Advertisement
E-Paper

১৬ বছরের পাত্রীকে বিয়ে, বাড়িতে পুলিশ

সোনামুখী থানার পুলিশের দাবি, বিয়ে হয়েছে বিষ্ণুপুরের কোথাও। অভিযোগ পেয়ে বিষ্ণুপুরের রাধানগর ফাঁড়ির পুলিশ তদন্তে গিয়েছিল। কিন্তু, বর-কনে কাউকেই পাওয়া যায়নি।

শুভ্র মিত্র

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৮ ০৩:০৪
ভোজবাড়ির প্যান্ডেল বাঁধার জন্য আনা হয়েছিল বাঁশ। নিজস্ব চিত্র

ভোজবাড়ির প্যান্ডেল বাঁধার জন্য আনা হয়েছিল বাঁশ। নিজস্ব চিত্র

নাবালিকা বিয়েতে এ বার নাম জড়াল মৎস্য দফতরের এক অস্থায়ী কর্মীর। গত ২৯ জুন মন্দিরে গিয়ে তিনি সোনামুখী থানা এলাকার ১৬ বছর দু’মাসের এক কিশোরীকে বিয়ে করেন বলে অভিযোগ। চাইল্ড লাইনের মারফৎ খবর পেয়ে বিষ্ণুপুরের লয়ার গ্রামের ওই বাসিন্দা খোকন কোলের বিরুদ্ধে সোনামুখী থানায় অভিযোগ দায়ের করে জেলা সমাজ কল্যাণ দফতর। যদিও পুলিশের দাবি, খোকন পলাতক। তবে কিশোরীকে উদ্ধার করে বুধবার তাকে পরিবারের হাতে তুলে দেন চাইল্ড লাইনের কর্মীরা।

খোকন আগে বিষ্ণুপুর আদালতের মুহুরী ছিলেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি তিনি মৎস্য দফতরে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ পেয়েছেন। তারপরেই তিনি বিয়ে করেন। বাঁকুড়া জেলা চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর সজল শীল বলেন, ‘‘সোনামুখী থানার ১৬ বছর দু’মাস বয়সের এক নাবালিকার সোনামুখী শহরের এক কালী মন্দিরে বিয়ে হয়েছে বলে আমাদের কাছে খবর আসে। পাত্র ওই নাবালিকাকে নিয়ে বিষ্ণুপুর থানার লয়ার গ্রামে আছে বলে জানতে পেয়ে সোমবার রাতে সোনামুখী থানায় জানাই।’’

সোনামুখী থানার পুলিশের দাবি, বিয়ে হয়েছে বিষ্ণুপুরের কোথাও। অভিযোগ পেয়ে বিষ্ণুপুরের রাধানগর ফাঁড়ির পুলিশ তদন্তে গিয়েছিল। কিন্তু, বর-কনে কাউকেই পাওয়া যায়নি। জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক জয়ন্ত রায় বলেন, ‘‘নাবালিকাকে বিয়ে করা অপরাধ। চাইল্ড লাইনের কাছে খবর পেয়েই সোনামুখী থানায় ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।’’

এ দিকে, খোকনের বিয়ে উপলক্ষে গ্রামের লোকেদের ভোজ দেওয়ার জন্য লয়ার গ্রামে কোলে বাড়িতে রীতিমতো অনুষ্ঠানের আয়োজন শুরু হয়ে গিয়েছিল। এ দিন লয়ার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, খোকনের বাড়ির সামনে প্যান্ডেল বাঁধার জন্য বাঁশ পড়ে গিয়েছে। চলে এসেছে কচি পাঁঠা। ছাঁটা হয়েছে বাড়ি সংলগ্ন উঠোনের ঘাসও। কিন্তু, বাড়িতে পুলিশ খোকনের খোঁজে আসার পর থেকেই আপাতত সব বন্ধ।

খোকনের দেখা পাওয়া যায় নি। তাঁর দাদা স্বপন কোলে বলেন, ‘‘৪২ বছর বয়েস হয়ে গেলেও মেয়ে পছন্দ হচ্ছিল না ভায়ের। এ দিকে বাবা অসুস্থ। তাই ভাল পাত্রীর খোঁজ পেয়ে ২৯ শে জুন ১৮ জন বরযাত্রী নিয়ে ভাইয়ের বিয়ে দিয়ে এসেছি। ভাই ও তার স্ত্রী দু’জনে আত্মীয় বাড়ি নিমন্ত্রণ খেতে গিয়েছে।’’ খোকনের বৌদি বলেন, ‘‘মেয়েরা গরিব বলে কিছু পণ নেওয়া হয়নি। তাই সোনামুখীর কালী মন্দিরে বিয়ে দিয়ে নিয়ে এসেছি।’’ খোকনের দাদার আক্ষেপ, ‘‘আগামী সোমবার গ্রামের লোকজন ও আত্মীয়দের বিয়ের ভোজে খাওয়ানোর তোড়জোড় করছিলেন। কিন্তু, পুলিশের খোকনের খোঁজ শুরু করায় সে সব মাটি হয়ে গেল।’’

সামনে না এলেও ফোনে খোকন বলেন, ‘‘ভুল করে বিয়ে করেছি। তবে এখন ঘর করব না। বউয়ের আগে ১৮ বছর বয়স হোক, তারপরেই ঘর করব।’’ চাইল্ড লাইন সূত্রে খবর, ওই কিশোরী একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া। এ দিন লয়ার গ্রামে গিয়ে তাঁরা ওই কিশোরীকে নিয়ে সোনামুখী থানায় যান। সেখানে কিশোরীর বাবাকে ডেকে আনা হয়। চাইল্ড লাইনের কর্মীদের কাছে তিনি দাবি করেন, ১৮ বছরের কমে যে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া আইনত অপরাধ, তা তিনি জানতেন না। মেয়েকে তিনি এখন পড়াবেন বলে চাইল্ড লাইনের কর্মীদের কাছে তিনি মুচলেকাও দেন।

লয়ার গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে সুধীর বাউল, তপন খান বলছেন, ‘‘অল্প বয়সে বিয়ে করা গ্রামেরই এক জনের অসুস্থ ছেলেমেয়ে জন্মেছিল। তাই কম বয়েসে বিয়ে মোটেই ভাল নয়।’’

Child Marriage Bishnupur Fishery Department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy