Advertisement
E-Paper

শ্যাম গোষ্ঠীর কর্মী খুন, আটক ছয়

বাঁকুড়া মেডিক্যালে দাঁড়িয়ে নিহতের দাদা জালালউদ্দিন মল্লিক অভিযোগ করেন, ‘‘বিধায়কের লোকজনের দৌরাত্ম্যিতে আমরা গ্রামে ঢুকতে পারছি না কিছু দিন ধরেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৪
নিহত: বাঁকুড়া মেডিক্যালে জান মহম্মদ মল্লিক। নিজস্ব চিত্র

নিহত: বাঁকুড়া মেডিক্যালে জান মহম্মদ মল্লিক। নিজস্ব চিত্র

দলের শীর্ষ নেতৃত্ব শ্যাম-তুষারের দ্বন্দ্ব নিয়ে অসন্তুষ্ট হলেও তাঁদের অনুগামীরা তা পরোয়া করছেন না। বিষ্ণুপুর বিধানসভার আমড্যাংরা লাগোয়া সোনাঝুরি জঙ্গলে এ বার এক তৃণমূল কর্মীকে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিষ্ণুপুরের কংগ্রেস বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্যের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। নিহত জান মহম্মদ মল্লিক (২৮) প্রাক্তন বিধায়ক শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের অনুগামী বলে পরিচিত। ঢ্যামনামারা গ্রামেই তাঁর বাড়ি। বুধবার ভোর প্রায় ৫টা নাগাদ ঢ্যামনামারা থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে সোনাঝুরি জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। উদ্ধার করে বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে আসা হলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

বাঁকুড়া মেডিক্যালে দাঁড়িয়ে নিহতের দাদা জালালউদ্দিন মল্লিক অভিযোগ করেন, ‘‘বিধায়কের লোকজনের দৌরাত্ম্যিতে আমরা গ্রামে ঢুকতে পারছি না কিছু দিন ধরেই। জঙ্গলে লুকিয়ে রয়েছি। সেখানে এসেও ওরা আমার ভাইকে একলা পেয়ে কুপিয়ে খুন করল। আমরা শ্যামবাবুর অনুগামী বলেই ওদের আক্রোশ।’’

তবে বিকেল পর্যন্ত এই খুনের ঘটনায় তালড্যাংরা থানায় নিহতের পরিবার কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। পুলিশ ছ’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। আটক ব্যক্তিরা সকলেই বিধায়কের অনুগামী বলেই এলাকায় পরিচিত। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘খুনের ঘটনার এখনও অভিযোগ জমা পড়েনি। আমরা কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছি। তদন্ত চলছে।’’

এক বছর ধরে দুই নেতার দ্বন্দ্ব। সোমবার নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়। ওই দিন তুষারবাবু অনুগামীদের নিয়ে ওই এলাকায় মোটরবাইক মিছিল করতে বেরিয়েছিলেন। অভিযোগ, আমড্যাংরা গ্রামের কাছে তৃণমূল অফিস থেকে বেরিয়ে শ্যামবাবুর অনুগামীরা ওই মিছিলে লঙ্কা গুঁড়ো ছোড়ে। স্থানীয় তৃণমূল অফিসে পাল্টা ভাঙচুর চলে, কর্মীদের কয়েকটি মোটরবাইকে অগ্নিসংযোগ করা হয়। কয়েকজন কর্মী জখম হন। সে দিন দু’পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করে। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসে।

দল সূত্রে খবর, সোমবারের গোলমালের খবর পেয়ে ক্ষুব্ধ হন যুব তৃণমূল সভাপতি তথা দলের তরফে বাঁকুড়ার পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু দ্বন্দ্ব যে থামবার নয়, এ দিন ফের তা সামনে এল। জালালুদ্দিন জানান, সে দিন থেকেই তাঁরা জনা চল্লিশেক শ্যামবাবুর অনুগামী গ্রাম-ছাড়া হয়ে রয়েছেন। তাঁরা এক সঙ্গে গ্রাম সংলগ্ন জঙ্গলে খোলা আকাশের নিচে
রাত কাটাচ্ছেন।

এ দিন ভোরে একটি পুকুরের ধারে শৌচকর্মে যান জান মহম্মদ। তাঁকে একলা পেয়ে কুড়ুল, বল্লম, লাঠি নিয়ে বিধায়কের অনুগামীরা চড়াও হয়। তাঁর সারা দেহে মার চলতে থাকে। জান মহম্মদের চিৎকার শুনে দৌড়ে আসেন জালালউদ্দিন-সহ তাঁর সঙ্গীরা। তাঁদের দেখে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে পুলিশকে ঘটনাটি জানান তাঁরা। পুলিশ আসার পরে একটি গাড়ি ডেকে জান মহম্মদকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

জালালউদ্দিনের আক্ষেপ, ‘‘বছর পাঁচেক আগে ভাইয়ের বিয়ে হয়। দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। অল্প কিছু জমিতে চাষ করে সংসার চালাত ভাই। এখন ওর পরিবারকে কে দেখবে?’’ নিজের দলের প্রতিই তাঁর ক্ষোভ, ‘‘দীর্ঘ বাম আমলে এই এলাকায় বুক চিতিয়ে তৃণমূলের হয়ে লড়াই করেছি। তখন খুন হতে হল না। আর এখন সে দিনের সিপিএম কর্মীরাই নব্য তৃণমূলী হয়ে আমার ভাইকে খুন করল। দলই এর বিচার করুক।’’

এ দিন অবশ্য ঘটনাটি নিয়ে মেপে কথা বলেছেন দুই নেতা। এ দিন খুন হওয়া দলীয় কর্মীর দেহ নিতে বাঁকুড়া মেডিক্যালের মর্গে এসেছিলেন শ্যামবাবু। তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনা নিয়ে যা জানানোর তা রাজ্য নেতৃত্বকে বলেছি।’’ আর তুষারবাবু বলছেন, ‘‘আমি কলকাতায় রয়েছি। ওখানে ঠিক কী ঘটেছে, বিশদে খবর নিচ্ছি।’’

TMC Political Party Group Conflict Crime Murder তৃণমূল কংগ্রেস
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy