পুরুলিয়া স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র
বিহার প্রদেশ কংগ্রেসের ষোড়শ সম্মেলন হয়েছিল মানভূমে। সেটা ১৯২৫ সালের কথা। সম্মেলন উপলক্ষে ১২-১৩ সেপ্টেম্বর পুরুলিয়া শহরে এসেছিলেন মোহনদাস গাঁধী। সে বারই প্রথম। আর সেই স্মৃতিকে ধরে রাখতে পুরুলিয়া স্টেশনে গ্যালারি তৈরি করল রেল।
জেলার ইতিহাস গবেষক দিলীপকুমার গোস্বামী জানাচ্ছেন, বিহার প্রদেশ কংগ্রেসের অধিবেশনে যোগ দিতে মোহনদাস গাঁধী পুরুলিয়ায় এসেছিলেন। মুম্বই থেকে ট্রেনে চক্রধরপুর। চক্রধরপুর থেকে অন্য ট্রেন ধরে সিনি হয়ে পুরুলিয়া পৌঁছন ১৯২৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। চক্রধরপুরে তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য গিয়েছিলেন তিন কংগ্রেস নেতা— বিহারের রাজেন্দ্র প্রসাদ, মানভূমের অতুলচন্দ্র ঘোষ ও জীমূতবাহন সেন। এই যাত্রায় কত খরচ হয়েছিল, সেটা প্রকাশিত হয়েছিল ‘মুক্তি’ পত্রিকায়। সেখানকার তথ্য বলছে, টাকার অঙ্কটা ছিল ৪২৪ টাকা টাকা ১২ আনা। গাঁধীর জন্য বিশেষ ট্রেনের ভাড়া বাবদ ৪১০ টাকা, আর বাকি তিন জনের জন্য ১৪ টাকা ১২ আনা।
দিলীপবাবু জানান, এই সফরে মোহনদাস গাঁধী সাত দিন পুরুলিয়ায় ছিলেন। উঠেছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশের বাড়িতে। যে বাড়িটি বর্তমানে নিস্তারিণী কলেজ নামেই পরিচিত। সম্মেলনের স্থান ছিল বর্তমানে যেখানে জিলা স্কুল রয়েছে, তার পিছনে শরৎ সেনের হাটায়। এখন জায়গাটা শরৎ সেন কম্পাউন্ড নামে পরিচিত।
দিলীপবাবু জানান, সম্মেলন উপলক্ষে জেল গ্রাউন্ডে একটি প্রদর্শনীও হয়েছিল। শহরেরই অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক যুবক চাষে যন্ত্রের ব্যবহার সংক্রান্ত স্টল দিয়েছিলেন। গাঁধী মত দিয়েছিলেন, চাষে দেশীয় সনাতন ব্যবস্থাই বেশি ভাল। অমিয় তাঁকে পাল্টা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তাহলে তিনি গরুর গাড়িতে না এসে ট্রেনে এলেন কেন? দিলীপবাবু বলেন, ‘‘কথাবার্তা তার পরে কোন দিকে গড়িয়েছিল জানা যায় না। তবে যেটা জানা যায়, সেটা হল—১৪ সেপ্টেম্বর প্রদর্শনীর পুরস্কার বিতরণ করেছিলেন গাঁধী। অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ই পেয়েছিলেন প্রথম পুরস্কার।’’
সাত দিন পুরুলিয়ায় ছিলেন গাঁধী। জেলার বেশ কয়েকটি জায়গায় গিয়েছিলেন। তবে তার কোনও বিবরণ পাওয়া যায় না বলে জানাচ্ছেন দিলীপবাবু। দ্বিতীয় বার গাঁধী পুরুলিয়ায় আসেন ১৯৩৪ সালে। কুষ্ঠ নিবারনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে। ছিলেন নন্দলাল ঘোষের বাড়িতে। শহরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ড এলাকায় সেই বাড়িটিতে এখন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা চলে।
আদ্রার ডিআরএম শরদকুমার শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘ট্রেনে মোহনদাস গাঁধীর পুরুলিয়ায় আসার স্মৃতি ধরে রাখতে আমরা এই গ্যালারি তৈরি করলাম।’’ রবিবার সন্ধ্যায় পুরুলিয়া স্টেশনে গ্যালারির উদ্বোধন করেছেন সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতো। গ্যালারিতে গাঁধীর রেলভ্রমণ-সহ বেশ কিছু মুহূর্তের সাদা-কালো ফটোগ্রাফ স্থান পেয়েছে। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘দুঃখের বিষয়, ওঁর পুরুলিয়া সফরের কোন ফটোগ্রাফ এখনও পাওয়া যায়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy