রবিবার রাতে এক গৃহস্থের রান্নাঘরে ভেঙে, গোলার ধান নষ্ট করে ইলামবাজার হয়ে জেলায় ঢুকেছিল তিনটি হাতি। তার পরে পেরিয়ে গিয়েছে আরও পাঁচ দিন। এই ক’দিনে সাঁইথিয়া শহর ও আশপাশের এলাকায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে তারা। ফসলের ক্ষতি ছাড়াও শুঁড়ে জড়িয়ে আছড়ে জখম করেছে কয়েক জনকে। কিন্তু বিস্তর চেষ্টা করেও বন দফতর হাতির দলটিকে জেলার সীমানা পার করাতে পারেনি।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মহম্মদবাজারের কদমহিড় জঙ্গলে রয়েছে হাতিগুলি। সেখান থেকে সামান্য দূরে ঝা়ড়খণ্ডের গভীর জঙ্গল। ‘ঐরাবত ভ্যান’-এর ফ্লাড লাইট দিয়ে হাতিগুলির চোখ ধাঁধিয়ে রাতে জেলা থেকে তাড়ানোর চেষ্টা করা হবে। বড় ফ্লাড লাইট, বিশেষ সাইরেন, ঘুমপাড়ানি গুলি ইত্যাদি সরঞ্জাম রাখা থাকে হাতি তাড়ানোর বিশেষ গাড়ি ‘ঐরাবত ভ্যান’-এ। ২০-২৫ জন মানুষের বসার বন্দোবস্তও থাকে। ডিএফও (বীরভূম) কল্যাণ রায় জানান, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর এবং মেদিনীপুর থেকে দু’টি ‘ঐরাবত ভ্যান’ আনানো হয়েছে হাতি খেদানোর জন্য। ফ্লাড লাইট দিয়ে চোখ ধাঁধিয়ে হাতিগুলির গতিপথ বদল করার চেষ্টা করা হবে বলে তিনি জানান।
এই পদ্ধতি সোমবারই ব্যবহার করেছিল বন দফতর। কিন্তু বিশেষ কাজ হয়নি। বন দফতর সূত্রের খবর, ওই দিন ফ্লাড লাইটে চোখ ধাঁধিয়ে হাতিগুলিকে অজয় পার করানোর চেষ্টা করেছিলেন বনকর্মীরা। কিন্তু হাতিগুলি উল্টে বোলপুরের দিকে হাঁটা দেয়। ইলামবাজার হয়ে সোমবার গভীর রাতে সাঁইথিয়ার আমোদপুর এলাকার জুঁইথা ও পাহাড়পুরের জঙ্গলে ঢুকে পড়েছিল হাতিগুলি। মঙ্গলবার দিনের আলো কমতেই বনকর্মীরা দলটিকে ইলামবাজারের দিকে পাঠানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু চোখে ধুলো দিয়ে হাতিগুলি বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরে বুধবার ভোর ৪টে নাগাদ সাঁইথিয়া ৭ নম্বর ওয়ার্ডে, কলেজের পিছনের মাঝিপাড়ায় পৌঁছয়। শুঁড়ে জড়িয়ে আছাড় মেরে জখম করে বেশ কয়েক জনকে।
বুধবার ছবিটা ছিল অন্য রকমের। হাতির হানায় জখম হতে হয়েছে বেশ কয়েক জনকে। ওই দিন সকালে শহর ছোঁয়া ময়ূরাক্ষী নদীর চরে আশ্রয় নেওয়া হাতিগুলিকে দেখতে ভিড় ভেঙে পড়ে। আরও চমক ছিল বিকেলে। বন দফতর ও হুলা পার্টির তাড়া খেয়ে হাতিগুলি চর ধরে সোজা শহরের দিকে এগোতে থাকে। সাড়ে ৫টা নাগাদ দলটি পৌঁছয় শহরের ব্যস্ত ভাসাব্রিজে। সেই সময়ে ভিড় সামাল দিতে কার্যত হিমসিম খেয়েছেন বনকর্মীরা। পরিস্থিত বিগড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় দলের বড় হাতিটির পা লক্ষ করে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোঁড়া হয়। ডিএফও বলেন, ‘‘সাধারণত লোকালয়ে বা জলাশয়ের কাছে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোঁড়া হয় না। পরিস্থিতির খাতিরে খুব অল্প মাত্রার ওষুধ দেওয়া হয়েছিল।’’
কিন্তু গুলি লাগলেও কাজ হয়নি। দুলকি চালে চর ধরে মহম্মদবাজারের দিকে হাঁটতে থাকে দলটি। পিছনে দু’টি ‘ঐরাবত ভ্যান’ এবং সমস্ত সরঞ্জাম নিয়ে চলতে থাকে হুলা পার্টি ও বনকর্মীরা। রাত ৮টা নাগাদ নদীর পাড়ে, সাইথিয়ার দেরিয়াপুর এলাকার সাউলডিহি গ্রামের স্বপন ধীবর হাতির সামনে পড়ে গেলে তাঁকেও আছাড় মারে হাতিগুলি। সিউড়ি হাসপাতাল থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছাড়া পান স্বপনবাবু।
বৃহস্পতিবার সারাদিন মহম্মদবাজারের শেওড়াকুড়িতে নদীর চর লাগোয়া ওলার ঝোরে বিশ্রাম নেয় দলটি। বন দফতর সূত্রের খবর, ওই দিন বিকেলে রাস্তার দু’পাশে ‘ঐরাবত ভ্যান’ লাগিয়ে দলটিকে রাস্তা পার করানো হয়। সেই সময়ে শেওড়াকুড়ি থেকে সিউড়ি যাওয়ার পথে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে মিনিট পনেরোর জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
ডিএফও (বীরভূম) জানান, হাতি খেদানোর জন্য দু’টি ‘ঐরাবত ভ্যান’ ছাড়াও দুর্গাপুর থেকে দু’টি বিশেষ ক্রেন, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর ও বড়জোড়া থেকে দু’টি হুলা পার্টি আনা হয়েছে। জেলার রাজনগরের একটি হুলা পার্টি কাজ করে চলেছে। বর্ধমান থেকেও একটি হুলা পার্টি আনানো হয়েছিল।
এই সমস্ত আয়োজন দিয়ে কবে জেলা-ছাড়া করা যাবে হাতির দলটিকে, সেই অপেক্ষায় রয়েছেন সাধারণ মানুষ।
দুর্ঘটনায় মৃত। পিছন থেকে ডাম্পারের ধাক্কায় মৃত্যু হল এক সাইকেল আরোহীর। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বোলপুরের লালপুল এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম ঘুঙ্গুর কুমার (২৯)। বাড়ি বোলপুরের সুরশ্রীপল্লির ঘাটোয়াল পাড়ায়। গাড়ি ও চালককে আটক করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। লালপুল থেকে দর্জিপট্টিতে নিজের বাড়ি ফিরছিলেন ওই যুবক। তখনই ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় বোলপুর শহরে ভারী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার কথা ভাবছে প্রশাসন। দিন দুয়েকের মধ্যে তা নিয়ে নির্দেশিকা আসতে চলছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy