E-Paper

মাটিতে লুটিয়ে বহু, বয়ে গেল পুণ্যার্থীর ঢেউ

ঘাটে যাওয়ার পথেই শুনলাম, ঘোষণা করা হচ্ছে, সন্ধে ৭.৩১ মিনিট থেকে মৌণী অমাবস্যা শুরু হয়ে যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ স্নান শুরু করতে পারেন।

বিপ্লব লাহা সিউড়ির বাসিন্দা, প্রত্যক্ষদর্শী

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:১৬
কুম্ভমেলার ভিড়।

কুম্ভমেলার ভিড়। ছবি সৌজন্যে বিপ্লব সাহা।

মহাকুম্ভে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হল, তা এ জন্মে ভোলার নয়!

মহাকুম্ভে গিয়ে অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা হবে ভেবেই গিয়েছিলাম। কিন্তু যা হল, তা ঠিক উল্টো। চোখের সামনেই দেখলাম, মৃত্যু মিছিল। লক্ষ মানুষের পুণ্যস্নান কয়েক মিনিটের ব্যবধানে মৃত্যুর হাহাকারে বদলে গেল। কোথাও নিজের মাকে হারিয়ে ছেলের আর্তনাদ, কোথাও স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রীর বুক ফাটা কান্নার শব্দ— এই দৃশ্য দেখার পরে আর টিকতে পারিনি প্রয়াগে, রাতারাতি চলে এসেছিলাম বেনারসে।

গত ২৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আমরা পৌঁছেছিলাম প্রয়াগে। পৌঁছেই রওনা দিই ঘাটের উদ্দেশ্যে। ঘাটে যাওয়ার পথেই শুনলাম, ঘোষণা করা হচ্ছে, সন্ধে ৭.৩১ মিনিট থেকে মৌণী অমাবস্যা শুরু হয়ে যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ স্নান শুরু করতে পারেন। তখন চতুর্দিক থেকে কয়েক লক্ষ মানুষ ঘাটের দিকে এগিয়ে আসছেন। সেই ভিড়ের মধ্যেই রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ আমরা স্নান সেরে নিলাম। কোনওরকমে বহু মানুষের ভিড় ঠেলে আমরা ঘাটের থেকে একটু দূরে এলাম। কিন্তু যত মানুষ স্নান করে উঠে আসছেন, তার কয়েকগুণ মানুষ স্নানের জন্য ফের ঘাটে জড়ো হচ্ছেন। যাঁরা কুম্ভে এসে মাথা গোঁজার কোনও ঠাঁই পাননি, এমন বহু মানুষ চাদর পেতে শুয়ে ছিলেন গঙ্গার পাড়ে। তাঁরা একটি ব্যারিকেডের ভিতরে শুয়ে থাকলেও ভিড় যখন অতিরিক্ত বেড়ে গেল, তখন ব্যারিকেড কোথায় যেন উধাও হয়ে গেল! সেই শুয়ে থাকা মানুষগুলির উপর দিয়েই বয়ে গেল লাখো পুণ্যার্থীর ঢেউ।

এমনকী, যাঁরা ওই সময় স্নান করতে নেমেছিলেন, তাঁরাও স্নান সেরে উঠে আসতে পারছিলেন না। তাঁদের মধ্যেও কয়েকজন পায়ের তলায় চাপা পড়লেন। কেউ হয়তো প্রিয়জনের জামাকাপড় বা ফোন ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক ধারে, হঠাৎই সেই প্রিয়জনের মৃত শরীর দেখতে পেলেন তাঁরাও। এই মর্মান্তিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো ক্ষমতা ছিল না পুলিশেরও। লক্ষ মানুষের ওই ভিড়ের মাঝে খুব বেশি হলে দেড়শো পুলিশ কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তবে ঘটনার পরে দ্রুত আরও পুলিশকর্মী এবং অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছল ঘাটে।

ছুড়ে ছুড়ে মৃতদেহ তুলে দেওয়া হল গাড়িতে। ৪০-৪৫ মিনিট ধরে যেন এক ঝড় বয়ে গেল পুরো এলাকা জুড়ে, সেই ঝড়ে স্বজনহারা হলেন বহু মানুষ। সরকারি হিসেবে শুনলাম, ৩০ জন মারা গিয়েছেন, কিন্তু আমরা যা দেখলাম, তাতে অন্তত কয়েকশো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যু মিছিল দেখার পরে আর থাকতে পারলাম না প্রয়াগে। ওই দিন রাতেই চলে এলাম বেনারসে। আমাদের পুরো দলটা এখন সুস্থ অবস্থায় বাড়ির পথ ধরেছি।

অনুলিখন: সৌরভ চক্রবর্তী

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Eye Witness Suri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy