বছর তিনেক আগে অবসর নিয়েছেন কম্পাউন্ডার। গত বছরের সেপ্টেম্বরে অবসর নেন চিকিৎসকও। অভিযোগ, তার পর থেকেই তালা ঝুলছে জেলা পরিষদ পরিচালিত ময়ূরেশ্বরের কুণ্ডলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
প্রশাসনিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য ওই এলাকার অবস্থাপন্ন অনেকে নিজেদের খরচে দাতব্য চিকিৎসালয় খুলেছিলেন। পরবর্তী কালে সরকার সেগুলি অধিগ্রহণ করে। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের পাশাপাশি ওষুধেরও ব্যবস্থা করা হয়।
কুণ্ডলা গ্রামে স্থানীয় জমিদার মুখোপাধ্যায় পরিবার ১৯২০ সালে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করেন। পরবর্তী কালে তা অধিগ্রহণ করে বীরভূম জেলা পরিষদ। এক জন চিকিৎসক, এক জন কম্পাউন্ডার, নৈশপ্রহরী ও সাফাইকর্মী মোতায়েন করা হয়। মজুত রাখা হয় ওষুধও।
এলাকাবাসী জানান, এক সময় সপ্তাহে ৬ দিন ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওষুধ সহ অন্য চিকিৎসা পরিষেবা মিলত। ২০০১ সাল থেকে ওষুধ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ। সপ্তাহে ২ দিন আসতেন চিকিৎসক। রোগীদের প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়ে যেতেন। ২০১৫ সালে অবসর হয় কম্পাউন্ডার শিশিরকুমার মণ্ডলের। সেখানে অন্য কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। গ্রামবাসীদের অনুরোধে এত দিন শিশিরবাবুই কার্যত স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছিলেন। ৩০ সেপ্টেম্বর অবসর নেন চিকিৎসক অসীম ভট্টাচার্য। তার পর থেকে তিনিও আসেন না। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখন রয়েছেন সাফাইকর্মী কালীপদ মাহারা। তিনি বলেন, ‘‘আমি মাঝেমধ্যে পরিষ্কার করে দিয়ে যাই। বাকি সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্র তালাবন্ধই থাকে।’’
১৯৮৮ সাল থেকে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছিলেন শিশিরবাবু। তিনি জানান, ওষুধ থাকাকালীন দিনে ৭০০-৮০০ রোগী আসতেন। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাধারণত চিকিৎসা করাতে আসতেন গরীব মানুষেরা। স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় তাঁরা খুব সমস্যায় পড়বেন।
সাধন মাহারা, সিদ্ধার্থ বাগদির মতো এলাকার কয়েক জন বাসিন্দার বক্তব্য, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরেই এলাকাবাসী নির্ভরশীল ছিলেন। এখন সামান্য অসুখ হলেই ৭-৮ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। না হলে যেতে হচ্ছে হাতুড়ের কাছে। স্থানীয় বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ব্যক্তিগত বা পারিবারিক উদ্যোগে যে স্বাস্থ্যকেন্দ্র এত বছর ধরে ১০-১২টি গ্রামের মানুষকে পরিষেবা দিয়েছে, সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরই সরকারি সদিচ্ছার অভাবে এখন এমন হাল হল। অনেক দিন ধরেই সেটি বেহাল ছিল। এ বার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবিষ্যৎ নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ওই সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র এখন আয়ুষ মন্ত্রকের অধীনে চলে গিয়েছে। গ্রামবাসীরা লিখিত ভাবে সমস্যার বিষয়টি জানালে, কিছু করা যায় কি না, তা দেখা হবে।