Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

গাঁধীজির পথেই তাঁকে স্মরণ জেলায়

গাঁধী জয়ন্তী নানা ভাবে পালন করলেন পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া দুই জেলার মানুষ। কোথাও স্কুল, কলেজ কিংবা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর কোথাও আবার রাজনৈতিক দলও নেমে পড়ল।

বাঁকুড়ার সতীঘাটে বাস যাত্রী কলার খোসা ফেলায় তাঁকে সচেতন করে চকোলেট দেওয়া হল। —নিজস্ব চিত্র।

বাঁকুড়ার সতীঘাটে বাস যাত্রী কলার খোসা ফেলায় তাঁকে সচেতন করে চকোলেট দেওয়া হল। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৫৩
Share: Save:

গাঁধী জয়ন্তী নানা ভাবে পালন করলেন পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া দুই জেলার মানুষ। কোথাও স্কুল, কলেজ কিংবা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর কোথাও আবার রাজনৈতিক দলও নেমে পড়ল।

গাঁধীজির জন্মদিনে গাঁধীগিরি করেই মানুষজনকে সচেতন করতে বাঁকুড়া শহরে পথে নেমেছিলেন তৃণমূলের ছাত্র-যুবরা। বাস থেকে ফেলা যাত্রীদের কলার খোসা প্রতিদিনই নোংরা হয় বাঁকুড়ার সতীঘাটমোড় এলাকার বাসস্ট্যান্ড। এর ফলে বাসস্টপ এলাকার পরিবেশ যেমন খারাপ হয়, তেমনই কলার খোসায় পিছলে পড়ে দুর্ঘটনাও ঘটে আকছার। যদিও রাস্তায় নির্বিচারে কলার খোসা ফেলা বন্ধ করতে পুরসভা বা প্রশাসনকে কখনও সক্রিয় ভাবে দেখা যায়নি। বাসস্টপ থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে পুলিশ পিকেট থাকে অধিকাংশ দিন। অথচ পুলিশ কর্মীদেরও নির্বিচারে বাস থেকে রাস্তায় কলার খোসা ফেলা যাত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও দেখা যায়নি।

গাঁধী জয়ন্তীতে এ নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে শুক্রবার সতীঘাট মোড়ের বাসস্ট্যান্ডে গাঁধীগিরিতে নামলেন তৃণমূল ছাত্রযুবর কর্মীরা। বাসের ভিতর থেকে কলার খোসা ছোড়া যাত্রীদের হাতে চকোলেট ধরিয়ে হাত জোড় করে এই কাজ করতে মানা করলেন তাঁরা। বহু যাত্রীকেই দেখা গেল বিষয়টির জন্য লজ্জিত হতে। জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমার অনেক চেনা মানুষ এই কলার খোসায় অসর্তক ভাবে পা ফেলে দুর্ঘটনায় পড়েছেন। সতীঘাট বাসস্ট্যান্ডে এই ঘটনা রোজকার সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাঁধীজয়ন্তীতে তাই আমরা এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে পথে নেমেছি।’’ কিন্তু একদিনের গাঁধীগিরিতে এই সমস্যা যে মেটার নয় তা বিলক্ষন জানেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “ছাত্র যুবদের তরফে জেলা পুলিশ ও প্রশাসন এবং পুরসভার কাছে আমরা লিখিত ভাবে পদক্ষেপ করার দাবি তুলব। আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানাব পুলিশের কাছে।”

মানবাজারের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়ারা নিজেরাই এ দিন স্কুলের কাছে রাস্তার পাশে পথচলার সতর্কীকরণ বোর্ড লাগাল। ‘দু’পাশে দেখে তারপর রাস্তা পার হোন। সময়ের দাম অনেক, কিন্তু তার থেকেও অমূল্য জীবন। রাস্তা পার হতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না’— ইত্যাদি বোর্ড লাগানো হয়।

এ রকম সতর্কতামূলক বোর্ড সাধারণ রাস্তা, রেলস্টেশন প্রভৃতি বিভিন্ন জায়গায় সরকারি উদ্যোগেই দেওয়া হয়। কিন্তু স্কুলের খুদে পড়ুয়ারা নিজেরাই এ ধরনের বোর্ড লাগাল। হঠাৎ এ ধরনের ভাবনা কেন? খুদে পড়ুয়া মানস মাহাতো, শিবম পাল, অর্ণব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগে শিক্ষকরা স্কুলে গাঁধীজির জীবনী ও আদর্শ নিয়ে আলোচনা করছিলেন। রাস্তা সাফাই, কাপড় কাচা, গাছের পরিচর্যা ইত্যাদি সমস্ত কাজ গাঁধীজি নিজের হাতেই করতেন। তখনই আমাদের মনে হল, এই রাস্তায় সারাদিনে প্রচুর গাড়ি যাতায়াত করে, আমরা যদি নিজেদের ও অন্যদের সতর্ক করার জন্য বোর্ড লাগাই মন্দ হয় না।’’ তাদের ভাবনার কথা শিক্ষকদের জানায়। তখনই শিক্ষকরাই এগিয়ে আসেন। বেছে নেওয়া হয় গাঁধীজির জন্ম জয়ন্তীর দিনটিকে।

স্কুলের প্রধান কর্মকর্তা সৌরভ বক্সী বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের এই ভাবনা অবশ্যই প্রশংসনীয়।’’ গাঁধীজির প্রিয় কয়েকটি গান করেন স্কুলের শিক্ষিকা ও পড়ুয়ারা। এলাকার বিশিষ্ট চিকিৎসক গোপালচন্দ্র লায়েক, প্রাক্তন শিক্ষক কল্যাণীপ্রসাদ মহান্তী গাঁধীজির জীবনী নিয়ে আলোচনা করেন।

প্রাক্তন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের কথা স্মরণ করে গান্ধীজির জন্ম দিবসে বিষ্ণুপুর কৃত্তিবাস মুখার্জী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোকেশনালের শিক্ষকরা ছুটির দিনেও ক্লাস নিলেন। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ পাত্র বলেন, “স্কুলে ভোকেশনালের ছাত্র সংখ্যা এখন ১৮০। এ দিন ছুটির দিনেও উপস্থিতি ছিল ১১০। ওই বিভাগের ১৩ জন শিক্ষকও ক্লাস নিয়েছেন যথারীতি।”

এ দিকে এলাকার মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়ানোর লক্ষে শুক্রবার গাঁধী জয়ন্তীতে বারিকুল থানার কাঁঠালিয়া গ্রামে সাফাই অভিযান চালালেন ঝিলিমিলি ফাঁড়ির সিআরপি-র এ ১৬৯ ব্যাটেলিয়নের জওয়ানরা। স্থানীয় একটি ক্লাবের সদস্যদের সহায়তায় সিআরপি-র ঝিলিমিলি ক্যাম্পের সহকারী কমান্ডার বিনোদ সিংহের নেতৃত্বে ৬৫ জন জওয়ান এ দিন গ্রামের রাস্তাঘাট, নালা, নর্দমা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজে নামেন। জওয়ানদের এই কাজে খুশি কাঁঠালিয়া গ্রামের মানুষ। অন্যদিকে গাঁধী জয়ন্তী উপলক্ষে বাঁকুড়ার নেহেরু যুবকেন্দ্র ও বাঁকুড়া অনুশীলন সমিতির উদ্যোগে কুচকুচিয়া মোড় থেকে ফাঁসিডাঙা পর্যন্ত সাফাই অভিযান চালানো হয়। একটি দুর্গা মণ্ডপও পরিষ্কার করো হয়। মহাত্মা গাঁধীর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এ দিন একটি অনুষ্ঠান হয় খাতড়া স্বরাজনগর বিএড কলেজে। এ দিন অনুষ্ঠান শেষে বি এড কলেজের সম্পাদক অনুপ পাত্র জানান, চলতি শিক্ষাবর্ষে জঙ্গলমহলের ২৫ জন দুঃস্থ ও মেধাবী আদিবাসী ছাত্রছাত্রীকে অর্ধেক কোর্স ফি নিয়ে বিএড পড়ার সুযোগ দেওয়া হবে।

এ দিন স্বচ্ছতা অভিযান কর্মসূচি পালিত হয় আদ্রায় রেলের উদ্যোগে। অফিসার্স ক্লাব থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়। ছিলেন ডিআরএম অনশূল গুপ্তা-সহ আদ্রার রেলের পদস্থ কর্তারা। গাঁধী মূর্তিতে মাল্যদান হয় পরে। প্রসঙ্গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত বিশেষ স্বচ্ছতা অভিযান চলছে আদ্রা ডিভিশনে। এ দিন আদ্রা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে সেই অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন রেল কর্তারা। স্টেশনে উপস্থিত যাত্রীদের স্টেশন চত্বর পরিষ্কার রাখতে অনুরোধ জানান ডিআরএম। এ দিকে, বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা যুবশান্তি ফ্রেন্ডস ক্লাব এ দিন রক্তদান নিয়ে অনুষ্ঠান করে। শিশুদের নিয়ে মনোগ্রাহী অনুষ্ঠানও হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Homage birth anniversary Mahatma Gandhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE