Advertisement
০৫ মে ২০২৪
100 Days Work

আবেদনপত্র এল দেরিতে, কোথাও শিবির ফাঁকাই

বিজেপি পরিচালিত ওন্দার রামসাগর পঞ্চায়েতের কাছাকাছি কোথাও এ দিন শিবির দেখা যায়নি। বিজেপি পরিচালিত বড়জোড়ার বৃন্দাবনপুর পঞ্চায়েতের শিবিরেও লোকজন বিশেষ আসেনি।

বিষনুপুর ১৮.২.২৪ বিষ্ণুপুর ব্লকের মড়ার গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশে, রবিবার মড়ার পঞ্চায়েত অফিসের পাশে তখন সহায়তা কেন্দ্র।

বিষনুপুর ১৮.২.২৪ বিষ্ণুপুর ব্লকের মড়ার গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশে, রবিবার মড়ার পঞ্চায়েত অফিসের পাশে তখন সহায়তা কেন্দ্র। ছবি শুভ্র মিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৪৭
Share: Save:

একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বকেয়া মজুরি থাকা শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহে প্রশাসনের পাশাপাশি দলকেও জুড়তে নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশ মতো বিভিন্ন পঞ্চায়েতে তৃণমূল শিবির খুললেও, আবেদনপত্র দেরিতে আসায় রবিবার প্রথম দিনেই অনেক জায়গায় ছন্নছাড়া ছবি ধরা পড়ল। কোনও কোনও শিবিরে ভিড় দেখা গেলেও, কোথাও তেমন লোকজন জমেনি। অনেকে আবার একশো দিনের কাজ চালুর দাবি জানিয়েছেন শিবির।

এ দিন নিতুড়িয়া, সাঁতুড়ি, রঘুনাথপুর ২, বান্দোয়ান, মানবাজার ২ প্রভৃতি ব্লকের কিছু এলাকায় আবেদনপত্র দেরিতে আসায় শিবির শুরু হতে দুপুর গড়ায়। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, ‘‘রাজ্য থেকেই ছাপানো আবেদনপত্র জেলায় আসতে দেরি হওয়ায় কয়েকটি ব্লকে তা পরে পৌঁছেছে।’’ তাঁর দাবি, প্রথম দিনেই পুরুলিয়ার ১৭০টি পঞ্চায়েতে ৬০ হাজার আবেদনপত্র পূরণ করা হয়েছে। পুরুলিয়া জেলায় ওই প্রকল্পে মজুরি বকেয়া থাকা শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ৫৪ হাজার।

এ দিন গাড়াফুসড়ো পঞ্চায়েতের গোলবেড়্যা গ্রামের শিবিরে সামান্য ভিড় দেখা গিয়েছে। এলাকার তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য আন্না মাহাতোর দাবি, ‘‘এ দিন শিবির হবে বলে কেউ কিছুই জানায়নি।’’ বিষ্ণুপুরের মড়ার পঞ্চায়েতেও শিবির প্রায় ফাঁকা ছিল। উপপ্রধান মোক্তার খান বলেন, ‘‘প্রচার ভাল মতো হয়নি। সোমবার প্রচারে ঝাঁপাব।’’

বাঁকুড়া ২ ব্লকের বিকনা পঞ্চায়েতে এ দিন শিবির হয়নি। পরে পার্টি অফিসে শিবিরের তোড়জোড় চলে। বাঁকুড়া ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিধান সিংহের দাবি, “সব জায়গাতেই শিবির হওয়ার কথা ছিল। বেশিরভাগ অঞ্চলেই হয়েছে। তবে জেলা থেকে এখনও যথেষ্ট পরিমাণে আবেদনপত্র দেওয়া হয়নি। তাই কোথাও কোথাও সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।’’

তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “প্রথম দিনই শিবিরগুলিতে বহু মানুষ গিয়েছিলেন। আমরা সব অঞ্চলে পর্যাপ্ত পরিমাণে আবেদনপত্র পাঠাচ্ছি।” বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা-গোঁসাইপুর পঞ্চায়েতে শিবিরে শ্রমিকদের আবেদনপত্র পূরণে সাহায্য করেন বিধায়ক তন্ময় ঘোষ।

তবে বিজেপি পরিচালিত ওন্দার রামসাগর পঞ্চায়েতের কাছাকাছি কোথাও এ দিন শিবির দেখা যায়নি। বিজেপি পরিচালিত বড়জোড়ার বৃন্দাবনপুর পঞ্চায়েতের শিবিরেও লোকজন বিশেষ আসেনি। বড়জোড়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি কালীদাস মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘সব পঞ্চায়েতই শিবির হয়েছে। কোথায় কেমন ভিড় হয়েছে তার রিপোর্ট নেওয়া হচ্ছে।’’

২০২১ সালের নভেম্বরের পর থেকে যাঁদের মজুরি বকেয়া আছে তাঁদেরই টাকা দেওয়ার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে শিবিরে ফর্ম পূরণ করলেই বকেয়া মিলবে এই আশায় ২০১৪-২০১৫ সালে কাজ করে মজুরি না পাওয়া কিছু লোকজন বান্দোয়ানের সুপুরডি পঞ্চায়েতের শিবিরে নাম নথিভুক্ত করতে লাইনে দাঁড়ান।

স্থানীয় কাঁসবহাল গ্রামের বুদ্ধেশ্বর মাহাতো বলেন, ‘‘স্ত্রী কল্যাণী বছর আট-নয় আগে হাপা খোঁড়ার কাজ করেও টাকা পায়নি। শিবিরে নাম লেখালে টাকা পাওয়া যাবে শুনে স্ত্রীর নাম লেখাতে এসেছিলাম।’’

তবে বিরোধীদের কটাক্ষ, যেখানে প্রশাসন মাঠে নেমে কারা বকেয়া পাবে সেই সমীক্ষা প্রায় শেষ করে ফেলেছে, সেখানে শুধু নির্বাচনের দিকে তাকিয়েই শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করতে এই শিবির করছে তৃণমূল। পুরুলিয়ার জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেনের অবশ্য দাবি, ‘‘বিরোধীরা অপপ্রচার করছে। প্রশাসনের লোকজন গ্রামে গিয়ে অনেক পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়িতে পাচ্ছেন না। তাঁদের নাম নথিভুক্ত হচ্ছিল না। এই ফাঁকটা পূরণ করাই এই শিবিরের লক্ষ্য।’’

ঘটনাক্রমে রঘুনাথপুর ১ ব্লকের জুলুডি গ্রামের শিবিরে এসেছিলেন মজুরি বকেয়া থাকা শ্রমিক রূপলাল মুর্মুর শাশুড়ি পানমণি টুডু। তিনি জানান, জামাই এখন খড়্গপুরে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছেন। তাই তাঁর প্রয়োজনীয় নথি নিয়ে তিনিই শিবিরে এসেছেন। রাজনীতির কচকচানিতে জড়াতে নারাজ শ্রমিকদের দাবি, বকেয়া টাকা যে ভাবেই হোক তাঁদের দেওয়া হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE