Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Ayodhya Hill

Ayodhya Hill: গাছ আগলে রাজেশরা, ‘সুতো বেঁধেছেন’ নরেন

নরেনের ‘সিধো-কানহো মিশন’-এ এখন রয়েছে ৩৬টি বালক আর ন’টি বালিকা।

গানের তালিম: পুরুলিয়ার ভালডুংরির আবাসিক স্কুলে খুদে পড়ুয়াদের সঙ্গে শিল্পী। নিজস্ব চিত্র

গানের তালিম: পুরুলিয়ার ভালডুংরির আবাসিক স্কুলে খুদে পড়ুয়াদের সঙ্গে শিল্পী। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল  , দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঘমুণ্ডি, পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২১ ০৭:৪৯
Share: Save:

খুদেi হাতের পরিচর্যায় অযোধ্যা পাহাড়ের ঢাল ছেয়েছে অরণ্যে। রাজেশ, সোমনাথ, শিলাবতী, শিবিলদের সঙ্গে বেড়ে উঠছে শাল, কেন্দ, নিম, মহুয়া।

পুরুলিয়ার ভালডুংরির আবাসিক স্কুলের পড়ুয়ারা হাজার তিনেক চারাগাছ আগলে রয়েছে। বছর পঞ্চাশের আদিবাসী লোকশিল্পী নরেন হাঁসদা ২০১৩ সালে তৈরি করেছেন স্কুলটি। গান গাইতে আড়শার গ্রামে গিয়ে পড়শিদের থেকে, ঝালদার গ্রামে গিয়ে মামাবাড়ি থেকে নিয়ে এসেছেন বাবা-মা হারানো বালক-বালিকাদের। কখনও আত্মীয়েরা অনাথ ছেলে-মেয়েদের তাঁর কাছে রেখে গিয়েছেন।

নরেনের ‘সিধো-কানহো মিশন’-এ এখন রয়েছে ৩৬টি বালক আর ন’টি বালিকা। বাংলা আর সাঁওতালি মাধ্যমে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে, কাছাকাছি হাইস্কুলে ভর্তি হয় তারা। তবে ঠিকানা বদল হয় না। তিন জন আবাসিক শিক্ষক করোনার জন্য বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। স্থানীয় শিক্ষকেরা আসেন। ছেলে-মেয়েদের দেখভালের জন্য থাকেন তিন জন মহিলা। গানের তালিম দেন নরেন।

জয়পুর ব্লকের জাহাজপুর গ্রামের নরেন ভালডুংরিতে এসেছিলেন গান গাইতে। তাঁর কথায়, ‘‘লসরাম টুডু নামে এখানকারই এক জন আমাকে এক বিঘা জমি দিয়ে বলেছিলেন অনাথ বাচ্চাদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিতে। অন্যেরা সাহায্য করে সেটাই চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি শুধু সুতোটা ধরে রেখেছি।’’

সাত বছর আগে, তখন জমি লাগোয়া টিলা ছিল রুক্ষ। বন দফতরের আড়শা রেঞ্জের আধিকারিক শাহনওয়াজ ফারুক আহমেদ জানান, প্রায় তিন একর জমিতে তিন হাজারের বেশি গাছ লাগিয়ে ফেলেছে স্কুলের পড়ুয়ারা। পুরুলিয়ার পূর্বতন ডিএফও রামপ্রসাদ বাদানা বলেন, ‘‘ফেসবুকে স্কুলের কথা জানতে পেরে আমি এক বার গিয়েছিলাম। সেখানে সবাই ফাঁকা জমিতে গাছ লাগানোর ইচ্ছে জানায়। আমরা এমন লোকজনই খুঁজছিলাম।’’

নরেন জানান, গাছের যত্ন নেওয়ার কথা ছেলে-মেয়েদের বলে দিতে হয় না। সকাল হলেই নলকূপ থেকে জল নিয়ে সবাই মিলে ছোটে গাছের কাছে। সপ্তম শ্রেণির শিবিল হাঁসদা, অষ্টম শ্রেণির সোমনাথ হাঁসদা, দ্বিতীয় শ্রেণির রাজেশ মুর্মু বলে, ‘‘গাছেরও প্রাণ আছে। গাছ আমাদের বন্ধু। বিকেলে অনেক পাখি আসে। ওরাও আমাদের বন্ধু।’’ জেলার প্রাক্তন ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন দিব্যজ্যোতিপ্রসাদ সিংহ দেও বলেন, ‘‘গাছ লাগানো প্রচুর হয়। কিন্তু এ ভাবে যত্নে বড় করে তোলাটা একটা দৃষ্টান্ত। এতে পাহাড়ের বাস্তুতন্ত্র আরও মজবুত হচ্ছে।’’

জাহাজপুরের বাড়িতে কখনও সখনও যাওয়া হয়ে ওঠে নরেনের। বাবা-মা, স্ত্রী, অষ্টম ও নবম শ্রেণির পড়ুয়া দুই ছেলে-মেয়ে রয়েছে সেখানে। পারিবারিক চাষবাস অন্য দুই ভাই দেখেন। নরেনের মা নীলমণি হাঁসদা বলেন, ‘‘আমি মাঝেমধ্যে ওর স্কুলে যাই। বাচ্চাদের জন্য গ্রাম থেকে ফলমূল নিই। ওরা আমাকেও খুব ভালবাসে। এটা অনেক বড় প্রাপ্তি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ayodhya Hill
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE