Advertisement
E-Paper

ভিডিও তুলে বোমা ঠেকালো মেয়ে

বোমার জবাব স্মার্টফোনে! আর তাকে হাতিয়ার করেই একদল দুষ্কৃতীর বোমাবাজি রুখে দিল এক তরুণী। শুধু তা-ই নয়, গোটা ঘটনার ভিডিও রেকর্ডিং করে দুই অভিযুক্তকে শনাক্তও করেছেন তিনি। শনিবার রাতে নানুরের মোহনপুর গ্রামের ঘটনা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৪১
এই সেই মোবাইল ও টর্চ। নানুরের মোহনপুরের বাড়িতে ভাই সুরজিতের সঙ্গে মৌমিতা। —নিজস্ব চিত্র

এই সেই মোবাইল ও টর্চ। নানুরের মোহনপুরের বাড়িতে ভাই সুরজিতের সঙ্গে মৌমিতা। —নিজস্ব চিত্র

বোমার জবাব স্মার্টফোনে!

আর তাকে হাতিয়ার করেই একদল দুষ্কৃতীর বোমাবাজি রুখে দিল এক তরুণী। শুধু তা-ই নয়, গোটা ঘটনার ভিডিও রেকর্ডিং করে দুই অভিযুক্তকে শনাক্তও করেছেন তিনি। শনিবার রাতে নানুরের মোহনপুর গ্রামের ঘটনা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার রাতে একদল দুষ্কৃতী মোহনপুরের কেবল্ ব্যবসায়ী অশোক ঘোষের বাড়িতে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। দরজা খোলার জন্য প্রথমে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দুষ্কৃতীরা। দরজা না খোলায় শুরু হয় গালিগালাজ। বোমা মেরে বাড়ি উড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেয় তারা। প্রাণ বাঁচাতে সপরিবারে একতলা বারন্দার ছাদে উঠে যান অশোকবাবুরা। দুষ্কৃতীরাও তাঁদের লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ার হুমকি দিতে থাকে বলে অভিযোগ। পরিবারের দাবি, ওই সময় অশোকবাবুর মেয়ে মৌমিতা নিজের স্মার্টফোনে ভিডিও তুলতে শুরু করে দুষ্কৃতীদের উদ্দেশে বলেন, ‘মার বোম! সব তুলে রাখছি। পুলিশ হাতে তুলে দেব’। তাতেই কাজ হয়। দুষ্কৃতীরা গুটিয়ে যায়। বোমা ফেলে পিঠটান দেয়।

সোমবার অশোকবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল তাঁর দুই ছেলেমেয়ের মনে ভয়ের কোনও লেশমাত্র নেই। মেয়ে মৌমিতা বর্ধমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ছেলে সুরজিৎ এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে বসবে। মৌমিতা বলেন, ‘‘রাত তখন পৌনে ১১টা। বাবা-মা উপরে ছিলেন। আমরা দুই ভাইবোন নীচের ঘরে টিভি দেখছিলাম। সেই সময় দরজায় প্রবল ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। সঙ্গে গালিগালাজও। জড়ানো গলার স্বর শুনেই বুঝতে পারি মদ্যপ অবস্থায় রয়েছে ওরা।’’ এর পরেই প্রাণ বাঁচাতে সবাই বারন্দার ছাদে উঠে যান।

মৌমিতার দাবি, সেখান থেকেই দেখতে পান সামনে রয়েছে গ্রামের দুই বাসিন্দা যাদব সামন্ত এবং বাবুলাল দাস। কিছুটা দূরে মুখে কাপড় বাঁধা অবস্থায় রয়েছে আরও কয়েক জন। ‘‘ভাইকে ওদের মুখে টর্চের আলো ফেলতে বলি। আর আমি মোবাইলে ভিডিও রেকর্ডিং করতে শুরু করি। সে কথা বলতেই ওরা বোমা ফেলে চম্পট দেয়। রাতেই পুলিশ এসে একটি বোমা উদ্ধার করে,’’—বলছেন ওই তরুণী। পরের দিন বাড়ির সামনে থেকে আরও একটি বোমা উদ্ধার হয়। সে ছবিও ধরে রাখা হয় ফোনে।

যদিও ঘটনার পরে আতঙ্ক কাটছে না অশোকবাবুর স্ত্রী রূপাদেবীর। তিনি বলছেন, ‘‘যাওয়ার সময় ওরা মেয়েকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। ও যাওয়া-আসা করে পড়াশোনা করে। জানি না, ওরা মেয়ের কোনও ক্ষতি করবে কিনা।’’ এ দিকে, অশোকবাবুর দাবি, অভিযুক্ত দু’জন পুজোর আগে তাঁর কাছে হাজার টাকা ধার চেয়েছিল। তা দিতে রাজি হওয়ায় আক্রোশবশত শনিবার রাতের হামলা।

অশোকবাবু যা-ই বলুন না কেন, ওই ঘটনার নেপথ্যেও নানুরে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়াই দেখছেন এলাকার মানুষ। অশোকবাবু একসময় সিপিএম করতেন। পরে যুব নেতা কাজল শেখের অনুগামী হয়ে তৃণমূলে নাম লেখান। সে সময় তাঁর দাপটে কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েন দলের বর্তমান জেলা যুব সভাপতি গদাধর হাজরার অনুগামী হিসাবে পরিচিত যাদব সামন্তরা। বর্তমানে কাজল শেখই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর অনুগামী অশোকবাবুকে চাপে রাখতেই ওই হামলা বলে দাবি করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। অভিযুক্তদের পরিজনদের বক্তব্যেও সেই দাবি অনেকটা স্পষ্ট হয়েছে। যাদবের বাবা কালু সামন্ত এবং বাবুলালের দাদা বাবলু দাসের অভিযোগ, ‘‘বছর দেড়েক আগে অশোক ঘোষের নেতৃত্বেই যাদব এবং বাবুলালকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। বাবুলাল কোনও রকমে পালিয়ে এলেও যাদবকে বেধড়ক মারধর করা হয়।’’ দু’জনেরই দাবি, হয়তো সেই রাগ থেকেই ওরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গালিগালাজ করে থাকতে পারে। কিন্তু বোমা মারার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।

কাজলের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর এক অনুগামীর দাবি, ‘‘এ ভাবেই দাদার অনুগামীদের কোণঠাসা করতে পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালাচ্ছে গদাধরের অনুগামীরা।’’ ফোনে চেষ্টা করেও গদাধরের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, তৃণমূলের নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘মিথ্যা অভিযোগে মোহনপুরে পরিকল্পিত ভাবে আমাদের দুই কর্মীকে ফাঁসানো হয়েছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের গল্প সংবাদমাধ্যমের কল্পনা।’’

অন্য দিকে, এম কোনও ঘটনার কথা মানতে চায়নি জেলা পুলিশও। বীরভূমের পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমারের দাবি, ‘‘ভিডিং রেকর্ড করে কাউকে ধরিয়ে দেওয়ার কোনও ঘটনা ঘটেনি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, নানুরের ওই ঘটনায় বোমাবাজির একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

video blast
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy