E-Paper

আগে নিম্নচাপ হলে বাড়ত চাষ, আক্ষেপ

জেলা কৃষি দফতরের সহকারী অধিকর্তা (তথ্য) সুশান্ত দত্ত জানান, জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত ধান রোয়ার সময়। এ বারে ওই সময়ে বৃষ্টির ঘাটতি থাকায় রোয়ার কাজ গতি পায়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৫৩
An image of crops

মাঠ জুড়ে সবুজ। বিষ্ণুপুরের গোপালপুর গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।

বরুণদেবের কৃপণতায় আমনের মরসুমে এ বারও লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া গেল না পুরুলিয়া জেলায়। জেলা কৃষি দফতর জানাচ্ছে, চলতি বছরে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা যেখানে ছিল ৩ লক্ষ ৪৮ হাজার হেক্টরের, সেখানে চাষ হয়েছে মাত্র ২ লক্ষ ১ হাজার ২৯৪ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রার ৫৭.৮ শতাংশই পূরণ হয়নি, যা গত বারের চেয়ে ১০ শতাংশের বেশি কম। ধান রোয়ার সময় প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না মেলায় এই পরিস্থিতি বলে দাবি কৃষি দফতর থেকে চাষিদের।

দফতরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল হাজার মিলিমিটার। অথচ বৃষ্টি হয়েছে ৭২৭ মিলিমিটার। ঘাটতি প্রায় ২৭ শতাংশ।

জেলা কৃষি দফতরের সহকারী অধিকর্তা (তথ্য) সুশান্ত দত্ত জানান, জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত ধান রোয়ার সময়। এ বারে ওই সময়ে বৃষ্টির ঘাটতি থাকায় রোয়ার কাজ গতি পায়নি।

তাঁর কথায়, “গত বারে অগস্টের মাঝামাঝি জেলা জুড়ে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় শেষ সময়েও ধান রোয়া গিয়েছিল। এ বারে তা হয়নি। কোনও কোনও ব্লকে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হলেও সামগ্রিক ভাবে জেলা সে ভাবে বৃষ্টি পায়নি।”

অবস্থা শোচনীয় রঘুনাথপুর ১, পাড়া, নিতুড়িয়া, সাঁতুড়ি, মানবাজার ১ ও ২, বরাবাজার, পুঞ্চার মতো একাধিক ব্লকে। আড়শার বামুনডিহা গ্রামের চাষি কৃষ্ণপদ মাহাতোর কথায়, “তিন বিঘা জমির দু’বিঘায় কোনও মতে চাষ করতে পেরেছি। ক’দিন নিম্নচাপের বৃষ্টিটা হল বলে নিকানে (জমির আগাছা তোলা) সুবিধা হল।”

বান্দোয়ানের লিকি গ্রামের প্রদীপকুমার মাহাতোও জানান, চার একর জমির মধ্যে মেরেকেটে দেড় একরে চাষ করতে পেরেছেন। তাঁর আক্ষেপ, “রোয়ার সময়ে বৃষ্টিই পাইনি। নিম্নচাপের বৃষ্টিটা যদি ক’দিন আগে আসত।”

কৃষি দফতর জানাচ্ছে, আমনের মরসুম শেষে আগামী শীতে বিকল্প চাষই ভরসা। তাতে চাষিদের ক্ষতি যতটা সম্ভব পূরণ করার চেষ্টা হবে।

তুলনায় কিছুটা ভাল অবস্থা বাঁকুড়া জেলায়। দেরিতে বৃষ্টি শুরু, অনিয়মিত বর্ষণ ভোগালেও গত বছরের তুলনায় এ বারে সামান্য হলেও জেলায় বেড়েছে আমন চাষের এলাকা। কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরে আমনের মরসুমে চাষ হয়েছিল প্রায় ২ লক্ষ নব্বই হাজার হেক্টর জমিতে। এ বারে হয়েছে ২ লক্ষ ৯৫ হাজার হেক্টর জমিতে। যদিও তা চাষের লক্ষ্যমাত্রা, ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার হেক্টরের চেয়ে বেশ কম।

এ বছরে শুরু থেকে বৃষ্টির ঘাটতি ছিল জেলায়। অনেক চাষিই সময়ে বীজ তৈরি করতে পারেননি। অগস্টের মাঝামাঝি বৃষ্টি কিছুটা বাড়লে গতি পায় চাষ। কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, জেলার মধ্যে ছাতনা ব্লকে সব চেয়ে কম জমিতে চাষ হয়েছে। তার পরে রয়েছে শালতোড়া, গঙ্গাজলঘাটি, মেজিয়া, খাতড়া ও হিড়বাঁধ ব্লক।

জেলা কৃষি অধিকর্তা নারায়ণচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “এ বছরে এ পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে ৩৪ শতাংশ। অনেক জমিতে ধান চাষ করা যায়নি। ওই সব জমিতে চাষিদের এখন বিরি কলাই চাষে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। ব্লকগুলিতে বীজও বিলি করা হয়েছে। পরে সর্ষে ও ডাল শস্য চাষেরও সুযোগ থাকছে।”

তবে কলাই চাষ নিয়ে দোটানায় চাষিদের একাংশ। গঙ্গাজলঘাটির বড়বাইদ গ্রামের বিকাশ মণ্ডল বলেন, “বৃষ্টিতেই চাষাবাদ হয়। এ বছরে জলের অভাবে চাষ করা গেল না। কলাই চাষ করব কি না, ঠিক করিনি।”

গঙ্গাজলঘাটিরই ঘটক গ্রামের গগন ঘটক জানান, ধান চাষ হয়নি। জলের যা অবস্থা, তাতে অন্য চাষ করতে সাহস পাচ্ছেন না। বড়জোড়ার রবি মণ্ডল তবে বলেন, “ধানের বীজতলা করেছিলাম। তবে জলের অভাবে বীজের বয়স বেড়ে গেল। ধান চাষ করা হয়নি। ভাল দামের আশায় বিরি কলাই চাষ করছি।”

কৃষিকর্তারাও জানান, কলাই চাষে কম জল লাগে। আর বাজারে ভাল দামও মেলে। চাষিরা কলাই চাষ করলে লাভবান হতে পারবেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Farmers crops Amon paddy purulia

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy