটি নেন লক্ষ্মীপুজোয়। গৃহবধূ তৃপ্তি মণ্ডল, তপতী পাত্র, দেবযানী ঘোষেরা আবার বলছেন, ‘‘দুর্গাপুজোর আগে বাজার করলেও লক্ষ্মীপুজোতেই নতুন পোশাক পড়ি। নাড়ু, মিষ্টি তৈরি করি।’’
ছোটদের তো একেবারে সোনায় সোহাগা। টানা উৎসব চলছে তাদের। দিন কাটছে আনন্দে। তৃতীয় শ্রেণির দেবলীনা পাল, অষ্টম শ্রেণির ভাস্কর সুত্রধর,একাদশ শ্রেণির
কৃষ্ণা দাসরা জানাল, লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে দোকানদারেরা বাজি-পটকা আনে না। তাই দুর্গাপুজোর সময় থেকেই তারা বাজি পটকা কিনে জমিয়ে রাখে। দেবলীনারা সানন্দে বলছে, ‘‘দুর্গাপুজোর চার দিন তো বই খুলতে হয়ই না। লক্ষ্মীপুজোর কয়েক দিনও পড়ার জন্যে
বকাবকি শুনতে হয় না। আমাদের তো দ্বিগুণ মজা।’’
শুধু তাই নয় পুজো হয় থিমের। ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ঈশ্বর পাত্র, সম্পাদক মানস ঘোষেরা জানালেন, এ বার আর্কষণীয় তোরণ এবং পাতাল থেকে দেবীর আগমনের থিম করা হয়েছে। সমিতির দাবি, এর আগেও পুজো এবং মেলা উপলক্ষে গড়ে দৈনিক ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের সমাগম হয়েছে। নিত্য-নুতন থিম, আর্কষণীয় প্রতিমার পাশাপাশি সুশৃঙ্খল পরিচালনার জন্যে সমাগম ফি-বছরই বাড়ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy