Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ফের হামলা মদের দোকানে

মদের দোকানে প্রমীলা বাহিনীর তাণ্ডব চলল সোমবার রাতেও। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের এক প্রান্তে গাড়িখানা এলাকার একটি পানশালা এবং লাগোয়া অফশপে হানা দেন বেশ কিছু মহিলা। তাঁদের অধিকাংশের হাতে ছিল ঝাঁটা। কারও হাতে লাঠি।

আইন হাতে তুলে নেওয়ার বিপদের কথা বোঝাচ্ছেন পুলিশ কর্মীরা।—নিজস্ব চিত্র

আইন হাতে তুলে নেওয়ার বিপদের কথা বোঝাচ্ছেন পুলিশ কর্মীরা।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:২৪
Share: Save:

মদের দোকানে প্রমীলা বাহিনীর তাণ্ডব চলল সোমবার রাতেও। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের এক প্রান্তে গাড়িখানা এলাকার একটি পানশালা এবং লাগোয়া অফশপে হানা দেন বেশ কিছু মহিলা। তাঁদের অধিকাংশের হাতে ছিল ঝাঁটা। কারও হাতে লাঠি। পানশালা লক্ষ করে এলোপাথাড়ি ঢিল ছুঁড়তে শুরু করেন তাঁরা। আতঙ্কে দোকানের কর্মীরা দ্রুত ঝাঁপ বন্ধ করে দেন। দোকানের গ্লোসাইন বোর্ডটি ভেঙে যায়। রাস্তার ধারে মোতায়েন পুলিশকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। ক্ষুব্ধ মহিলাদের একাংশ তাঁদের বলেন, ‘‘এই মদের জন্য রোজ ঘরে অশান্তি লেগে রয়েছে। আর আমরা চুপ করে বসে থাকব?’’ পুলিশকর্মীরা বুঝিয়ে কোনও রকমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

রবিবার শহরের একটি পানলাশা এবং একটি বিদেশি মদের দোকানে হানা দিয়েছিল জনা তিরিশ মহিলার একটি দল। তাঁরা পানশালার টেবিল উল্টে বিদেশি মদের দোকানে মজুত বেশ কিছু দিশি মদের বোতল ভাংচুর করেন বলে অভিযোগ। সেই ঘটনার পর থেকেই শহরের মদ বিক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। সোমবার ফের প্রমীলা বাহিনীর পথে নামার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে শহরে। ট্যাক্সি স্ট্যান্ড এলাকার যে মদের দোকানে রবিবার হামলা হয়েছিল, ফোনে খবর পৌঁছে যায় সেখানেও। সঙ্গে সঙ্গে দোকানটির ঝাঁপ বন্ধ করে দেন কর্মীরা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এর পরে জানালার একটি ছোট ফাঁক গলিয়ে বিক্রিবাটা হয়েছে ওই দোকানে। তার ফলে দোকানের বাইরে ছোটখাটো লাইন হয়ে গিয়েছিল। ওই এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ক্রেতাদের চোখে মুখেও আতঙ্ক দেখা গিয়েছে।

ঘটনার রেশ গড়িয়েছে মঙ্গলবারেও। পরপর এমন ঘটনার ফলে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে শহরের মদ বিক্রেতাদের মধ্যে। সন্ধ্যার পর থেকেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বেশ কিছু দোকান। ট্যাক্সি স্ট্যান্ড এলাকার কয়েকটি মদের দোকানের কর্মী বরুণ বিশ্বাস, কাঞ্চন দাঁ, আসলাম শেখরা বলেন, ‘‘যা ঘটেছে তার পর থেকে আতঙ্কে রয়েছি। আমাদের দোকানেও হামলা হলে তখন কী হবে!’’

দোকানদারদের দাবি, তাঁরা প্রশাসনের থেকে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করেন। কিন্তু নিরাপত্তার জন্য কোনও ব্যবস্থাই করছে না পুলিশ। মদ বিক্রতাদের সংগঠনের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক গোলাপ জয়সওয়াল বলেন, ‘‘বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে। এ রকম আতঙ্কের মধ্যে ব্যবসা করা যায় না। কারও দেশি মদ বিক্রি নিয়ে আপত্তি থাকতে পারে। পরিবারে প্রভাব পড়লে তাঁরা প্রতিবাদ করতেই পারেন। কিন্তু তার একটা পদ্ধতি রয়েছে। প্রশাসনের কাছে আবেদন না করে দোকানে হামলা চালানো বেআইনি। এ ভাবে ওই মহিলাদের সমস্যারও তো সমাধান হবে না।।’’ তাঁর দাবি, পুলিশ পরপর দু’দিন হামলা হওয়ার পরেও কোনও পদক্ষেপ করেনি। তাই তাঁরা বিষয়টি প্রশাসনকে জানাবেন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত থানায় এই সংক্রান্ত কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি।

জেলা আবগারি দফতরের সহকারি সুপার অতীশ দাস বলেন, ‘‘কারা এই হামলা করছেন সেটাই বুঝতে পারছি না। ওঁরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযোগের কথা কখনও বলেননি।’’ শহরের মদ বিক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে স্বীকার করে নিয়ে তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে দফতর যোগাযোগ রাখছে।

এই পরিস্থিতিতে দেশি মদের ক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে। শহেরের একটি মদের দোকানের কর্মী বলেন, ‘‘দেশি মদ কিনতে এলে ফিরিয়ে দিচ্ছি। না হলে বলছি স্ত্রী এসে অনুমতি দিলে তবেই মদ দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE