Advertisement
০৯ অক্টোবর ২০২৪
Flood Situation

ডিভিসি-র জলে বাঁকুড়ার চার ব্লকে বন্যা পরিস্থিতি! বাড়িঘর ছেড়ে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় শয়ে শয়ে মানুষের

মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে ধীরে ধীরে ছাড়া জলের পরিমাণ বৃদ্ধি হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুর থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেয় ডিভিসি।

Flood in Bankura

বাঁকুড়ায় জলবন্দি বাড়িঘর। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৭
Share: Save:

দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে হু-হু করে জল ঢুকে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হল বাঁকুড়া জেলায়। প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করে কেন্দ্রীয় সরকারের ঘাড়ে বন্যার দায় চাপালেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক।

মঙ্গলবার রাত থেকেই জল ঢুকতে শুরু করেছে বড়জোড়ার মানাচর এবং সোনামুখী ব্লকের নিত্যানন্দপুর ও সমিতি মানা এলাকায়। তড়িঘড়ি দুর্গতদের স্থানীয় ত্রাণশিবিরে নিয়ে যায় প্রশাসন। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকায় যেতে শুরু করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী এবং জনপ্রতিনিধিরা। মুখ্যমন্ত্রী নিজে বুধবার হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুরের প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। দুপুরে বাঁকুড়ার বড়জোড়ার মানাচর এলাকা পরিদর্শনে যান রাজ্যের মন্ত্রী মলয়। দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি বাঁকুড়ার সার্কিট হাউসে বন্যা মোকাবিলায় জেলার প্রশাসনিক আধিকারিক ও জন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বন্যা পরিস্থিতির জন্য তিনি দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)-এর একতরফা সিদ্ধান্তকে দায়ী করেন। অন্য দিকে, বন্যা পরিস্থিতির জন্য পাল্টা রাজ্য সরকারকে দূষেছেন কেন্দ্রের প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার।

আশ্রয়ের খোঁজে।

আশ্রয়ের খোঁজে। —নিজস্ব চিত্র।

মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে ধীরে ধীরে ছাড়া জলের পরিমাণ বৃদ্ধি হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুর থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেয় ডিভিসি। সন্ধ্যায় দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে ছাড়া জলের পরিমাণ আড়াই লক্ষ কিউসেক ছাড়িয়ে যায়। তার পরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দামোদর তীরবর্তী বড়জোড়া, সোনামুখী, পাত্রসায়ের এবং ইন্দাস ব্লকের একাংশে। সব চেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে বড়জোড়া ব্লকের মানাচর এবং সোনামুখী ব্লকের নিত্যানন্দপুর, সমিতি মানা ও পাণ্ডে পাড়া এলাকায়। দুর্গাপুর ব্যারাজের ছাড়া জল স্থানীয় একটি খালের দুই কূল ছাপিয়ে মানাচরের বিস্তীর্ণ এলাকায় ঢুকে পড়েছে। পল্লিশ্রী মানা, সীতারামপুর এলাকা-সহ বিশাল এলাকা জলমগ্ন। বন্যা ঠেকাতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় একটি নদীবাঁধ উঁচু করার কাজ শুরু করেছিল প্রশাসন। কিন্তু তা-ও শেষরক্ষা হয়নি। মঙ্গলবার রাত থেকেই সেই বাঁধ ছাপিয়ে হু-হু করে দামোদরের জল ঢুকতে শুরু করে বিভিন্ন এলাকায়। তার জেরে বুধবার সকালেও কিছু মানুষকে ত্রাণশিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

বাঁকুড়ার বড়জোড়ার মানাচরে স্থানীয় বিধায়ক অলোক মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে বন্যাকবলিত এলাকায় যান মন্ত্রী মলয়। দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে বাঁকুড়ার সার্কিট হাউসে জেলাশাসক সিয়াদ এন, পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি-সহ প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী, রাজ্যের খাদ্য সরবরাহ দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী তথা রানিবাঁধের বিধায়ক জ্যোৎস্না মান্ডি-সহ অন্যান্য বিধায়কের সঙ্গে কথা বলেন। মলয় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমি বন্যাকবলিত বাঁকুড়ায় এসেছিলাম। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে। ত্রাণশিবির খোলা থেকে শুরু করে ত্রাণ বিলির কাজ শুরু হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ডিভিসি রাজ্যকে কোনও কিছু না জানিয়ে জলাধারগুলি থেকে লক্ষ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়ে দিয়েছে। এর ফলেই এই বন্যা হয়েছে।’’ যার প্রেক্ষিতে বিজেপি নেতা সুভাষ বলেন, ‘‘মলয় ঘটক মিথ্যা কথা বলছেন। কেন্দ্রের যে কমিটি জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাতে রাজ্যের প্রতিনিধিও আছেন। তাই রাজ্য ‘জানি না’ বলে দায় এড়াতে পারে না। আসলে রাজ্য সরকার এবং শাসকদলের মদতে প্রতিটি নদীতে অবৈধ বালি কারবার এবং অবৈধ নির্মাণের ফলে নদীগুলির জলধারণ ক্ষমতা কমে এসেছে। তাই এই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE