পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় ভরে উঠেছে রাঙা পলাশে। —ফাইল চিত্র
রিতে হলেও বসন্ত উৎসবে পলাশ-নিধন রুখতে বছরখানেক ধরে সচেতনতা শুরু হয়েছে বোলপুর-শান্তিনিকেতন এলাকায়। তবু আগেকার মতো বীরভূমে সামগ্রিক ভাবে পলাশের সেই বাহার আর দেখা যায় না বলেই আক্ষেপ করেন বহু মানুষ। সেই ঐতিহ্য ফেরাতে এ বার বিশেষ উদ্যোগী হল জেলা উদ্যানপালন দফতর। ‘অরণ্য সপ্তাহ’ উপলক্ষে রামপুরহাট মহকুমার আট ব্লকে পলাশের এক লক্ষ চারা লাগাবে দফতর। সেই লক্ষ্যে এই বৃক্ষরোপণকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে একশো দিনের প্রকল্পের কাজেও। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়েও গেল সেই কর্মসূচি।
এসডিও (রামপুরহাট) সুপ্রিয় দাস বলেন, ‘‘জেলার এই মহকুমায় প্রায় কোথাও-ই পলাশ গাছ দেখতে পাওয়া যায় না। তাই এ বারের অরণ্য সপ্তাহে মহকুমার ৮টি ব্লক এবং দু’টি পুরসভা এলাকায় এক লক্ষ পলাশ গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গোটা কাজটিকে ব্লক স্তরে ১০০ দিনের প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে। বিভিন্ন ব্লক সেই মতো করে কাজের পরিকল্পনা জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দিয়ে তার অনুমোদনও পেয়েছে।” জেলা উদ্যান পালন দফতরের মহকুমা সহ-অধিকর্তা (রামপুরহাট) মিলন বেসরা জানান, এই মুহূর্তে দফতরের হাতে না থাকায় পুরুলিয়ার বান্দোয়ান থেকে পলাশ গাছের চারা নিয়ে আসার ব্যবস্থা হয়েছে। পলাশ উৎসবের প্রাথমিক পর্যায়ে সোমবারই ২৫ হাজার পলাশ চারা ঢুকে পড়েছে মহকুমায়।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণ মানুষের একাংশের মধ্যে এমন ধারণা আছে যে, পলাশ এক ধরনের জংলি বৃক্ষ। মিলন বলছেন, ‘‘এই ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ, পলাশ হচ্ছে একটি বনোঔষধি গাছ। এই গাছের বিবিধ উপকারিতা রয়েছে।’’ তিনি জানান, পলাশ গাছের ছাল, শিকড় পেটের রোগ সারিয়ে খিদে বাড়াতে সাহায্য করে। দুই, পলাশ গাছের পাতা জৈব সার হিসাবে ব্যবহার করা যায়। তিন, পলাশ গাছে লাক্ষা, মধুর মতো অর্থকরী চাষও করা যায়। এ ছাড়া আরও নানা ভাবে পলাশকে কাজে লাগানো যায় বলেই ওই কর্তার দাবি। সেই গাছে মহকুমা ভরে তোলার এই উদ্যোগে সকলকে সামিল হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
ইতিমধ্যেই একশো দিন প্রকল্পে নিজের নিজের ব্লকে দশ হাজার পলাশ চারা লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রামপুরহাট ১ ব্লকের বিডিও নীতিশকুমার বালা এবং নলহাটি ২ বিডিও ঋক সপ্তাশ্ব। মঙ্গলবাই অনুষ্ঠান করে রামপুরহাট ১ ব্লক প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ২৫২টি স্কুলকে পাঁচটি করে পলাশ গাছের চারা বিলি করেছে। নীতিশ বলেন, ‘‘আজ স্কুলে দেওয়া হল। বাকি গাছ রাস্তার ধারে ধারে একশো দিন প্রকল্পে লাগানো হবে।’’ এমন উদ্যোগে সামিল হতে চেয়ে ইতিমধ্যেই মহকুমা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে মল্লারপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থার সম্পাদক সাধন সিংহ বলছেন, ‘খুবই ভাল উদ্যোগ। ‘আমরাও এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে পলাশে গাছের বনানি গড়ে তুলতে চাই।’’
যদিও প্রশ্ন উঠছে, বাকি প্রকল্পের মতো চারা লাগানোর মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে না তো এই উদ্যোগ? ছোট্ট চারা বাঁচিয়ে বড় করে তোলায় আসল চ্যালেঞ্জ প্রশাসনের। সে ব্যাপারে প্রশাসন তৎপর থাকবে বলেই কর্তাদের অবশ্য দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy