Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
হোমগার্ডে রঞ্জিত পাল

টাস্ক ফোর্সের নিরাপত্তায় পুলিশে যোগ

এ দিন কলকাতা থেকে রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের ঘেরাটোপে বাঁকুড়া পুলিশ লাইনে আসেন রঞ্জিত। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর আসার কথা ছিল সকাল ১০টায়। কিন্তু পুলিশ লাইনে ঢোকেন দুপুরে। নথিপত্রে সই করে কাজে যোগ দেন রঞ্জিত। তাঁর সঙ্গে মাওবাদী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় অভিযুক্ত আরও ৪২জন এ দিন হোমগার্ডের কাজে যোগ দেন।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৭ ০১:৪১
Share: Save:

পুলিশের চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন প্রাক্তন মাওবাদী নেতা। আর তার নিরাপত্তায় রয়েছে স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স। সোমবার আত্মসমর্পণ করা রঞ্জিত পালকে ঘিরে এমনই ছবি দেখল বাঁকুড়া জেলা।

এ দিন কলকাতা থেকে রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের ঘেরাটোপে বাঁকুড়া পুলিশ লাইনে আসেন রঞ্জিত। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর আসার কথা ছিল সকাল ১০টায়। কিন্তু পুলিশ লাইনে ঢোকেন দুপুরে। নথিপত্রে সই করে কাজে যোগ দেন রঞ্জিত। তাঁর সঙ্গে মাওবাদী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় অভিযুক্ত আরও ৪২জন এ দিন হোমগার্ডের কাজে যোগ দেন। যদিও হোমগার্ড হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পরেই ৪২ দিনের যে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিতে হয় রঞ্জিত তিনি নেননি। ঘণ্টা খানেক থেকেই ফের কলকাতা রওনা হয়ে যান। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘রঞ্জিতের স্ত্রী অসুস্থ থাকায় এ দিন কাজে যোগ দিয়েই বেরিয়ে যান তিনি। কবে ওঁর প্রশিক্ষণ হবে তা নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়ায় যোগ দিলেও রঞ্জিত কাজ করবেন অন্য জেলাতে।

১৯৯৮ সালের এক বর্ষায় কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন বারিকুলের খেজুরখন্না গ্রামের রঞ্জিত পাল। তখন বারিকুল হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। বই কেনার টাকা নেই। নাম লিখিয়েছিলেন তৎকালীন জনযুদ্ধ গোষ্ঠীতে। সিপিআই (মাওবাদী)-র বিভিন্ন স্কোয়াডে থাকাকালীন বিভিন্ন নাম ছিল তাঁর— নিতিন, রাহুল, প্রভাতজী, সিরাজ এমন অনেক। জঙ্গলমহলে প্রায় পঞ্চাশটি খুন ও মাওবাদী নাশকতার মামলায় অভিযুক্ত রঞ্জিত। ২০০৫-এর জুলাইয়ে বারিকুল থানার তদানীন্তন ওসি প্রবাল সেনগুপ্ত মাওবাদীদের বুবি ট্র্যাপে নিহত হন। ওই ঘটনায় রঞ্জিতকে গ্রেফতার করা হলেও পরে তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে গা-ঢাকা দেন।

ফের তাঁর নাম উঠে আসে ২০০৭-এর মার্চে, পূর্ব সিংহভূম জেলার বাকুরিয়ায় ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সাংসদ সুনীলকুমার মাহাতোকে গুলি করে খুনের ঘটনায়। ২০১০-এর অক্টোবরে অযোধ্যা পাহাড়ে পুলিশ ইনস্পেক্টর পার্থ বিশ্বাস ও স্কুলশিক্ষক সৌম্যজিৎ বসু খুন হন। ২০১২-তে ধরা পড়া মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম দাবি করেছিলেন, রঞ্জিত পাল ওই দু’জনকে খুন করেন আর তাতে সম্মতি দেন কিষেণজি। প্রায় ১৭ বছর ধরে সক্রিয় মাওবাদী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রঞ্জিত। সিপিআই (মাওবাদী)-এর রাজ্য মিলিটারি কমিশন ও দলের বাংলা-ঝাড়খণ্ড-ওড়িশা বর্ডার রিজিওনাল কমিটির সদস্য ছিলেন।

২০১১-য় কিষেণজি নিহত হওয়ার পর রঞ্জিত ও তাঁর স্ত্রী অনিতা ওরফে ঝর্ণা কিছু দিন রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। পরে ঝাড়খণ্ডে ঢুকে তাঁরা কাজ শুরু করেন। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ডের ভূমিপুত্র মাওবাদীদের দাপটে দলে কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিলেন রঞ্জিতরা। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ে সেই রাজ্যেই থাকতে হচ্ছিল। ঘনিষ্ঠ মহলে রঞ্জিত আশঙ্কা প্রকাশ করেন, তাঁকে দলের কেউই খুন করতে পারে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর গোয়েন্দারা রঞ্জিতকে সস্ত্রীক আত্মসমর্পণে রাজি করান।

চলতি বছর ২৫ জানুয়ারি সস্ত্রীক আত্মসমর্পণ করেছিলেন রঞ্জিত। ওই দম্পতি এখন কলকাতায় স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছেন। রঞ্জিতের স্ত্রী অনিতা ছিলেন দলমা-অযোধ্যা জোনাল কমিটির সদস্য ও অযোধ্যা এরিয়া কমিটির সম্পাদক। পুলিশের একটি সূত্রের খবর, সম্প্রতি অনিতাও পূর্ব মেদিনীপুরে হোমগার্ড হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছেন।

জঙ্গলমহলে মাওবাদী দমন অভিযানে সক্রিয় ভাবে থাকা বাঁকুড়ার এক পুলিশ আধিকারিক এ দিন বলেন, ‘‘একটা সময়ে যে ছিল আমাদের খাতায় মোস্ট ওয়ান্টেড, আজ সে-ই আমাদের সহকর্মী হল। অন্য রকমের একটা অনুভূতি হচ্ছে।’’ আর, ছেলে মূল স্রোতে ফিরে আসুক, সেই ইচ্ছের কথা বরাবর বলে এসেছিলেন রঞ্জিতের মা অলকা পাল। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমি খুব খুশি হয়েছি। ও আগামী দিনে ভাল করে কাজ করুক এটাই চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE