Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সিউড়ি পুরসভার দুর্নীতি মামলা

তাঁদের জয়, দাবি দুই আইনজীবীরই

শুনানির দিন এজলাসে তুমুল বিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন তাঁরা। এ বার বিচারকের নির্দেশের দু’রকম ব্যাখ্যার দাবি করে নিজেদের পুরনো অবস্থানই আঁকড়ে থাকলেন দুই আইনজীবী। সোমবার সিউড়ি আদালতে পুরসভার জমি দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার শুনানি শেষে তাঁদের যুক্তিরই জয় হয়েছে বলে দাবি করলেন সরকারি আইনজীবী রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিরোধী পক্ষের আইনজীবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায়।

সোমবার আদালত চত্বরে সিউড়ির পুরপ্রধান। নিজস্ব চিত্র।

সোমবার আদালত চত্বরে সিউড়ির পুরপ্রধান। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৬ ০৭:০৩
Share: Save:

শুনানির দিন এজলাসে তুমুল বিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন তাঁরা। এ বার বিচারকের নির্দেশের দু’রকম ব্যাখ্যার দাবি করে নিজেদের পুরনো অবস্থানই আঁকড়ে থাকলেন দুই আইনজীবী।

সোমবার সিউড়ি আদালতে পুরসভার জমি দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার শুনানি শেষে তাঁদের যুক্তিরই জয় হয়েছে বলে দাবি করলেন সরকারি আইনজীবী রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিরোধী পক্ষের আইনজীবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায়।

ঘটনা হল, সিউড়ির চাঁদনি সাহেবগঞ্জ মৌজায় বেশ কিছুটা জমি ‘বীরভূম জেলা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন’ নামক এক সংস্থাকে দীর্ঘ মেয়াদী লিজে দিয়েছিল পুরসভা। পরে লিজ দেওয়া জমিটিই ওই সংস্থাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। আর গোটা বিষয়টিতেই ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে দাবি করে তৎকালীন তৃণমূল পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এফআইআর করেন তৎকালীন অতিরিক্ত জেলাশাসক অনন্তদুলাল মুখোপাধ্যায়। মামলায় উজ্জ্বলবাবুর বিরুদ্ধে পুলিশ চার্জশিটও জমা দিয়েছিল। কিন্তু রাজ্যে পরিবর্তন আসার পরে ২০১৩ সালে নিম্ন আদালত থেকে মামলাটিই প্রত্যাহার করে নেয় তৃণমূল সরকার। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, রাজনৈতিক কারণেই দুর্নীতির মামলা থেকে উজ্জ্বলবাবুকে ‘ছাড়’ দেওয়া হয়েছিল। উজ্জ্বলবাবু এখনও পুরপ্রধানের দায়িত্বেই রয়েছেন। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই গত বছর এপ্রিলে হাইকোর্টে জনস্বার্থের মামলাটি করেছিলেন স্বপনবাবু।

তাঁর দায়ের করা জনস্বার্থ মামলায় হাইকোর্টে জেতার পরে সিউড়ি জেলা আদালতে জমি সংক্রান্ত এই মামলাটি পুনরায় শুরুর আবেদন করেছিলেন সিউড়ির বিদায়ী বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ। সেই আবেদনের ভিত্তিতে গত ৩১ মার্চ থেকে মামলাটি চালু হয়েছে। গত শুক্রবার সেই মামলার শুনানিতে আদালতের নির্দেশে হাজির হওয়া অভিযুক্ত সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতেই দুই আইনজীবীর বাদানুবাদে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল জেলা জজ সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের এজলাস। স্বপনবাবুর আইনজীবীর দাবি ছিল, আর্থিক তছরুপের এই মামলা নতুন করে চালু হওয়ায় পুনরায় জামিন (মামলাটি আগে যখন চালু ছিল, তখনও জামিনেই ছিলেন তিনি) নিতে হবে অভিযুক্ত উজ্জ্বলবাবুকে। তাঁর যুক্তি, মামলাটি চালু হতেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় উজ্জ্বলবাবুর পুরনো জামিনের বৈধতাও শেষ হয়েছে। ওই যুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে এই মামলায় স্বপনবাবুর পক্ষ হওয়ার অধিকার নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন রণজিৎবাবু। অমীমাংসিত ওই দু’টি বিষয় নিয়েই সোমবার তাঁর সিদ্ধান্তের কথা জানানোর ছিল বিচারকের।

কিন্তু, বিচারক এ দিন ঠিক কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ বার তা নিয়েই ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন ওই দুই আইনজীবী। স্বপনবাবুর আইনজীবী সোমনাথবাবুর দাবি, ‘‘পুরনো মামলাটি প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই উজ্জ্বলবাবুর জামিনের বৈধতা শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই বিচারক ওঁকে নতুন করে জামিন নেওয়ার নির্দেশ দেন।’’ অন্য দিকে, স্বপনবাবুর পক্ষ হতে চাওয়ার প্রসঙ্গে বিচারকের সিদ্ধান্ত নিয়ে সোমনাথবাবুর দাবি, পক্ষ হওয়ার জন্য বিচারক আগামী দিনে তাঁদের আবেদন করার সুযোগ দিয়েছেন। আর্জি দেখে সে দিনই ওই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বিচারক।

বিস্ময়কর ভাবে বিচারকের সিদ্ধান্ত নিয়ে সোমনাথবাবুর এই ব্যাখ্যা একেবারেই ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন সরকারি আইনজীবী। রণজিৎবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘বিষয়টি মোটেও এমন নয়। মামলাটি যে স্তরে থমকে গিয়েছিল সেখান থেকেই মামলাটি শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। কাজেই সেই সময় জামিনে থাকা এক জনকে কেন নতুন করে জামিন নিতে হবে? আমার সেই যুক্তিই বিচারক মেনে নিয়েছেন। তবে, সেই সময়ে অভিযুক্তের যিনি জামিনদার ছিলেন, তিনি মারা যাওয়ায় একটা সমমূল্যের বন্ড দাখিল করতে হয়েছে উজ্জ্বলবাবুকে।’’ একই ভাবে স্বপনবাবুর পক্ষ হতে চাওয়া প্রসঙ্গেও সোমনাথবাবুর উল্টো ব্যাখ্যাই করেছেন রণজিৎবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘সরকার পক্ষ এবং অভিযুক্তের বাইরে এই মামলায় অন্য পক্ষের কোনও প্রয়োজন নেই। স্বপনবাবু এই মামলার বাদি বা বিবাদী কেউ নন। তাই তিনি পক্ষ হতে পারবেন না, এটাও আদালত মেনেছে।’’ রণজিৎবাবুর ওই দুই ব্যাখ্যাকেই যদিও খণ্ডন করেছেন স্বপনবাবুর আইনজীবী। জামিন প্রসঙ্গে সোমনাথবাবুর দাবি, জামিনদার মারা না গেলেও উজ্জ্বলবাবুকে জামিন নিতেই হতো। অন্য দিকে, পক্ষ হওয়া নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার মক্কেল পক্ষ হতে পারবেন না, আদালত এমন কোনও নির্দেশ দেয়নি। আদালত এমনটা মনে করলে বিচারক আমাদের এ ব্যাপারে আর্জি জানানোর সুযোগটুকুও দিতেন না।’’

বিচারকের নির্দেশের যত রকম ব্যাখ্যাই হোক না কেন, নতুন করে মামলাটি চালু হওয়ার পরে ক্রমেই বেকায়দায় পড়ছেন উজ্জ্বলবাবু। এ দিনই বিচারক জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী ১৫ জুলাই তাঁর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন শুরু হবে। দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কিছু বলতে নারাজ উজ্জ্বলবাবু। তাঁর এ দিনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সরকার মনে করেছিল মামলাটি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। বর্তমানে মামলাটি ফের শুরু হয়েছে। আদালতের নির্দেশ মানব। বিচারাধীন বিষয়। তাই অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্তব্য করব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hearing Suri corruption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE