ভোটের ফল জানতে মোবাইলে নজর। পড়শিদের সঙ্গে সুপুরডি গ্রামে ত্রিলোচনের মা পানো মাহাতো । নিজস্ব চিত্র
ইভিএম খোলার পর থেকেই বাড়িতে আনন্দের আবহ। তারই মাঝে হানা দিয়ে গিয়েছে দুঃস্বপ্নের সেই দিনগুলোর স্মৃতি। পুরুলিয়া কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর জয়ে আপ্লুত বলরামপুরের ত্রিলোচন মাহাতো, দুলাল কুমার এবং আড়শার শিশুপাল সহিসের পরিবার। তবে আক্ষেপও কম নেই। সকলেই বলছেন, ‘‘ছেলেগুলো বেঁচে থাকলে আজ হয়তো আনন্দের বাঁধ ভাঙত।’’
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে বারেবারে রাজনৈতিক আলোচনায় উঠে এসেছে ত্রিলোচন-দুলাল-শিশুপালের নাম। এই তিন বিজেপি কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে চাপানউতোর এখনও থামেনি। বিজেপির অভিযোগ, তাঁদের হত্যা করেছিল ‘তৃণমূল-আশ্রিত’ দুষ্কৃতীরা। যদিও সে অভিযোগ বারবার ‘মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল।
বলরামপুরের সুপুরডি গ্রামে ত্রিলোচনের বাড়ির সামনে এ দিন সকাল থেকেই ছিল বিজেপি কর্মীদের ভিড়। গণনায় জ্যোতির্ময়ের এগিয়ে থাকার খবর যত বার এসেছে, ত্রিলোচনের বাবা হাড়িরাম এবং দাদা শিবনাথের মুখের হাসি তত চওড়া হয়েছে। হাড়িরামের কথায় ধরা পড়েছে আক্ষেপও।
বলেন, ‘‘সকাল থেকেই ফল নিয়ে চিন্তা ছিল। বারবার খবর নিচ্ছিলাম। বিজেপি জিতছে শুনে আনন্দ হচ্ছে। তবে ছেলেটাই তো বেঁচে নেই। বেঁচে থাকলে ও-ই সব থেকে বেশি আনন্দ পেত।’’
গত বছরের ৩০ মে গ্রামের অদূরেই উদ্ধার হয় ত্রিলোচনের ঝুলন্ত দেহ। এলাকায় বিজেপির সংগঠন গড়ে তোলার নেপথ্যে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। সম্প্রতি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ স্বয়ং টুইটে অভিযোগ করেছিলেন, ‘তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা’ খুন করেছে ত্রিলোচনকে।
জ্যোতির্ময়ের জয়ে স্বভাবতই খুশি ত্রিলোচনের পরিবার। শিবনাথের কথায়, ‘‘পঞ্চায়েতে আমরা জিতেছি। সমিতিতেও জিতেছি। আজ আবার জয় এসেছে। কিন্তু আনন্দের মুহূর্তে ভাই নেই। তাই কষ্ট কমছে না।’’
গত বছরের ২ জুন বলরামপুরেরই বিজেপি কর্মী দুলাল কুমারের দেহ ঝুলতে দেখা গিয়েছিল তাঁদের ডাভা গ্রামের বাড়ির অদূরে হাইটেনশন বিদ্যুতের খুঁটি থেকে। এর পরেই তাঁর পরিবার অভিযোগের আঙুল তোলে তৃণমূলের দিকে। এ দিন দুলালের ভাইপো পঞ্চানন কুমার বলেন, ‘‘কাকা এখানে ঘুরে ঘুরে বিজেপির সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। পঞ্চায়েত ভোটে আমাদের গ্রামে বিজেপি জিতেছিল। আজ কাকার কথা খুব মনে পড়ছে। বেঁচে থাকলে কাকাই সব থেকে বেশি আনন্দ পেতেন।’’
এ বছরের ১৮ এপ্রিল আড়শার সেনাবন গ্রামে বাড়ির অদূরে উদ্ধার হয় বিজেপি কর্মী শিশুপালের দেহ। মৃত্যুর এক দিন আগেও তিনি বিজেপির হয়ে দেওয়াল লিখেছিলেন। ১৭ এপ্রিল সন্ধ্যার পর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরদিন তাঁর দেহ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়। শিশুপালকে ‘তৃণমূল-আশ্রিত’ দুষ্কৃতীরা খুন করেছে বলে অভিযোগ করে তাঁর পরিবার।
শিশুপালের বাবা যাদব সহিস শিরকাবাদ পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য। তিনি জানান, সকালে গণনাকেন্দ্রে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। ছেলের জন্য মন খারাপ থাকায় যাননি। বলেন, ‘‘ফল নিয়ে সারাদিন কৌতুহল ছিল। আমাদের প্রার্থীর জয়ের মধ্যে দুঃখ একটাই। দিনটা দেখে যেতে পারল না ছেলে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy