রামপুরহাটে প্রতিমা তৈরি। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।
গ্রামে কোনও দুর্গাপুজো ছিল না। পুজোর চার দিন মন ভারী হয়ে যেত সকলের। সেই আক্ষেপ মেটাতে মিলিত ভাবে দুর্গাপুজো করার সিদ্ধান্ত হয়। পুজো শুরুর নেপথ্যে থাকা এই গল্প চেনা হলেও সেটাই কোথাও একসূত্রে বেঁধেছে খয়রাশোলের আমলাকুড়ি ও কড়িধ্যা গ্রামকে। এবারই প্রথম দুর্গাপুজো হচ্ছে দুই গ্রামে। তাকে ঘিরে উত্তেজনায় ফুটছে দুই গ্রামের আট থেকে আশি। দুই গ্রামেই তৈরি হচ্ছে প্রতিমা।
আমলাকুড়ি গ্রামটি রয়েছে খয়রাশোলের লোকপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। ঝাড়খণ্ড লাগোয়া ওই গ্রামে বাস করেন কমবেশি ৭০০ মানুষ। অধিকাংশই কৃষিজীবী। তাঁরাই মিলিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবার দুর্গাপুজো করবেন। গ্রামের বাসিন্দা খগেন গোপ, শান্তি গোপ, দিলীপ গোপ, ধরম বাউড়িরা জানান, বছর ভর পরিশ্রমের মাঝে পুজোয় ক’টা দিন ছুটি। গ্রামে একটাও পুজো না থাকায় সেই সময় যেন কাটতে চাইত না। মনভার থাকত বাড়ির মাহিলাদের। সবচেয়ে খারাপ লাগা থাকত ছোটদের। তাই এই সিদ্ধান্ত। এতে খুশি সকলেই। গ্রামের বধূ দীপালি রায় জানাচ্ছেন, ৪০ বছর আগে এই গ্রামে বিয়ে হয়েছে তাঁর। পরিপূর্ণ সংসার। বলছেন, ‘‘এত দিন পরে গ্রামে পুজো হচ্ছে শুনে ভীষণ আনন্দ হচ্ছে।’’
গ্রামের কালী মন্দিরের নাটশালায় প্রতিমা গড়ার কাজ চলছিল সোমবার। সেটা দেখতে দেখতেই স্কুল পড়ুয়া পল্লব গোপ, পল্লবী রায়, অভিজিৎ গোপেরা জানাল ওদের আনন্দের কথা। এই গ্রামে একমাত্র উৎসব এত দিন ছিল কালীপুজো। সেটাও মাঘ মাসে। জানা গিয়েছে, পুজো
পরিচালনার দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে গ্রামের মাতৃ ক্লাব। উদ্দীপনা এতটাই যে কয়েক জন বাসিন্দা মিলিত ভাবে দুর্গা মন্দির তৈরির জন্য জমি পর্যন্ত দান করেছেন। আন্তরিক ভাবে পুজো করার পরের লক্ষ্য মন্দির গড়া।
একই ছবি খয়রাশোলের রূপসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কড়িধ্যায়। গ্রামের লক্ষ্মী পুজোর জন্য তৈরি নাটমন্দিরে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। সেখানে ভিড় করছেন ছেলে-বুড়ো সকলেই। তবে আফশোস, অতিমারির প্রকোপ না হলে গতবারই ওই গ্রামে দুর্গাপুজো হতে পারত। শাল নদী ঘেঁষা এই গ্রামে শ’দেড়েক পরিবারের বাস। গ্রামবাসী শ্রীকান্ত গড়াই, শঙ্কর গড়াই, রমেশ গড়াইরা জানাচ্ছেন, গ্রামে দুর্গা বা কালীপুজোর মতো কোনও পুজো না থাকার থাকার আক্ষেপ মেটাতে তিন দশক থেকে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো হয়ে থাকে গ্রামে। সেটা অবশ্যই সেরা উৎসব। কিন্তু, দুর্গাপুজো না থাকলে কোথাও ফাঁকা লাগত। সেই জন্য গ্রামের মানুষ গত
বছর থেকে দুর্গাপুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাতে ছেদ টেনে দিয়েছিল করোনা ভাইরাস।
গ্রামবাসী জানাচ্ছেন, পাকা মন্দির তৈরির কাজও থমকে গিয়েছিল গত বছর। এ বার মন্দির তৈরির কাজ শেষ পর্বে। প্রথমে দুর্গা, তার পরে লক্ষ্মী— টানা আট দশ দিনের আনন্দে মেতে উঠতে গোটা গ্রাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy