Advertisement
E-Paper

নানা ফন্দি, টাকা তুলছে প্রতারকেরা

সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দিতে হোক, কিংবা নিখরচার স্বাস্থ্যপরীক্ষা— নানা ফিকিরে প্রত্যন্ত গ্রামে ঢুকে লোকজনকে প্রতারণা করা চলছে পুরুলিয়ায়। বিচ্ছিন্ন ভাবে এমন ঘটনা ঘটে চললেও থানায় খুব কম অভিযোগই জমা পড়ছে। ফলে প্রতারণা করেও অনেকে পার পেয়ে যাচ্ছে বলে পুলিশের একাংশের মত।

সমীর দত্ত

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৮ ০৭:১০
—প্রতীকী ছবি

—প্রতীকী ছবি

পুঞ্চার ব্লক অফিসের কর্মীদের পরিচয় দিয়ে গ্রামে গ্রামে আধার কার্ড করিয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে সম্প্রতি। জেলার অন্য বিভিন্ন জায়গা থেকেও প্রায়ই উঠে আসে এ রকমেরই নানা অভিযোগ। কিন্তু দুষ্টচক্রের লোকজন কেন ধরা পড়ে না? প্রশ্নটা তুলছেন অনেকেই।

সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দিতে হোক, কিংবা নিখরচার স্বাস্থ্যপরীক্ষা— নানা ফিকিরে প্রত্যন্ত গ্রামে ঢুকে লোকজনকে প্রতারণা করা চলছে পুরুলিয়ায়। বিচ্ছিন্ন ভাবে এমন ঘটনা ঘটে চললেও থানায় খুব কম অভিযোগই জমা পড়ছে। ফলে প্রতারণা করেও অনেকে পার পেয়ে যাচ্ছে বলে পুলিশের একাংশের মত।

কিছু দিন আগে মানবাজার থানার খাটচিরি গ্রামে ধোপধুরস্ত পোশাকে কয়েকজন যুবক গিয়ে নিজেদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য বলে পরিচয় দেন। গ্রামবাসীদের তাঁরা জানান, বয়স্ক মানুষদের নিখরচায় তাঁরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা করেন। শুধু নাম লেখাতে সে দিনই ৫০ টাকা করে তাঁরা চেয়েছিলেন। অনেকেই টাকা দেন। সেই যুবকদের দিয়ে যাওয়া ঠিকানায় সম্প্রতি বিরাশি বছরের বৃদ্ধা মা ইছামতীদেবীকে নিয়ে মানবাজারে যান খাটচিরি গ্রামের বাসিন্দা ফকির মাহাতো। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ওই যুবকদের দেওয়া ঠিকানায় কাউকেই তো খুঁজে পেলাম না। যা দিনকাল পড়েছে, কে কী মতলবে ঘুরছে বোঝা যাচ্ছে না। বিশ্বাস করলেই পদে পদে ঠকতে হচ্ছে।’’

পুঞ্চা থানার বুধপুর পঞ্চায়েত অফিসের কাছে কমিউনিটি হলে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কয়েক মাস আগে নার্সিং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাঁদের বোঝানো হয়েছিল, প্রশিক্ষণ শেষে নার্সের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন। সে জন্য পাঁচশো থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছিল বলে তাঁদের দাবি। বিডিও পরিদর্শন করে জানান, প্রশিক্ষণের বৈধ অনুমতিই নেই। শিক্ষার্থীরা টাকা ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। উধাও হয়ে যান স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা।

রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার আওতায় থাকা গ্রামবাসীদের নিখরচায় ছানির অস্ত্রোপচার করাতে গ্রামে গ্রামে মাঝে মধ্যেই কিছু লোকজনকে যাতায়াত করতে দেখা যায়। বছরখানেক আগে রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকায় কয়েকজন তেমনই গ্রামবাসীকে ঝালদার একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ছানির অস্ত্রোপচার করাতে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন দৃষ্টিশক্তি হারানোর অভিযোগ তোলেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে।

অভিযোগ ওঠে, সরকারি বিমা প্রকল্পের সুবিধা দেওয়ার নাম করে উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকা কিছু নার্সিংহোম ও কিছু অসাধু ব্যক্তি যোগসাজস করে গ্রাম থেকে লোকজনকে ভুল বুঝিয়ে অস্ত্রোপচার করাতে নিয়ে যাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা প্রকল্পে বিনামূল্যে গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করার নাম করে বান্দোয়ানের কয়েকটি গ্রামে কিছু যুবক টাকা তুলেছিলেন। অভিযোগ, তাঁরা গ্রামবাসীদের বুঝিয়েছিলেন, গ্যাসের সংযোগ পাইয়ে দেওয়ার জন্যে তাঁরা সমীক্ষা শুরু করেছেন। তালিকায় নাম নথিভুক্ত করার জন্যে একশো টাকা করে নেওয়া হয়। তারা আরও জানায়, সরকারি নানা প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার জন্যে বাড়ির নম্বর থাকা প্রয়োজন। বাড়ির নম্বর প্লেট দেওয়ার জন্যে তারা কুড়ি টাকা করে নিয়েছিল।

কিন্তু, কয়েকজন গ্রামবাসীর সন্দেহ হয়। তাঁরা স্থানীয় গ্যাসের ডিলারের কাছে খোঁজ করলে জানতে পারেন, পুরোটাই ভুয়ো। বান্দোয়ানের সেই গ্যাস ডিলার মণীশ অগ্রবালের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সম্প্রতি সেই পাঁচ যুবককে আটক করে। পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় তারা স্বীকার করেছে, বৈধ অনুমতি ছাড়াই তারা টাকা তুলছিল। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। ধৃতদের মধ্যে চার জন পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা থানা এলাকার ও এক জন ঝালদার বাসিন্দা।

কয়েক মাস আগে বরাবাজারের সিন্দরি গ্রামের বাসিন্দা প্রতিবন্ধী তরুণী বিচিত্রা মাহাতো পুলিশে অভিযোগ জানান, ধূপ ও বাতি তৈরির মেশিন কিস্তিতে বিক্রি করার সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেখে তিনি ১২ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু, মেশিন পাননি। টাকাও ফেরত পাচ্ছিলেন না। তদন্ত করে অধিকাংশ টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। কিন্তু, সেই সৌভাগ্য ক’জনের? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের প্রতারকদের খোঁজ মেলে না।

জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘প্রতারকেরা ভিন্ন ভিন্ন কায়দায় টাকা তুলছে। সাধারণত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়া, প্রশিক্ষণ, সস্তায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বেড়ানোর প্যাকেজ প্রভৃতির নাম করে টাকা তোলার চেষ্টা চলছে। থানায় থানায় সতর্ক করা হয়েছে। পুলিশ কর্মীদেরও নজর রাখতে বলা হয়েছে। অনেক বাসিন্দা ঠকানো টাকার পরিমাণ কম থাকায় অভিযোগ জানাতে চান না। কিন্তু অনেকের কাছ থেকে অল্প অল্প করে টাকা তুলে আখেরে বিরাট পরিমাণ টাকা লুটে নিচ্ছে প্রতারকেরা।’’

তাঁর মতে, বাসিন্দাদেরও সচেতনতার প্রয়োজন।

Fraudulent Forgery Money
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy