জেলায় কতগুলি গাড়ি অ্যাম্বুল্যান্স হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, পুরুলিয়া স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে তার কোনও পরিসংখ্যান নেই। ব্লক ভিত্তিক সেই হিসেব হাতে পেতে এ বার জেলা পরিবহণ দফতরের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
রবিবার, বছরের প্রথম দিনে নিশ্চয়যানে চড়ে পিকনিক করে ফিরছিল একটি দল। মানবাজার চৌমাথা মোড়ে সন্দেহ হওয়ায় তাঁদের পাকড়াও করেন বিডিও (মানবাজার ১) সত্যজিৎ বিশ্বাস। পুলিশ গাড়িটি আটক করে চালককে জরিমানা করেছে। তবে এই অভিযোগ নতুন কিছু নয়। এর আগেও বাজার-হাট বা অন্য ব্যক্তিগত প্রয়োজনে অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে জেলায়। কয়েক বছর আগে একটি রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা অ্যাম্বুল্যান্সে চড়ে পুঞ্চা থানা এলাকায় একটি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে যান। সেই সময় ওই ঘটনা নিয়ে বিস্তর হইচই হয়। বেশ কয়েক বছর আগে মানবাজার থানার ভালুবাসা পঞ্চায়েতের জন্য দেওয়া একটি অ্যাম্বুল্যান্স এলাকার এক বাসিন্দার খামারবাড়িতে পড়ে থাকার অভিযোগ ওঠে। অ্যাম্বুল্যান্সে মেলা ভেজা জামাকাপড়ের ছবি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসার পরে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। খামারবাড়ি থেকে অ্যাম্বুল্যান্সটি উদ্ধার করা হয়।
আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ যানে চড়ে যেখানে পিকনিক স্পটে যাতায়াত চলে, সেখানে আপদে-বিপদে অ্যাম্বুল্যান্স না পাওয়ার অভিযোগও বিস্তর ওঠে। ২০১৬-র মে নাগাদ একটি দুর্ঘটনার পরে গুরুতর জখম মানবাজারের পোদ্দারপাড়া এলাকার এক যুবককে গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয়। হাসপাতাল চত্বরে সেই সময় কোনও অ্যাম্বুল্যান্সেই চালককে পাওয়া যায়নি। এমনকী ফোনেও নাগাল পাওয়া যায়নি তাঁদের। উত্তেজিত জনতা সেই সময়ে হাসপাতাল চত্বরের অ্যাম্বুল্যান্সগুলিতে ভাঙচুর চালান।
রবিবার আটক নিশ্চয়যানটি জিতুজুড়ি পঞ্চায়েত এলাকার। ওই অঞ্চলের প্রসূতি এবং অন্তঃসত্ত্বাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য তা ব্যবহার করার কথা। ওই ঘটনার পরে পরে বিএমওএইচ (মানবাজার ১) কালীপদ সোরেন বলেন, ‘‘সংস্থা এবং ক্লাবের কাছে থাকা অ্যাম্বুল্যান্সের কোনও হিসাব আমাদের কাছে নেই।’’ হিসাব নেই জেলাতেও। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। এমনকী চুরির ঘটনাতেও অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছিল। এলাকার বিধায়ক এবং সাংসদেরা অনেক সময়ে কোনও সংস্থা বা ক্লাবকে অ্যাম্বুল্যান্স দেন। অনেক সময়ে বিভিন্ন ক্লাব নিজেরাই অ্যাম্বুল্যান্স কেনে। কিন্তু বেশ কিছু ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, আসল কাজে সেগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে না।’’ তিনি জানান, সরাসরি বিএমওএইচ-এর নিয়ন্ত্রণে থাকা গাড়িগুলি ছাড়া অন্য কোনও অ্যাম্বুল্যান্সের তথ্য তাঁদের কাছে নেই। জেলা পরিবহণ দফতর কতগুলি গাড়িকে অ্যাম্বুল্যান্স হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে, তা জানতে বৈঠকে বসা হবে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সমস্ত ব্লকের বিএমওএইচ-দের মাতৃযান ও অ্যাম্বুল্যান্সের পরিসংখ্যান রাখতে বলা এবং নিয়মিত নজরদারির পরামর্শ দেওয়া হবে বৈঠকে। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তার দাবি, অনেক গাড়ি লাইফ সেভিং সিস্টেম বা অন্য পরিকাঠামো ছাড়াই অ্যাম্বুল্যান্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়। হিসেব পাওয়ার পরে প্রয়োজনে তেমন কয়েকটি গাড়ির অনুমোদন প্রত্যাহার করে নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy